আধুনিক কালে শিক্ষা ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এসেছে, তাই শিক্ষার প্রতিটি স্তরকে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে সুসংগঠিত রূপদান করা হয়েছে। প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে অবশ্য এর ঘাটতি রয়েছে; কিছু আদর্শ প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা লিয়ে রয়েছে, যেগুলো কার্যপদ্ধতি, পাঠক্রম সমগ্র বিশ্বকে প্রভাবিত করে। এরূপ কিছু শিক্ষালয় সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল—
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রাক্-প্রাথমিক স্তরের যে-সমস্ত বিদ্যালয় রয়েছে, কিন্ডারগার্টেন হল সেগুলির মধ্যে অন্যতম।
➽ ফ্রেডরিক উইলহেম আগস্ট ফ্রয়েবেল ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয় স্থাপন করেন।
➽ কিন্ডারগার্টেন কথাটির অর্থ হল শিশু উদ্যান। যেখানে বিদ্যালয় হল উদ্যানের ন্যায় এবং শিশুরা হল সেই উদ্যানের চারাগাছ।
➽ ৪-৫ এবং ৬-৭ বছর বয়সের শিশু বা শিক্ষার্থীদের এই বিদ্যালয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়।
➽ শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশে এই শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য। তাই ইন্দ্রিয় পরিমার্জনের সঙ্গে সঙ্গে দৈহিক বিকাশ ও মানসিক পরিমার্জনারও চেষ্টা করা হয় এই স্তরে।
➽ ফ্রয়েবেল শিশুদের শিক্ষার জন্য এক নতুন ধরনের আনন্দদায়ক শিক্ষাপদ্ধতি তৈরি করেছিলেন, সেটি হল ‘Gift and Occupation। তিনি চেয়েছিলেন শিশু স্বাধীনভাবে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে মূর্ত বস্তুর মাধ্যমে শিক্ষা লাভ করবে। তাই তিনি ‘খেলা ভিত্তিক পদ্ধতি’ শুরু করেন, যে খেলায় থাকবে স্বতঃস্ফূর্ত স্বাধীনতা, সক্রিয়তা ইত্যাদি।
➽ ফ্রয়েবেলের শিক্ষার পাঠক্রমে— (১) খেলা ও ব্যায়াম, (২) কাঠের কাজ, (৩) গান করা, (৪) গল্প বলা, (৫) ছবি আঁকা, (৬) দলগত কাজ ইত্যাদি বিষয় রাখার কথা বলেন।
➽ ফ্রয়েবেলের শিক্ষার আর-একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, মুক্ত শৃঙ্খলা। তবে তিনি এখানে সামাজিক শৃঙ্খলার কথা বলেছেন।
সবশেষে, তিনি তার শিশু উদ্যানে শিশুকে যেমন চারাগাছ মনে করেছেন, তেমনি তিনি বলেন শিক্ষক হলেন মালি, যিনি তার পরিচর্যার মাধ্যমে শিশুর সার্বিক বিকাশ ঘটিয়ে থাকবেন।
➽ জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর মহান শিক্ষা চিন্তার ফসল হল এই প্রাক-বুনিয়াদি বিদ্যালয়। শিশুর সুপ্ত সম্ভাবনার বিকাশ সাধনের জন্য এবং সমাজের প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা গুলি কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে তাদের মধ্যে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে এই ধরনের বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
➽ এই বিদ্যালয়গুলিতে শিশুর চারিত্রিক গুণাবলির বিকাশের জন্য আত্মবিশ্বাস, নিয়মানুবর্তিতা ইত্যাদির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
➽ এই বিদ্যালয়ের পাঠক্রমে প্রাত্যহিক জীবন উপযােগী প্রাথমিক কাজকর্ম, আচার-আচরণ, সৃজনশীল কাজকর্ম, উৎপাদনাত্মক কাজকর্ম সামাজিক শিক্ষাসংক্রান্ত কাজকর্ম, সু-অভ্যাস, প্রকৃত পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
সবশেষে বলা যায়, এই বিদ্যালয়গুলিতে নির্দিষ্ট কোন পাঠক্রম নেই এবং সামাজিক বিভিন্ন কারণে এই প্রাক-বুনিয়াদি বিদ্যালয় গুলো বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।
বালশিক্ষামন্দির বিদ্যালয়গুলি বুনিয়াদি ও মন্তেসরি বিদ্যালয়ের মাঝামাঝি একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে বুনিয়াদি বিদ্যালয়ের পাঠক্রম এবং মন্তেসরি বিদ্যালয়ের পাঠক্রমকে অনুসরণ করে পাঠ্যবিষয় স্থির করা হয়েছে। তবে সামাজিক বিভিন্ন কারণে এই প্রাক-বুনিয়াদি বিদ্যালয় গুলো বেশি দিন স্থায়িত্ব লাভ করতে পারেনি।
Leave a comment