প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রতিটি ঈমানদার, সুস্থ এবং বালেগ নর-নারীর ওপর ফরজ একটি ইবাদত। তবে যারা মুসাফির তাদের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা কসর নামাজের বিধান রেখেছেন। আর কসর শব্দের অর্থ হলো সংক্ষেপ করা আর কসর নামাজের মধ্যে মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য কল্যাণ রেখেছেন।

সূরা আল নিসার ১0 নং আয়াতে মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, তোমরা যখন জমিনে সফর করবে তখন তোমাদের জন্য নামাজের কসর করায় কোন আপত্তি নেই। তাই মুসাফির ব্যক্তিকে অবশ্যই কসর নামাজ আদায় করতে হবে।

কসর নামাজ কি – বিবাহিত মেয়েদের বাবার বাড়িতে নামাজ পড়ার বিধান 

নামাজ সংক্ষেপ করে আদায় করাকে কসর নামাজ বলা হয়। অর্থাৎ জোহর, আসর এবং এশার চার রাকাত ফরজ নামাজকে সংক্ষেপ করে দুই রাকাত করে আদায় করাকে কসর নামাজ আদায় করা বলা হয়। আর এ ক্ষেত্রে একজন মুসলিম যখন তার নিজ আবাসস্থল থেকে ৭৮ কিলোমিটার বা ৪৮ মাইল দূরে অবস্থান করবে তখন তাকে কসর নামাজ আদায় করতে হবে। আবার যখন মেয়েরা অবিবাহিত থাকে তখন সে তার বাবার বাড়িতে মুকিম থাকে তখন তাকে পরিপূর্ণ নামাজ আদায় করতে হবে।

আর যখন তার বিয়ে হয়ে যাবে তখন সে তার বাবার বাড়িতে আর মুকিম থাকবে না মুসাফির হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে তার শ্বশুরবাড়ি যদি তার বাবার বাড়ি থেকে ইসলামী শরীয়া মোতাবেক ৪৮ মাইল বা ৭৮ কিলোমিটার দূরে হয় তাহলে সে বাবার বাড়িতে মুসাফির হবে। তবে সে ক্ষেত্রে তাকে মনে রাখতে হবে, যদি সে ১৫ দিনের কম থাকার উদ্দেশ্যে বাবার বাড়িতে আসে তাহলে সে বাবার বাড়িতে মুসাফির হবে এবং সে ক্ষেত্রে তাকে কসর নামাজ আদায় করতে হবে।

অর্থাৎ চার রাকাত ফরজ নামাজের সংক্ষেপ করে দুই রাকাত আদায় করতে হবে। আর যদি সে ১৫ দিনের বেশি থাকার নিয়তে বাবার বাড়িতে আসে তাহলে তাকে মুকিম বলে গণ্য করা হবে এবং তাকে পরিপূর্ণ নামাজ আদায় করতে হবে। তাই একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে অবশ্যই জানতে হবে কসর নামাজ কি – বিবাহিত মেয়েদের বাবার বাড়িতে নামাজ পড়ার বিধান।

কসর নামাজ কি

কসর শব্দের অর্থ হল কমানো অর্থাৎ চার রাকাত নামাজ কমিয়ে দুই রাকাত পড়াকে কসর নামাজ বলে। কোন ব্যক্তি যদি সফর অবস্থায় থাকে তাহলে সে চার রাকাত ফরজ নামাজ কমিয়ে দুই রাকাত আদায় করবে। তবে কসর নামাজ শুধু ফরজ নামাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, সুন্নত বা নফল নামাজের কোন কসর নেই এগুলো পুরোপুরি আদায় করতে হবে। তবে ফরজ নামাজ চার রাকাত হলে সেখানে দুই রাকাত পড়তে হবে কিন্তু দুই রাকাত বা তিন রাকাত –

যেমন ফজরের দুই রাকাত ফরজ নামাজের ক্ষেত্রে দুই রাকাত আদায় করতে হবে। এখানে কসর করে এক রাকাত আদায় করা যাবে না। আবার মাগরিবের নামাজের তিন রাকাত ফরজ নামাজের তিন রাকাত ই আদায় করতে হবে এখানেও কসর নামাজ আদায় করা যাবে না অর্থাৎ কসর নামাজ আদায় করতে হবে শুধু চার রাকাত ফরজ নামাজের ক্ষেত্রে। যেমন জহর, আসর ও এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ নামাজের দুই রাকাত করে আদায় করতে হবে।

এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন শুধু চার রাকাত ফরজ নামাজের ক্ষেত্রে কসর প্রযোজ্য। একজন ব্যক্তি যখন সফর অবস্থায় থাকবেন তখন তিনি শুধু জহর, আছর এবং এশার নামাজের ক্ষেত্রে চার রাকাত ফরজ নামাজের দুই রাকাত পড়বেন বা আদায় করবেন। পবিত্র আল কোরআনের সূরা নিসার ১0১ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, “জমিনে তোমরা যখন সফর করবে তোমাদের জন্য তখন নামাজের কসর পড়ায় আমার কোন আপত্তি নেই”।

কসর নামাজ আমাদের জন্য মহান আল্লাহতালার একটি বিশেষ অনুগ্রহ। মহান আল্লাহ তায়ালা সবসময় তার বান্দাদের ভালোবাসেন এবং তাদের জন্য সকল কাজ সহজ করতে চান আর এজন্যই সফরের সময় ক্লান্তির দিকে লক্ষ্য রেখেই চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজকে কমিয়ে দুই রাকাত করে দিয়েছেন।

মুসাফির কে

কসর নামাজ একমাত্র মুসাফিরের জন্য প্রযোজ্য তাই আমাদের আগে জানতে হবে মুসাফির আসলে কে বা মুসাফির বলতে কী বোঝায়। মুসাফির বলতে বোঝায় ভ্রমণকারী বা সফরকারি। তবে ভ্রমণ করলেই তাকে মুসাফির বলা যাবে না, মুসাফির হতে হলে ইসলামের যে শর্ত রয়েছে তা পূরণ হতে হবে। যেমন – কোন ব্যক্তি যখন ৪৮ মাইল বা ৭৭.২৩২ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে তখন তাকে মুসাফির বলে। আর নিজ বাড়ি থেকে ৪৮ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করলে তাকে মুসাফির হিসেবে গণ্য করা হবে।

তবে সবচেয়ে বেশি আশ্চর্যের বিষয় কি তা জানেন! একজন মেয়ে যখন বিয়ে হয়ে শ্বশুর বাড়ি চলে যায় এবং তার শ্বশুরবাড়ি যদি ৪৮ মাইল এর সমান বা তার থেকে দূরে হয় তাহলে সে তার বাবার বাড়ির মুসাফির। অথচ এই মেয়ে এই বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করেছে এবং সেখানে লালিত পালিত হয়েছে আর বিয়ের পর সে তার চিরচেনা বাবার বাড়ির মুসাফির। অর্থাৎ তাকে সেখানে কসর নামাজ আদায় করতে হবে।

অর্থাৎ মেয়েরা বিয়ের পর যখন তার স্বামীর বাড়ি চলে যাবে তখন সে তার বাবার বাড়িতে মুসাফির বলে গণ্য হবে অর্থাৎ তখন সে তার বাবার বাড়ির আর মুকিম থাকবে না। বিয়ের আগ পর্যন্ত একজন মেয়ে তার বাবার বাড়ির মুকিম থাকবে।

বিবাহিত মেয়েদের বাবার বাড়িতে নামাজ পড়ার বিধান

আমাদের মনে একটি প্রশ্ন জাগে আর তা হলো বিবাহিত মেয়েদের স্থায়ী বাড়ি কোনটি? তার বাবার বাড়ি! নাকি তার স্বামীর বাড়ি! আর এক্ষেত্রে একজন মেয়েকে সঠিক জ্ঞান রাখতে হবে তার স্থায়ী বাড়ি সম্পর্কে কারণ কারণ স্থায়ী বাড়ির সাথে নির্ভর করে নামাজ, রোজা পালনের বিষয়। তবে অধিকাংশ নারীরাই জানে না বাবার বাড়ি এবং স্বামীর বাড়ির মধ্যে পার্থক্য এবং নামাজ পড়ার বিধান কি বা ইসলাম কি বলে।

কারণ নারীদের স্থায়ী বাড়ির সাথে নামাজ আদায়ের নির্ধারিত হুকুম রয়েছে ইসলামী শরীয়ত মতে। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক বিবাহিত মেয়েদের বাবার বাড়িতে নামাজ পড়ার বিধান। বিয়ের আগে একজন মেয়ে তার বাবার বাড়িতে মুকিম থাকবে আর যখন তার বিয়ে হয়ে যাবে তখন সে আর তার বাবার বাড়ির মুকিং থাকবে না তখন সে মুসাফির হয়ে যাবে। মেয়েদের যখন বিয়ে হয় এবং সে যখন তার স্বামীর সাথে বসবাস শুরু করে তখন স্বামীর বাড়ি তার স্থায়ী বাড়ি হিসেবে গণ্য করা হয়।

একজন মেয়ের যখন বিয়ে হয়ে যায় এবং তার শ্বশুরবাড়ি যদি ৪৮ কিলোমিটার বা তার চেয়ে দূরে হয় এবং সে যদি তার স্বামীর সাথে স্থায়ীভাবে বসবাস করে তখন বিবাহিত মেয়েদের বাবার বাড়িতে গেলে নামাজ আদায় করা দুই ধরনের বিধান রয়েছে। যেমন-

বাবার বাড়িতে বিবাহিত মেয়েরা ১৫ দিনের কম থাকলে

বাবার বাড়িতে বিবাহিত মেয়েরা ১৫ দিনের বেশি থাকলে

বাবার বাড়িতে বিবাহিত মেয়েরা ১৫ দিনের কম থাকলে

একজন মেয়ের যখন বিয়ে হয়ে যায় তখন সে আর তার বাবার বাড়ির মুকিম থাকে না তখন সে মুসাফির হয়ে যায়। আর মুসাফির হলে তাকে কসর নামাজ আদায় করতে হবে এটাই ইসলামী শরীয়তের বিধান। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হলো একজন মেয়ের যখন বিয়ে হয়ে যাবে এবং সে তার স্বামীর সাথে স্থায়ীভাবে বসবাস করবে এবং তার বাবার বাড়ি ও স্বামীর বাড়ির মধ্যে দূরত্ব হতে হবে ৪৮ মাইল বা তার চেয়ে বেশি এবং বাবার বাড়ি এসে সে ১৫ দিনের কম সময় অবস্থান করবে

তখন তাকে তার বাবার বাড়িতে কসর নামাজ আদায় করতে হবে। অর্থাৎ যহর, আসর এবং এশার চার রাকাত ফরজ নামাজের ক্ষেত্রে তাকে দুই রাকাত আদায় করতে হবে। তবে যদি সে কোন ইমামের পেছনে নামাজ আদায় করে তাহলে তাকে ইমামকে অনুসরণ করে নামাজ আদায় করতে হবে বা পড়তে হবে অর্থাৎ চার রাকাত পড়তে হবে। আর যদি সে একা নামাজ আদায় করে তাহলে তাকে কসর নামাজ আদায় করতে হবে।

তবে ইসলাম মেয়েদের মসজিদে নামাজ আদায় করার ব্যাপারে অনুৎসাহিত করেছে। বলা হয়েছে মেয়েদের বাড়িতে নামাজ আদায় করায় উত্তম।

বাবার বাড়িতে বিবাহিত মেয়েরা ১৫ দিনের বেশি থাকলে

একজন মেয়ে যদি বিয়ের পরে তার বাবার বাড়ি এসে ১৫ দিনের বেশি অবস্থান করবে বলে নিয়ত করে এবং অবস্থান করে তাহলে সে আর মুসাফির থাকবে না। সে ক্ষেত্রে তার বাবার বাড়ি এবং স্বামীর বাড়ির মধ্যে যতই দূরত্ব হোক না কেন ৪৮ মাইল বা এর চেয়েও বেশি দূরে হলেও তাকে মুকিম বলে গণ্য করা হবে এবং সে মুসাফির হবেনা এবং তার কসর নামাজ আদায় করা যাবে না তাকে পুরো নামায আদায় করতে হবে।

অর্থাৎ চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ কসর করে দুই রাকাত আদায় না করে পুরো নামাজ আদায় করতে হবে।(রুদ্দুল মুহতার, বাহারুর রায়েক)। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন -” মুকিম ও মুসাফির অবস্থায় নামাজ মেয়েদের ক্ষেত্রে দু’রাকাত ফরজ করা হয়েছিল, পরে সফরের নামাজ ঠিক রাখা হলো অর্থাৎ দু রাকাত রাখা হলো আর মুকিমের নামাজ বাড়িয়ে দেওয়া হলো”। (মুসলিম ৬৮৫, বুখারী  ১০ ৪০)

বিবাহিত নারী যদি তার বাবার বাড়ি গিয়ে সে নিজেকে মুকিম বলে ভুল করে এবং ফরজ নামাজ চার রাকাত আদায় করে তাহলে তার নামাজ হয়ে যাবে। তবে নামাজের ওয়াক্তের ভেতরে যদি তার স্মরণ হয়ে যায় যে সে মুকিম নয় মুসাফির তাহলে তাকে আবার নামাজ কসর করতে হবে। তবে ওয়াক্ত চলে যাওয়ার পর যদি স্মরণ হয় তাহলে তাকে আর সেই নামাজ পুনরায় পড়তে বা দোহারাতে হবে না। (তাতার খনিয়া ২/৫)।

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন -” নিশ্চয় মহান আল্লাহ তা’আলা আমার উম্মতের ভুল, বিস্মৃতি এবং বাধ্য হয়ে করা বিষয় ক্ষমা করেছেন”। (ইবনে মাজহা )। মুসাফির ব্যক্তি যদি সফর অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে চার রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করে তাহলে সে গোনাগার হবে। এক্ষেত্রে তাকে কসর করতে হবে তবে যদি সে মুকিম ইমামের পেছনে নামাজ আদায় করে তাহলে তার নামাজ আদায় হয়ে যাবে এক্ষেত্রে তাকে আর নামাজ কসর করতে হবে না।

মুসাফির ব্যক্তি যদি ভুলক্রমে নামাজ চার রাকাতের নিয়ত শুরু করে দেয় এবং সে নামাজের প্রথম বৈঠকও শেষ করে তাহলে সাহু সিজদা করলে তার ফরজ নামাজ আদায় করা হয়ে যাবে। আর যদি সে প্রথম বৈঠক না করে থাকে তাহলে তার ফরজ আদায় হবে না আবারও তাকে নামাজ আদায় করতে হবে। (বাদায়েউস সানায়িঃ১/৯১)।

কসর নামাজ আদায়ের নিয়ম ও নিয়ত

প্রতিটি মানুষের জীবনের সাথে ভ্রমণ যাকে ইসলামী পরিভাষায় সফর বলা হয় অর্থাৎ সফর ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর ভ্রমণ করা হলো মানুষের সহজাত প্রবণতা। মানুষ যখন তার নিজ বাড়িতে থাকে তখন সে মুকিম থাকে এবং তখন তাকে পূর্ণাঙ্গ নামাজ আদায় করতে হয়। আর যখন সে সফরে থাকে তখন সে আর মুকিম থাকে না তখন সে মুসাফির হয়ে যায় এবং তখন তাকে কসর নামাজ আদায় করতে হয়।

কসর নামাজ হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বড় নিয়ামত। কসর অর্থ সংক্ষেপ করা অর্থাৎ চার রাকাত ফরজ নামাজ না পড়ে সংক্ষেপ করে দুই রাকাত পড়াকে কসর নামাজ বলা হয়। একজন মুসলিম ব্যক্তি যখন তার নিজ আবাসস্থল থেকে ৭৮ কিলোমিটার বা ৪৮ মাইল দূরে সফর করতে বের হয় তখন সে তার নিজ এলাকা থেকে বের হলেই সে আর মুকিম থাকে না তখন সে মুসাফির হয়ে যায়। আর মুসাফির ব্যক্তির জন্য কসর নামাজ পড়া আল্লাহর বিধান।

কসর নামাজ পড়ার নিয়ম এবং নিয়ত রয়েছে নিম্নে এগুলো পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হলো –

 কসর নামাজের নিয়ম

  • কোন ব্যক্তি যদি তার নিজ আবাসস্থল থেকে ৭৮ কিলোমিটার বা ৪৮ মাইল দূরত্ব অতিক্রম করে তাহলে সে আর মুকিম থাকে না মুসাফির হয়ে যায়। তখন সেই ব্যক্তি যদি সেই স্থানে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করে তবে ব্যক্তি যেখানে অবস্থান করবে সেখানে তাকে কসর নামাজ পড়তে হবে।
  • কসর নামাজ জোহর, আসর এবং এশা এই তিন ওয়াক্ত নামাজের চার রাকাত ফরজ নামাজের দুই রাকাত করে আদায় করতে হবে। ফজর নামাজের দুই রাকাত ফরজ এবং মাগরিবের তিন রাকাত ফরজ নামাজের কোন কসর হবে না এগুলো পরিপূর্ণ আদায় করতে হবে।
  • নামাজ আদায়কারী ব্যক্তিকে প্রথমে ওযু অথবা তায়ুম্মুম করে ইসলামী শরিয়া মোতাবেক তাকে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াতে হবে এবং নামাজের জন্য নিয়ত করতে হবে।
  • এরপর নামাজ আদায়কারী ব্যক্তিকে আমরা যেভাবে ফজরের দুই রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করি ঠিক সেই ভাবে দুই রাকাত ফরজ নামাজ হিসেবে আদায় করতে হবে।
  • নামাজ আদায়কারী ব্যক্তিকে অন্য দুই রাকাত ফরজ নামাজের মতই আমরা যেমন সুরা ফাতেহার পরে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে নামাজ আদায় করি ঠিক সেই ভাবে তাকেও নামাজ আদায় করতে হবে।
  • তবে মুসাফির ব্যক্তিকে অবশ্যই এশার তিন রাকাত বিতর নামাজ আদায় করতে হবে।
  • নামাজ আদায়কারী ব্যক্তিকে মনে রাখতে হবে একমাত্র ফরজ নামাজের ক্ষেত্রে কসর নির্ধারিত রয়েছে কিন্তু সুন্নত এবং নফল নামাজের জন্য কোন কসর নেই, তাই তাকে সুন্নত এবং নফল নামাজ উত্তম রূপে আদায় করতে হবে। তবে সে যদি ব্যস্ততার জন্য আদায় করতে না পারে তাহলে তার কোন গুনাহ হবে না।
  • মুসাফির ব্যক্ত যদি ইচ্ছাকৃতভাবে সফর অবস্থায় চার রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করে অর্থাৎ পরিপূর্ণ নামাজ আদায় করে তাহলে সে গুনহাগার হবে। এক্ষেত্রে তাকে আবার কসর নামাজ অর্থাৎ ফরজ নামাজের দুই রাকাত কসর করে আদায় করতে হবে।
  • সফররত ব্যক্তি যদি ভুল ক্রমে চার রাকাত নামাজের নিয়ত করে এবং প্রথম বৈঠক করে ফেলে তাহলে সাহু সিজদা করলে তার ফরজ আদায় হয়ে যাবে। আর যদি প্রথম বৈঠক না করে থাকে তাহলে ফরজ আদায় হবে না আবারও পড়তে হবে। কারণ সে চার রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত করে নামাজে দাঁড়িয়েছে।
  • মুসাফির ব্যক্তি যদি মুকিম ইমামের পেছনে নামাজ আদায় শুরু করে তাহলে তাকে ইমামকে অনুসরণ করে পরিপূর্ণ নামাজ আদায় করতে হবে।
  • ইবনে আবী সাইবা থেকে বর্ণিত, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রহমতুল্লাহি বলেন, মুসাফির যদি মুকিম দের সঙ্গে নামাজের শরিক হয় তবে সে যেন তাদের মতো অর্থাৎ চার রাকাত নামাজ আদায় করে।
  • মুসাফির ব্যক্তি যদি চলন্ত অবস্থায় থাকে বা কোন কাজের যদি তার তাড়া থাকে তাহলে সে ফজরের দুই রাকাত সুন্নত অর্থাৎ সুন্নতে মুয়াকাদ্দা না পড়ার ও সুযোগ রয়েছে। তবে যদি সে স্বাভাবিক অবস্থায় অথবা স্থির অবস্থায় থাকে তাহলে সুন্নত নামাজ সে আদায় করবে। (ইলাউস সুনান ৭১৯১)।

কসর নামাজের নিয়ত

প্রত্যেকটি নামাজের যেমন নিয়ত রয়েছে ঠিক তেমনি কসর নামাজেরও নিয়ত রয়েছে। যারা মুসাফির তারা কসর নামাজ আদায় করবেন এবং তারা কসর নামাজের নিয়ত যেভাবে করবেন তা হলো – আমরা যেমন ফরজ নামাজের নিয়ত করি ঠিক তেমনি ভাবেই আপনারা কসর নামাজের নিয়ত করবেন। অন্যান্য ফরজ নামাজের মত কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে শুধু দুই রাকাত কসল নামাজের উল্লেখ করে নিয়ত করবেন।

এতে আপনাদের কসর নামাজের নিয়ত এবং নামাজ আদায় হয়ে যাবে। তবে আপনারা ইচ্ছে করলে বাংলায় এবং আরবিতে যেকোনো ভাবে নিয়ত করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, নিয়ত না করলে কিন্তু নামাজ হবে না।

কসর নামাজ কাদের জন্য

 নামাজ পড়া একটি ফরজ ইবাদত। তবে প্রতিটি সুস্থ এবং বালেগ নর-নারী উভয়ের উপরে নামাজ আদায় করা ফরজ। তবে ইসলামী শরীয়া মোতাবেক নামাজ আদায় করার কিছু নিয়ম বা শর্ত রয়েছে যেমন মুকিম এবং মুসাফিরের জন্য আলাদা নামাজের নিয়ম রয়েছে। যারা মুকিম তারা পূর্ণ নামাজ আদায় করবেন এবং যারা মুসাফির তারা কসর নামাজ আদায় করবেন। এক্ষেত্রে আমাদের জানতে হবে যে কারা কসর নামাজ আদায় করতে পারবেন।

তাই আসুন জেনে নেওয়া যাক কসর নামাজ আসলে কাদের জন্য! ইসলামী শরীয়া দৃষ্টিতে যারা মুসাফির অর্থাৎ নিজ আবাসস্থল থেকে ৭৮ কিলোমিটার বা ৪৮ মাইল দূরে অবস্থান করবেন এবং বিবাহিত মেয়েরা বাবার বাড়িতে আর মুকিম থাকবেন না মুসাফির হয়ে যাবেন যখন তাদের শ্বশুরবাড়ি ৪৮ মাইল বা ৭৮ কিলোমিটার দূরে হবে তখন তারা যদি বাবার বাড়িতে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়তে আসেন তাহলে তাদেরকে কসর নামাজ আদায় করতে হবে।

আর যদি ১৫ দিনের বেশি থাকবেন নিয়ত করেন তাহলে তাকে পরিপূর্ণ নামাজ আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাদের মনে রাখতে হবে কসর নামাজ শুধু জোহর, আসর এবং এশার চার রাকাত ফরজ নামাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে অর্থাৎ এই তিন ওয়াক্তের নামাজের চার রাকাত ফরজ নামাজের শুধু দুই রাকাত আদায় করতে হবে। আর ফজর নামাজের দুই রাকাত ফরজ নামাজ এবং মাগরিবের তিন রাকাত ফরজ নামাজের কোন কসর হবে না।

তবে মুসাফির ব্যক্তিদের সুন্নত এবং নফল নামাজের ব্যাপারে কোন ধরা বাধা নিয়ম নেই। তবে সুন্নত এবং নফল নামাজ আদায় করাই শ্রেয়। এক্ষেত্রে যদি মুসাফির ব্যক্তির তাড়াহুড়া থাকে তাহলে ফরজের দুই রাকাত সুন্নতে মুয়াকাদ্দা  আদায় না করলেও গুনাগার হবে না। তবে সবচেয়ে উত্তম হলো সুন্নত নামাজ আদায় করা।

কসর নামাজের শর্ত

প্রতিটি জিনিসের যেমন একটি নির্দিষ্ট শর্ত রয়েছে ঠিক তেমনি কসর নামাজ আদায়ের ব্যাপারেও কিছু শর্ত রয়েছে। আর কসর নামাজ আদায় করতে হলে আপনাকে অবশ্যই এর শর্তগুলো সঠিকভাবে জানতে হবে। মূলত কসর নামাজ তখনই আদায় করতে হয় যখন আপনি শরীয় দৃষ্টিতে মুসাফির বলে গণ্য হবেন। আর শরিয়া মোতাবেক আপনি তখনই মুসাফির হবেন যখন আপনি নিজ আবাসস্থল থেকে ৭৮ কিলোমিটার ৪৮ মাইল দূরে অবস্থান করবেন।

তখন আপনাকে চার রাকাত ফরজ নামাজের দুই রাকাত নামাজ কসর হিসেবে আদায় করতে হবে। আর এইভাবে সংক্ষেপে নামাজ আদায় করার মধ্যে আল্লাহ তাআলা কল্যাণ রেখেছেন। আর কসর নামাজ আদায় করার প্রধান শর্তই হল আপনাকে মুসাফির হতে হবে। মেয়েরা যেমন বিয়ের পরে বাবার বাড়িতে আর মুকিম থাকে না মুসাফির হয়ে যায় ঠিক তেমনি মেয়েদেরও বাবার বাড়িতে যদি আসে তাহলে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়তে আসলে তাকে অবশ্যই কসর নামাজ আদায় করতে হবে।

তবে সে ক্ষেত্রে তাকে মনে রাখতে হবে তার শ্বশুরবাড়ি যদি তার বাবার বাড়ি থেকে ইসলামী শরিয়া মোতাবেক ৭৮ কিলোমিটার বা ৪৮ মাইল দূরে হয় তাহলে সে মুসাফির বলে গণ্য হবে এবং তাকে কসর নামাজ  আদায় করতে হবে।

নিজ বাড়িতে মুসাফির

বিবাহিত মেয়েরা তার চিরচেনা নিজের বাড়ি অর্থাৎ বাবার বাড়িতে মুসাফির হয়ে যায় যখন একজন মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় তখন সে তার বাবার বাড়িতে আর মুকিম থাকে না তখন সে মুসাফির হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে বিবাহিত মেয়ের শশুর বাড়ি যদি ইসলামী শরীয়া মোতাবেক ৭৮ কিলোমিটার বা ৪৮ মাইল দূরে হয় সেক্ষেত্রে সে বাবার বাড়ির মুসাফির হয়ে যায়। আর যদি বিবাহিত মেয়ে বাবার বাড়িতে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়তে আসে তাহলে তাকে অবশ্যই কসর নামাজ আদায় করতে হয়।

আর যদি ১৫ দিনের বেশি থাকবে বলে ইচ্ছে পোষণ করে তাহলে সে পরিপূর্ণ নামাজ আদায় করবে। একজন মেয়ের আসলে নিজ বাড়ি বলতে কিছু নেই। বিয়ের আগে বাবার বাড়ি, বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়ি বা স্বামীর বাড়ি আর পরে ছেলের বাড়ি। একমাত্র মৃত্যুর পরে তার যে ঘরটি হয় সেটিই হয়তো তার নিজের বাড়ি। একজন মেয়ে যখন বিয়ের পরে তার স্বামীর সঙ্গে স্থায়ীভাবে বসবাস করে তখন সেখানেই তার নিজ বাড়ি হিসেবে গণ্য হয়।

আর বাবার বাড়ি হয়ে যায় মুসাফিরখানা। তখন সেখানে তাকে কসর নামাজ আদায় করতে হয়। সে তার নিজ বাড়িতে হয়ে যায় মুসাফির। ইসলামে মেয়েদের অনেক সম্মানিত করা হয়েছে কিন্তু মেয়েদের কসর নামাজের বিধান দেখলে অবাক হয়ে যেতে হয়। তবে এটি আল্লাহর বিধান যা সবাইকে মেনে চলতে হবে। অবশ্যই আল্লাহ এর মধ্যেই আমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রেখেছেন।

শেষ কথা

কসর নামাজ অর্থাৎ নামাজ সংক্ষেপ করে আদায় করা আল্লাহর বিধান আর এটা একজন মুসলিমের জন্য বড় একটি সুযোগও বটে এবং এভাবেই নামাজ আদায়ের মধ্যে রয়েছে অনেক সোয়াব। তাই এর ব্যতিক্রম করা ও একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমানের জন্য অনুচিত। প্রিয় পাঠক বৃন্দ, আমি আপনাদের জন্য কসর নামাজ সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আমি আশা করি আমার এই আলোচনা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।

আর যদি কোন ভুল হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। মহান আল্লাহতালা আমাদের প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার তৌফিক দান করুন। আমীন।