‘মৃত্যুক্ষুধা’ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর

উত্তর: বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রযুগে যেসব কবি, সাহিত্যিক এবং প্রাবন্ধিক খ্যাতির উচ্চ শিখরে আরোহণ করেছেন তাঁদের মধ্যে কাজী নজরুল অন্যতম। তিনি সমসাময়িক যুগের ঔপনিবেশিক এবং সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী তথা যুগ চেতনা অবলম্বন করেছিলেন বলে বিদ্রোহী কবি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করলেও সাহিত্যের অন্যান্য ক্ষেত্রে তার অবদান কম নয়। তিনি একদিকে বিদ্রোহী অন্যদিকে মান প্রেমে মন্ময়। তাই তার উপন্যাস, গল্পগ্রন্থে প্রেমের স্বরূপ উদ্ভাসিত। মৃত্যুক্ষুধা (১৯৩১) তাঁর একটি শিল্প সফল উপন্যাস।

এ উপন্যাসে তিনি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, আনন্দ, বেদনা এবং নৈরাশ্যের চিত্রায়ণ করেছেন আপন পারঙ্গমতায়। মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাসের পটভূমি কৃষ্ণনগর গ্রাম। খিলাফত এবং অসহযোগ আন্দোলনের পটভূমিতে লেখা খ্রিষ্টান ও মুসলিম অধ্যুষিত এ গ্রামের মানুষের দরিদ্র, ক্ষুধা এবং দুর্ভিক্ষ যেন মৃত্যুক্ষুধার শামিল।

এ উপন্যাসের চরিত্রগুলোকে নজরুল আবেগ দ্বারা অতিরঞ্জিত করেননি। চরিত্রগুলো স্বাভাবিক বাস্তবতায় বিকশিত; নজরুলের কোনো মতাদর্শ চরিত্রগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করেনি। মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘মেজবৌ’।

সে দরিদ্র থেকে পরিত্রাণের আশায় খ্রিষ্টান মিশনারিতে কাজ নেয়। পরবর্তীতে যে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করে। ফলে সে সমাজ ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ‘মেজবৌ’ এর ঐ অসহায়ত্ব পাঠককে দারুণভাবে বেদনাহত করে তোলে।

অন্যদিকে এ উপন্যাসের নায়ক চরিত্র বিত্তশালী মুসলিম পরিবারের যুবক আনসার একজন বিপ্লবী। তার চেহারা ও পোশাকের বর্ণনার মধ্যে তার অন্তঃপ্রকৃতি এবং কর্মপদ্ধতির পরিচয় স্পষ্ট। আনসার দেশকর্মী। তার মাথায় ফেটিগ ক্যাপের টুপি, টুপিতে অর্ধচন্দ্রের পরিবর্তে তরবারি ক্রস এবং ক্রসের মধ্যে হিন্দু-মুসলমানের মিলনাত্মক এক লোহার ছোট্ট ত্রিশূল। এছাড়া তার গায়ে খেলাফতি ভলান্টিয়ারের পোশাক। এ বিপ্লবী নায়ক আনসার মার্কসীয় মতাদর্শে বিশ্বাসী। এজন্য সে কৃষক, শ্রমিক, তাঁতি, জেলের মুক্তির জন্য অগ্রনায়ক। সে বুঝেছে দেশে মাথা কেটেও স্বাধীনতা অর্জন অসম্ভব। তাই দেশকে স্বাধীন করতে হলে শ্রমিকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এজন্য সে ইংরেজ সরকারের চোখ এড়িয়ে গোপন কর্মকাণ্ড শুরু করে। পরবর্তীতে সে রুবির প্রেমে পড়ে যায় কিন্তু কমিউনিস্ট মতবাদের প্রচারের কারণে আনসার সেন্ট্রাল জেলে বন্দি অবস্থায় যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে অকাল মৃত্যুবরণ করে। এভাবে উপন্যাসের পরিসমাপ্তি ঘটে। কাজী নজরুল ইসলাম এ উপন্যাসে সহজ সরল ভাষা প্রয়োগ করে চরিত্রগুলোকে জীবন্ত করে তুলেছেন। এ উপন্যাসের কাহিনির মধ্যে কোন শৈথিল্য নেই। তাই চরিত্র চিত্রায়ণ, কাহিনির পরিবেশন সর্বোপরি রোমান্টিক বিচারে ‘মৃত্যুক্ষুধা’ উপন্যাসটি কাজী নজরুল ইসলামের শিল্প সফল উপন্যাস।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।