প্রসঙ্গ: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পে দুর্ভিক্ষের কারণে মৃত্যুর ঘটনা মৃত্যুঞ্জয়ের মনে তীব্র প্রভাব ফেলে। মৃত্যুঞ্জয় শহরের আদি-অন্ত ফুটপাথ ধরে ঘুরে বেড়ায়। বিপন্ন মানুষগুলির দুরবস্থা এবং অন্নকাতরতা তাকে প্রভাবিত করে। কিন্তু সেই মানুষদের আচরণ ও মনােভাব সে মেনে নিতে পারে না। এই প্রসঙ্গেই মন্তব্যটি করা হয়েছে।

ভাবনা সূত্রটির বিশ্লেষণ : দুর্ভিক্ষে মানুষের দুরবস্থা মৃত্যুঞ্জয়কে প্রভাবিত করেছিল। সেই ফুটপাথবাসী মানুষগুলির প্রতিদিনের জীবন-যন্ত্রণা, বেঁচে থাকার অসম লড়াই ছিল তার পর্যবেক্ষণের বিষয়। এই মানুষগুলির সঙ্গে প্রথম দিকে যতটা সম্ভব সে আলাপ করত, কিন্তু পরবর্তীতে তা বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ, মৃত্যুঞ্জয় দেখেছে যে, তারা সকলে একই কথা বলে এবং তাদের ভাষা ও বলার ভঙ্গি পর্যন্ত একইরকম। নেশাগ্রস্ত আচ্ছন্ন মানুষের মতাে সেই একই ভাগ্যের এবং দুঃখের কাহিনী— নালিহীন, প্রতিবাদহীন। কীভাবে তাদের জীবনের সব কিছু ওলটপালট হয়ে গেল তা তারা জানতে কিংবা বুঝতে চায়নি কিন্তু সব কিছুই মেনে নিয়েছে। ভাগ্যের কাছে এই অসহায় আত্মসমর্পণ মৃত্যুঞ্জয়ের পছন্দ হয়নি। সে চেয়েছিল সমস্যার প্রকৃত উৎসগুলি এই মানুষরা বুঝুক, নাহলে তার সমাধান অসম্ভব। সেই কারণেই প্রতিবাদহীন এই মানুষগুলির সঙ্গে কথা বলা সে বন্ধ করে দিয়েছিল।