চুনাপাথর, ডলােমাইট প্রভৃতি দ্রবণীয় শিলায় গঠিত অঞ্চলে ভৌমজলের কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপকে কাস্ট ভূমিরূপ বলে। কাস্ট অঞ্চল প্রধানত অনুর্বর প্রকৃতির হয়। এর কারণগুলি হল一
[1] চ্যুতি ও দারণের উপস্থিতি : চুনাপাথর ঘন ও পুরু হওয়া সত্ত্বেও অসংখ্য চ্যুতি ও দারণ দিয়ে ভূপৃষ্ঠের জল অতি সহজেই ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। ফলে ভূপৃষ্ঠ শুষ্ক হয়ে পড়ে।
[2] বৃষ্টিপাতের স্বল্পতা : পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ কাস্ট অঞ্চলগুলিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাঝারি ধরনের। বৃষ্টিপাতের স্বল্পতা কাস্ট ভূমিরূপ গড়ে ওঠায় সহায়ক হলেও কৃষিকাজের জন্য অনুপযুক্ত।
[3] উদ্ভিদের প্রয়ােজনীয় পুষ্টিমৌলের অভাব : এই অঞ্চলের মৃত্তিকা প্রশমিত নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মৃত্তিকা ক্ষারকীয় রেনজিনা প্রকৃতির। দ্রবণ প্রক্রিয়ায় দ্রবীভূত চুনাপাথর অপসারিত হওয়ার পর অদ্রাব্য লৌহযৌগ মাটির ওপরে সঞ্চিত হয়ে অম্লধর্মী লাল কাদামাটি সৃষ্টি করে। তাই এই অঞ্চলের মৃত্তিকায় উদ্ভিদের প্রয়ােজনীয় সকল প্রকার খাদ্য-মৌল উপস্থিত থাকে না। ফলস্বরূপ এই অঞ্চলের মৃত্তিকা অনুর্বর।
[4] মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতার অভাব : এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হওয়ার সাথে সাথে মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতাও কম। তাই মৃত্তিকা শুষ্ক প্রকৃতির এবং অনুর্বর হয়।
[5] গর্তের উপস্থিতি : কাস্ট অঞ্চলে কার্বনেশন ও দ্রবণ প্রক্রিয়ায় চুনাপাথর খুব তাড়াতাড়ি ক্ষয়িত হয়ে ভূপৃষ্ঠে সােয়ালাে হােল, ডােলাইন, উভালা, পােলজি প্রভৃতি ছােটো বড়াে নানা আকৃতির গর্ত সৃষ্টি হয় এবং ভূপৃষ্ঠ হয়ে ওঠে অনুর্বর।
চুনাপাথরযুক্ত অঞ্চলে উভালা ও পােলজি সৃষ্টি হওয়ার কারণ
বিশুদ্ধ চুনাপাথরগঠিত অঞ্চলে জলের দ্রবণ কার্যের ফলে সৃষ্ট ফাঁদল আকৃতির অবনত ভূমিরূপকে সিঙ্কহােল বলে। সিঙ্কহােল অধ্যুষিত অঞ্চলে একাধিক সিঙ্কহােল প্রসারিত এবং পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে যৌগিক সিঙ্কহােল বা ডােলাইন সৃষ্টি হয়। চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে গুহার ছাদ বসে গিয়েও ডােলাইন সৃষ্টি হতে পারে। একাধিক সিঙ্কহােল বা ডােলাইন পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়ে যে বৃহদাকৃতির গর্ত সৃষ্টি হয়, তাকে উভালা বলে। উভালা বিভিন্ন আকৃতির হয়। শিলাস্তরের আয়াম বা চ্যুতি রেখা বরাবর সিঙ্কহােলগুলি মিলিত হলে উভালা দীর্ঘাকৃতির হয়। অনুভূমিক স্তরের ওপর সৃষ্ট উভালাগুলি অধিবৃত্তাকার বা উপবৃত্তাকার হয়। উভালা কয়েক হেক্টর স্থান জুড়ে বিস্তৃত হয়।
উভালা অপেক্ষা বৃহদাকৃতির উপবৃত্তাকার অবনত ভূভাগকে পােলজি বা পােলিয়ে বলে। পােলজির তলদেশ সমতল প্রকৃতির। এগুলি খাড়া ঢাল দ্বারা আবদ্ধ। যুগােস্লাভিয়ার লিভেনাে পােলজি প্রায় 65 কিমি দীর্ঘ এবং 5-11 কিমি প্রশস্ত। ছত্তিশগড়ের রায়পুরের দক্ষিণে রায়পুর বস্তার সড়কের পাশে যে বিশাল আকৃতির উপবৃত্তাকার দ্রবণগর্ত সৃষ্টি হয়েছে তার সঙ্গে পােলজির মিল রয়েছে। পােলজির ভেতরে চুনাপাথরের অবশিষ্ট অংশগুলি যখন টিলার মতাে অবস্থান করে তখন তাকে হামস্ বা হে-স্ট্যাক পাহাড় বা পেপিনাে পাহাড় বলে। ছত্তিশগড়ের রায়পুর জেলার মধ্যভাগে শেল দ্বারা গঠিত হামস্গুলিকে রাবণভাটা বলে।
Leave a comment