প্রশ্নঃ কর্তৃত্ব অর্পণের নীতিসমূহ বর্ণনা কর।
কর্তৃত্ব অর্পণের নীতিসমূহ (Principles of Delegation of Authority): প্রশাসনিক ক্ষেত্রে কর্তৃত্ব অর্পণের সময় নিম্নলিখিত নীতিসমূহ মেনে চলা বাঞ্ছনীয়ঃ
১। সুনির্দিষ্টভাবে ও লিখিত আকারে কর্তৃত্ব অর্পণ করা একান্ত বাঞ্ছনীয়। অর্পিত কর্তৃত্বের পরিমাণ ও এ কর্তৃত্ব চর্চার নীতি নিয়মকানুন ও পদ্ধতিগুলো সুনির্ধারিতভাবে উল্লিখিত হওয়া উচিত, যেন এ কর্তৃত্ব ব্যাখ্যার ব্যাপারে প্রশাসনের ভিতর একরূপতা ও মতৈক্য বজায় থাকে। বস্তুত এ সবকিছুই অফিস ম্যানুয়েলে (Office Manual) স্পষ্টভাবে নির্দেশিত থাকা প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক অফিসের কর্মচারীগণেরই এ সকল বিষয়ে অবগত থাকা উচিত।
২। ‘প্রোপার চ্যানেল’ নীতি অনুযায়ী সর্বদা প্রশাসন-কাঠামোর বিভিন্ন পর্যায়ে কর্তৃত্ব অর্পিত হবে। অর্থাৎ কর্তৃত্ব অর্পণ কারী তার অধীনস্থ ব্যক্তির নিকটই কর্তৃত্ব অর্পণ করবেন। নিকটতম অধস্তন ব্যক্তিকে এড়িয়ে গিয়ে আরও নিম্নপর্যায়ের কোন ব্যক্তিকে বা প্রশাসন কাঠামোর বাইরে কোন ব্যক্তিকে কর্তৃত্ব অর্পণ করা হলে উক্ত নিকটতম অধস্তন ব্যক্তির মনে ক্ষোভের সঞ্চার হতে পারে।
৩। সর্বদা স্মরণ রাখতে হবে যে, ব্যক্তি বিশেষের নিকট নয় বরং পদের নিকটই কর্তৃত্ব অর্পণ করা হচ্ছে। আর সেহেতু একই পর্যায়ের সকল পদের নিকটই সমরূপ কর্তৃত্ব অর্পণ করা উচিত।
৪। কোন্ কোন্ পদের নিকট কি পরিমাণ দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব অর্পণ করা হয়েছে, তা প্রশাসনের সকল পর্যায়ের কর্মচারীগণকেই সে সম্পর্কে জানা উচিত। যদি কোন কর্তৃত্বের বৈধতা সম্পর্কে আদৌ কোন সন্দেহ জন্ম নেয়, তাহলে সেই কর্তৃত্বকে কার্যকরভাবে চর্চা করার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিবে।
৫। যথাযোগ্য কর্তৃত্বের অধিকারী ব্যক্তিই অন্যান্যদের নিকট কর্তৃত্ব অর্পণ করবেন; অন্য কোন ব্যক্তি নয়, কেবল তিনিই সেই কর্তৃত্ব অর্পণ করার একমাত্র অধিকারী।
৬। যে অধস্তন পর্যায়ে যে কর্তৃত্ব ফলপ্রসূ ও নিরাপদভাবে চর্চা করা যেতে পারে, সেই অধস্তন পর্যায়ে সেই কর্তৃত্ব অর্পণ করা উচিত। কার্য-নির্বাহ সংক্রান্ত বিষয়ে উদ্ভূত কোন সমস্যা কিভাবে মোকাবিলা করতে হবে, তা নির্ধারণের অধিকার যথাসম্ভব নিম্ন পর্যায়ে ন্যস্ত করা উচিত।
৭। কর্তৃত্ব অর্পণ যাতে এক যোগ্য ও প্রশিক্ষিত কর্মচারী দলের সুব্যবস্থিত বিকাশের অনুকূল ও প্রশাসনিক কার্য-নির্বাহ সংক্রান্ত পরিকল্পনা ও নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, সে উদ্দেশ্যে কর্তৃত্ব অর্পণ বাস্তবানুগ ও সুপরিকল্পিত হওয়া চাই।
৮। কর্তৃত্ব হস্তান্তরের পরে কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের স্ববিবেচনা চর্চা করার সুযোগ দেয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ যথাসম্ভব কম হস্তক্ষেপ করা যায়, সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখবেন। আবার যাতে অর্পিত কর্তৃত্বের অপব্যবহার না হয়, ঊর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ অবশ্য সেদিকেও দৃষ্টি দিবেন। অধস্তন প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ যাতে অর্পিত কর্তৃত্ব লাভ করার পর নিজেরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও উচ্চতর দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন, আবার কর্তৃত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ যাতে কর্তৃত্ব অর্পণকারী কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুসারে কাজ করেন এবং তার দ্বারা গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ যাতে প্রশাসনিক নীতি ও কার্য পরিকল্পনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়- সে দিকে কর্তৃত্ব অর্পণকারীর বিশেষ দৃষ্টি রাখা আবশ্যক।
৯। কার্যকর কর্তৃত্ব হস্তান্তর, সুষ্ঠু দায়িত্বগ্রহণ ও পরিচালনার জন্য পুরস্কার বা স্বীকৃতি প্রদানের ব্যবস্থা থাকা উচিত, এরূপ পুরস্কারের মানদণ্ড অর্থ অপেক্ষা পদোন্নতি প্রদান অনেক বেশি শ্রেয় ও কাম্য হবে বলে বিজ্ঞজনেরা মনে করেন।
Leave a comment