প্রশ্নঃ কর্তৃত্ব অর্পণ (Delegation of Power) কি? 

কর্তৃত্ব অর্পণ (Delegation of Power): সংগঠনের পদসোপান বা স্কেলার নীতি এটিই নির্দেশ করে যে, এর বিভিন্ন পদসোপান ও ইউনিটগুলো নিরবচ্ছিন্ন কর্তৃত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ। পদসোপানভিত্তিক সংগঠনে সকল কর্তৃত্ব আইনগতভাবে সাধারণত সংগঠন প্রধানের হাতেই ন্যস্ত থাকে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণের পরিধি নীতিতে এটিই নির্দেশিত হয় যে, কোন নির্দিষ্ট সীমার বাইরে কোন নিয়ন্ত্রণই চর্চা করা সম্ভব নয়। এখানেই কর্তৃত্ব অর্পণ নীতির সন্ধান পাওয়া যায়। কর্তৃত্ব অর্পণ নীতির অর্থ হলো, প্রত্যেক কর্মচারীকেই তাঁর কাজ সম্পাদন করতে সমর্থ হওয়ার মত যথেষ্ট কর্তৃত্ব প্রদান করতে হবে। সংগঠনের প্রধান অবশ্যই তার অধস্তনদের নিকট প্রয়োজনীয় মাত্রায় কর্তৃত্ব অর্পণ করবেন, অথচ তিনি সেই কর্তৃত্ব চর্চার উপর তাঁর তদারকির অধিকারও বজায় রাখবেন। আর ক্ষমতা অর্পণ পদ্ধতির মাধ্যমেই তা সম্ভব নয়।

মুনী (Mooney)-র মতে, “কর্তৃত্ব অর্পণ বলতে কোন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃত্ব নিম্ন পর্যায়ের কর্তৃপক্ষের নিকট সুনির্দিষ্ট কর্তৃত্ব অর্পণ করাকেই বুঝায়।” এ অর্থে কর্তৃত্ব অর্পণ হচ্ছে কোন ব্যক্তি কর্তৃক তার এমন কোন এজেন্ট বা অধস্তন ব্যক্তির নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরণ, যিনি তার তদারক ও নিয়ন্ত্রণাধিকারের অধীনে থাকেন। আইনের দিক দিয়ে বিচার করলে অর্পিত কর্তৃত্ব তখনও অর্পণকারীর হাতে থেকে যায়, কিন্তু এ কর্তৃত্বের বাস্তব চর্চার অনুমতি এরূপ এজেন্ট বা অধস্তন ব্যক্তিকে প্রদান করা হয়।

জি. আর. টেরি (G. R. Terry) কিছুটা ভিন্নতমত পোষণ করে বলেন, “Delegation means conferring authority from one executive or organization unit to another.” অর্থাৎ কর্তৃত্ব অর্পণ বলতে এক নির্বাহী-ইউনিট বা সংগঠন-ইউনিট হতে অন্য নির্বাহী- ইউনিট বা সংগঠন-ইউনিটের নিকট কর্তৃত্ব প্রদান করাকেই বুঝায়। [George R. Terry, Principles of Management, p. 271.]

কৰ্তৃত্ব অর্পণ বলতে অপরিহার্যরূপেই সংগঠনের ঊর্ধ্বতন পদ হতে অধস্তন পদে ক্ষমতা অর্পিত হওয়াকে বুঝায় না; বরং নিম্নতর পর্যায় হতে উচ্চতর পর্যায়ে বা সমপর্যায়ের মধ্যে কর্তৃত্ব ন্যস্তকরণকে কর্তৃত্ব অর্পণ হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।

সুতরাং কোন সংগঠনে কর্তৃত্ব অর্পণের ধারা ‘নিম্নমুখী, ঊর্ধ্বমুখী বা পার্শ্বমুখী,’ (Down- ward, upward or sideward) হতে পারে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, যখন কোন কোম্পানির সেলস ম্যানেজার সেল্সম্যানদের নিকট কর্তৃত্ব ন্যস্ত করেন, তখন তাকে নিম্নমুখী কৰ্তৃত্ব অর্পণ বলা হয়। 

আবার, যখন কোন কোন কোম্পানির স্টকহোল্ডারগণ তাদের বোর্ড অব ডিরেক্টরগণের নিকট কর্তৃত্ব অৰ্পণ করে, তখন তাকে ঊর্ধ্বমুখী কৰ্তৃত্ব অর্পণ বলা হয়। আর যখন একজন ক্রয়-অধিকর্তা বা পারচেজ-অফিসার অপর একজন পারচেজ-অফিসারের নিকট কর্তৃত্ব ন্যস্ত করেন, তখন তাকে পার্শ্বমুখী কৰ্তৃত্ব অর্পণ বলা হয়৷

কর্তৃত্ব অর্পণের মাধ্যমে একজন প্রশাসনিক অধিকর্তা শ্রম-বিভাগ নীতি কার্যকরী করতে এবং নিজে সংশোধন তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণের চূড়ান্ত ক্ষমতা না হারিয়ে তার সহকর্মীগণের নিকট ক্ষমতা ও কর্তব্য হস্তান্তর করতে পারেন। কর্তৃত্ব অর্পণ বলতে দায়িত্ব পরিত্যাগ করাকেই বুঝায় না এবং এটি চূড়ান্ত কর্তৃত্ব হস্তান্তরণও নয়। যিনি কর্তৃত্ব অর্পণ করেছেন, তিনি তার সমগ্র দায়িত্ব হস্তান্তর করেন না। বরং কর্তৃত্ব-অর্পিত ব্যক্তিগণের কাজ পরিদর্শন, তদারক, নিয়ন্ত্রণ ও পর্যালোচনা করার চূড়ান্ত ক্ষমতা নিজের হাতেই বজায় রাখেন। তিনি তার অধস্তন ব্যক্তিগণের কাজের জন্য দায়ী থাকেন। এমন কি তিনি অর্পিত কর্তৃত্ব পুনরায় প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। 

জে. ডি. মিলেট (J. D. Millett)-এর মতে, “Delegation of authority means more than simply assigning duties to others in more or less detail. The essence of delegation is to confer discretion upon others, to use their judgment in meeting specific problems within the frame work of their duties.” অর্থাৎ কর্তৃত্ব কেবল অর্পণ বলতে কমবেশি বিস্তারিতভাবে অন্যান্যদের নিকট কর্তৃত্ব হস্তান্তর করাকেই কেবল বুঝায় না। কর্তৃত্ব অর্পণের মূলকথা হচ্ছে অন্যান্যদিগকে স্ব-বিবেচনাগত ক্ষমতা প্রদান করা, যাতে তারা তাদের কর্তব্যের কাঠামোর বিশেষ সমস্যাদি মোকাবিলা করতে গিয়ে তাঁদের বিচার-বিবেচনা চর্চা করতে পারেন।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, কর্তৃত্ব অর্পণের ফলে কর্তৃত্ব-অর্পিত ব্যক্তি ও কর্তৃত্ব অর্পণ কারীর উপর একই সময়ে কর্তৃত্ব ন্যস্ত থাকে। কোন সংগঠনের ভিতর কর্তৃত্ব অর্পণের মাধ্যমেই কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব বণ্টন করা হয়ে থাকে।