জানতে শেখাই যথেষ্ট নয়। শিশু, যুবক, বয়স্ক ব্যক্তি প্রত্যেকের শেখা উচিত জ্ঞানকে কীভাবে সঠিক পথে কাজে লাগানাে যায়। ডেলর কমিশন বিশ্লেষণ করেছে যে, কাজের জন্য শেখার মূলনীতির সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত উপযুক্ত বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ। কাজের জন্য শেখা ব্যক্তিগত কর্মদক্ষতার উপর নির্ভর করে।
শিক্ষার দ্বিতীয় স্তম্ভ হল কর্মের জন্য শিক্ষা। কমিশন শুধু দৈহিক দক্ষতা অর্জনের দিকে নজর দেয়নি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ব্যক্তিগত উৎকর্ষতা বৃদ্ধির কথাও বলেছে। প্রশিক্ষণ গ্রহণের সময় শিক্ষার্থীকে যদি কর্ম অভিজ্ঞতা বা সামাজিক কাজে অংশ নেওয়ার সুযােগ করে দেওয়া যায় তাহলে কাজের প্রতি তাদের আগ্রহ তৈরি হয় এবং তারা কাজে দক্ষতা অর্জন করে। একে বলে কর্মের জন্য শিক্ষা। সক্রিয় পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করলে কর্মদক্ষতা গড়ে ওঠে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, কোনাে কর্ম সম্পাদনের জন্য কয়েকটি স্তর অতিক্রম করতে হয়। যথা─
(1) জ্ঞানমূলক স্তর: এটি হল কর্ম সম্পাদনের প্রথম স্তর। এই স্তরে শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট কর্ম সম্পর্কে অধিক জ্ঞান অর্জন করে, কর্মপদ্ধতি নির্বাচন করে।
(2) কার্যকরী স্তর : এটি হল কর্ম সম্পাদনের দ্বিতীয় স্তর। এই স্তরে শিক্ষার্থী কর্মেন্দ্রিয়ের সহায়তায় কর্ম সম্পাদন করে ও ত্রুটিগুলি সংশােধন করে।
(3) স্বতশ্চলতার স্তর : এটি হল কর্ম সম্পাদনের সর্বশেষ স্তর। এই স্তরে শিক্ষার্থী ত্রুটি সংশােধনের জন্য চর্চা করে। স্বতশ্চলতার সঙ্গে যাতে কাজটি সম্পাদন করতে পারে সেজন্য শিক্ষার্থী সক্রিয় হয়। এর ফলে শিক্ষার্থী কর্মে দক্ষতা অর্জন করতে পারে ও সফল হয়।
প্রাচীনযুগে জ্ঞানার্জনের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের শেখানাে হত অস্ত্রশিক্ষা, কৃষিকাজ, পশুপালন, ব্যবসা বাণিজ্য। মধ্যযুগে ছিল হস্তশিল্প, চিত্রাঙ্কন, শিল্পকলা প্রভৃতি কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম। ব্রিটিশ ভারতে কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষার কথা শিক্ষা রিপোর্ট পাওয়া যায়। উডের ডেসপ্যাচে ও হান্টার কমিশনে বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। হান্টার রিপাের্টে ‘বি‘ কোর্সের কথাও বলা হয়েছে। গান্ধিজির বুনিয়াদি শিক্ষা ও সার্জেন্ট কমিটির রিপাের্টে কর্ম শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। রাধাকৃষ্ণণ কমিশন, মুদালিয়র কমিশন, কোঠারি কমিশনে জাতীয় শিক্ষানীতিতে কর্মমুখী শিক্ষার উপর আলােকপাত করা হয়েছে।
Leave a comment