প্রশ্নঃ কয়েদ চাচা কে? তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পরিচয় দাও।

অথবা, “লােকে বলে তিনি কামিল দরবেশ, ভবিষ্যৎ বলতে পারেন।”— কার সম্পর্কে এবং কেন এমন বলা হয়েছে?

অথবা, “সংসারে থেকেও তিনি আশ্চর্য রকমের সন্ন্যাসী।”- ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ সেলিনা হােসেনের ‘কাঁটাতারে প্রজাপতি’ উপন্যাসে কয়েদ চাচা আশ্চর্য লােক- সবাই তাকে কয়েদ চাচা বলেই ডাকে। সারাদিন এখানে-ওখানে ঘুরে বেড়ায়। অনেকে তাকে দরবেশ-সন্ন্যাসীর সাথে তুলনা করে।

কয়েদ চাচা অল্পভাষী মানুষ। সারাদিন ঝাউবনা, নয়তাে তাঁতিপাড়া কিংবা ধর্মপুর অথবা আলিসাহপুর, নয়তাে যাদুনগরে তাকে দেখা যায়। ভােলাহাট থানার সর্বত্রই যার যাতায়াত। সবাই তাকে চেনে। তবে কবে থেকে সে এ অঞ্চলে আছে তা কেউ জানে না। সারাদিন চুপচাপ এবং সাথে সবসময় একটা থালা থাকে। কারাে কাছে কিছু চায় না- কেউ কিছু দিলে খায়। দশটা কথা জিজ্ঞাসা করলে একটা কথার জবাব দেয়। লােকে বলে তিনি কামিল দরবেশ, ভবিষ্যৎ বলতে পারেন। আজমল তার সাথে অনেক কথা বলার চেষ্টা করেছে- তবে কখনাে কোনাে কথার উত্তর পায়নি। তবে মানুষটি তার প্রিয়। যখন বজরার টেকে নদীর ধারে বসে থাকে, ধূ-ধূ শূন্য দৃষ্টি, অসম্ভব শুকনাে শরীর, লম্বা ময়লা নখ, দাড়ি-চুল সম্বলিত চোয়াল ওঠা চেহারায় তাকে ঋষি-পুরুষ বলে মনে হয়।

আজমলের বুক ছলকে ওঠে সে অভিভূত হয়। সে ছােটবেলায় অনেকদিন কয়েদ চাচার পিছনে ঘুরেছে যদি ওকে কখনাে অলৌকিক কথা বলে। কৈশােরে এই মানুষটির জন্য ও ভাত তরকারি চুরি করে কলাগাছের পাতায় নিয়ে আসতাে আজমল। যেদিন ক্ষুধা থাকতাে সেদিন গপগপিয়ে খেতাে, আবার কোনােদিন ফিরেও চাইতাে না। মাঝে মাঝে আজমলের কাছে মনে হতাে- কয়েদ চাচা সম্ভবতাে স্বর্গের নিষিদ্ধ ফল। কয়েদ চাচা পাগল হয় সে কখনাে পাগলামি করে না; ভিক্ষুক নয় কারাে কাছে হাত পাতে না। আজমল অনুমান করে এই মানুষটার বুকের মধ্যে হয়তাে বড় কোনাে ধরনের ক্ষত আছে। আর এই কারণেই সে সারাজীবনের মধ্যে কথা বলা কমিয়ে দিয়েছে। সংসারে থেকেও সে আশ্চর্য রকমের সন্ন্যাসী। স্কুলের ঘরে বারান্দায় ভীষণ জ্বরে সে নির্বাক হয়ে পড়ে ছিল তার পাশে নেই কেউ; শুধু আজমল এবং কুতুব তাকে দেখতে আসে।

সুতরাং সার্বিক আলােচনা থেকে বলা যায়, কুতুব চাচা সংসারত্যাগী না হয়েও সংসারেই সে বৈরাগী; সংসারে কোনাে জিনিস বা কোনাে মানুষের প্রতি তার কোনাে আগ্রহ নেই।