কাজের জন্য শিক্ষা শুধু দৈহিক দক্ষতা অর্জনের দিকে নজর দেয়নি, বৃত্তিমূলক কাজে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ব্যক্তিগত উপযুক্ততা গঠনের কথাও উল্লেখ করেছে। এই উদ্দেশ্যসাধন করার পদক্ষেপগুলি হলㅡ

(১) বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ: বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তােলা।

(২) ইন্দ্রিয়সমূহের চর্চা : কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে ইন্দ্রিয়সমূহের চর্চা হয়, যে কারণে শিক্ষার্থীদের ব্যাবহারিক কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

(৩) সৃজনাত্মক ক্ষমতা : কর্মের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনাত্মক ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

(৪) ইচ্ছানুযায়ী শিক্ষালাভ : কর্মভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজের ক্ষমতা ও চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা লাভের সুযােগ পায়।

(৫) শ্রমের প্রতি মর্যাদাবােধ : কর্মের জন্য শিক্ষার উদ্দেশ্য পূরণে শিক্ষার ভূমিকা হল, শিক্ষার্থীদের মধ্যে শ্রমের প্রতি মর্যাদাবােধ গড়ে তােলা। তাই পাঠক্রমের মধ্যে কর্ম শিক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যাতে শিশুর মনে শ্রমের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে।

(৬) ভবিষ্যৎ বৃত্তির প্রস্তুতি : ভবিষ্যৎ বৃত্তির প্রস্তুতি হিসেবে কর্মমূলক শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন কর্মমূলক শিক্ষার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কর্মের সঙ্গে পরিচিত হয়, অভিজ্ঞতা বাড়ে, আগ্রহ ও প্রবণতা সম্পর্কে বােঝা যায়। শিক্ষার্থী তার নিজের ক্ষমতা সম্পর্কেও পরিচিত হয়। তাই এই কর্মমুখী শিক্ষা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

(৭) বিদ্যালয়ের পদক্ষেপ : (a) পাঠক্রম ও সহপাঠক্রমিক বিভিন্ন কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কর্মদক্ষতা বিকশিত করা। (b) তাত্ত্বিক ও ব্যাবহারিক শিক্ষার সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। তাই বিদ্যালয়ে বিভিন্ন কাজকর্ম এমন হবে যা শিক্ষার্থীদের অবহিত করবে। (c) প্রতিদিনের জীবনে চলার ক্ষেত্রে সমস্যার মােকাবিলা করার জন্য বিদ্যালয়ের পাঠক্রমে ও পঠনপাঠনে এমন বিষয় থাকবে, যা তাদের বাস্তবমুখী করবে। (d) শিক্ষার্থীদের মধ্যে কর্ম সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে।

রুশো (Rousseau), পেস্তালৎসি (Pestalozzi), হারবার্ট স্পেনসার (Herbert Spencer), জন ডিউই (John Dewey) প্রমুখ শিক্ষাবিদগণ কর্মভিত্তিক শিক্ষা বা কাজের জন্য শিক্ষা-র উপর জোর দিয়েছেন। গান্ধিজির বুনিয়াদি শিক্ষা কর্মভিত্তিক শিক্ষার একটি পদক্ষেপ। উডের ডেসপ্যাচ, হান্টার কমিশনের রিপাের্ট প্রভৃতি সবক্ষেত্রেই কর্মদক্ষতার মাধ্যমে অর্জিত শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরােপ করা হয়েছে।