উত্তরঃ সেলিনা হােসেনের ‘কাঁটাতারে প্রজাপতি’ উপন্যাসে ছমির আলির ছেলে রতন। ছমির আলি রতনকে সংসার থেকে পৃথক করে দিয়েছে।
রতনের বউ তারাবানু যদিও রতন নিজেই পছন্দ করে বিয়ে করেছিল, কিন্তু এখন সে হাড়ে-হাড়ে টের পায় রতনের আয়-রােজগার তেমন নেই। ছেলেপুলের সংখ্যা বেশি। ঠিক মতাে সংসার চালাতে পারে না বলে মেজাজ খারাপ থাকে। তার বাবা পঁচাত্তর বছর বয়সেও সুস্থ আছে বলে তার রাগ আরাে বেশি। তার বাবার কোনাে কিছুই রতনের পছন্দ নয়।
রতনের প্রত্যাশা ছিল এই বয়সে তার বাবা বিছানায় শুয়ে ‘কোকাবে’ তার ওপর ভরসা করবে তা নয়- বরং রতনকেই তার ওপর ভরসা করতে হয়। রতনের বাপ ষাটতম বিবাহ বার্ষিকী পালন করতে গিয়ে খাসি জবাই করে অনেককেই পেটপুরে ভােজন করায় এতেও রতন ক্ষিপ্ত হয়। সে তার বাবাকে বলেছে- এতাে ধুমধাম করে টাকা খরচের কী দরকার ছিল?
রতন জানে তার বাবার মৃত্যুর পর সবকিছুই তার হবে। রতন তার বাবার মৃত্যুও কামনা করে। বউ-এর সঙ্গে রাত দিন ঝগড়া হয়। কখনাে ক্ষেপে গিয়ে চিৎকার করে, বুড়াে মরেও মরে না, মরলে বেঁচে যেতাম। তারাবানুর মুখে গালাগাল শুনলেও তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে। শুরু হয় প্রচণ্ড ঝগড়া এবং পরিশেষে মারধাের। রতন মারধাের করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। কখনাে বাপের সামনে এসে তীব্র চোখে তাকিয়ে থাকে বলে, ‘বুড়াে শকুন’। রতনের বুকে যখন আগুন জ্বলে ওঠে, তখন সে ছমির আলিকে গালাগাল করে। রতনের বউ তারাবানু ধারালাে বটির কোপে তাকে খুন করার চেষ্টা করে। ছমির আলির বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে শেয়ালমুথার পাতা ছেচে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দেয়। তারপর গরুর গাড়ি যােগাড় করে হাসপাতালে রওনা করে। এতদিনে ছমির আলি কিছুটা হলেও ছেলের ওপর টান অনুভব করে। রতন বেঁচে থাকলেও সারাজীবনের মতাে সে পঙ্গু হয়ে যায়।
সুতরাং সার্বিক আলােচনা থেকে বলা যায়, রতন আলি ভালােবেসে বিয়ে করে সংসার বাঁধতে চেয়েছিল; কিন্তু তার সে সংসার সুখের হয়নি তার স্ত্রী তারাবানুর কারণে। তাছাড়া তার বাবার সাথে তার কখনােই সুসম্পর্ক ছিল না অবশ্য এরজন্য শুধু রতন একা দায়ী নয়- তার বাবা ছমির আলিও কমবেশি দায়ী।
Leave a comment