অথবা, লৌকিক জ্ঞান বলতে কী বােঝ?
অথবা, সহজবুদ্ধি / সাধারণ জ্ঞান কী?
ভূমিকাঃ দর্শন আমাদের সমাজ জীবনের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কিত। এটা সমাজজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন কোনাে বিষয় নয়। মূর্ত মানুষের মূর্ত জীবন প্রক্রিয়া এর ভিত্তি। দর্শন কেবল সমাজজীবনের ব্যাখ্যাই করে না। এর পরিবর্তনের দিক নির্দেশনাও করে থাকে। যুগ ও কালের বাস্তবতা প্রতিফলিত হয় দর্শন চিন্তার মধ্যদিয়ে মানব সভ্যতা বিকাশে ও মানুষের সামগ্রিক উন্নতিতে দর্শনের দান অপরিসীম।
কাণ্ডজ্ঞান / সহজবুদ্ধির সংজ্ঞাঃ কাণ্ডজ্ঞান / লৌকিকজ্ঞান হলাে সাধারণ মানুষের বিচার বিশ্লেষণহীন বা অন্ধ কুসংস্কারপূর্ণ জ্ঞান। এ জ্ঞান কোনাে বস্তু সম্পর্কে আমাদের প্রথম দৃষ্টিতে মনে জন্মে থাকে। এ জ্ঞান সবাই জন্মসূত্রে অথবা অতিপ্রাকৃত শক্তি থেকে উদ্ভূত হয়ে থাকে। লৌকিক জ্ঞান বা সহজবুদ্ধির কারবার হলাে বস্তুর ভিন্নতা নিয়ে এবং সে হিসাবে জগতের বৈচিত্র্যপূর্ণ বস্তুর পেছনে কোনাে ঐক্যসূত্র আছে কিনা এ নিয়ে তারা মাথা ঘামায় না। প্রত্যেক মানুষই সে যতই শিক্ষিত বা অশিক্ষিত হােক না কেন। এ বিশ্বজগতের রূপ সম্পর্কে একটা ধারণা নিতে চেষ্টা করে। সত্য-মিথ্যা, ভালাে-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, সুন্দর-অসুন্দর, দেহ-মন, জড়জীবন, জীবন ও জগতের সম্পর্ক স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির সম্পর্ক ইত্যাদি সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারণা বা জ্ঞান প্রত্যেক সাধারণ ব্যক্তিই পােষণ করেন। আর এ প্রাথমিক জ্ঞানকেই লৌকিক জ্ঞান বা সহজবুদ্ধি বলা হয়। এ সহজবুদ্ধি অধিকার বা আপ্তবাক্য, পরস্পরগত প্রথা, অস্পষ্ট অনুমান ইত্যাদি থেকে উদ্ভূত হয়ে থাকে। এ লৌকিক জ্ঞান যেহেতু বিচার-বিশ্লেষণবিহীন। বা সংবাদবিহীন বা অন্ধ গতি বিশ্বাসভিত্তিক সেহেতু এ জ্ঞানে মানুষ তুষ্ট থাকতে চায় না। লৌকিকজ্ঞান বা সহজবুদ্ধি প্রকৃতপক্ষে খুবই অসম্পূর্ণ এবং অসম্পূর্ণতাকে দূর করার জন্যই জ্ঞানের পথে বিজ্ঞান মানুষকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়।
পরিশেষঃ আলােচনার পরিশেষে এক কথায় বলা চলে যে, দর্শন ও সহজবুদ্ধি উভয়ই একে অপরের পরিপূরক। দর্শনের উদার দৃষ্টিভঙ্গির জন্য দার্শনিক অভিমতগুলাের উন্নতি সাধনকল্পে দর্শন সাধারণ বা সহজবুদ্ধির জ্ঞানকে বিবেচনার বাইরে রাখে না। সুতরাং দর্শনে সাধারণ জ্ঞানের গুরুত্ব অত্যধিক।
Leave a comment