ব্যঙ্গার্থক ঘটনার মাধ্যমে হাস্যরস সৃষ্টির পর্যায়কে রম্য সাহিত্য বলে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮-৯৪) ঔপন্যাসিক এবং প্রাবন্ধিক। তার সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে কমলাকান্ত একটি ব্যতিক্রমধর্মী চরিত্র। এ গ্রন্থের তিনটি • অংশ। যথা: কমলাকান্তের দপ্তর, কমলাকান্তের পত্র এবং কমলাকান্তের জবানবন্দী। ১৮৭৫ খ্রি. কমলাকান্তের দপ্তর আলাদা গ্রন্থ হিসেবে প্রকাশ পায়। ১৮৮৫ সালে কমলাকান্তের সকল রচনা একত্রিত হয়ে প্রকাশিত হয়। কমলাকান্তের দপ্তর এ মানব চরিত্র সম্বন্ধে বঙ্কিমের সূক্ষ্ম দৃষ্টি ও গভীর জ্ঞান অত্যন্ত তাৎপর্যময় হয়ে উঠেছে। মানবজীবনের নানা ভুলত্রুটি নিতান্ত স্নেহকরুণ দৃষ্টিতে এখানে তুলে ধরেছেন। কমলাকান্ত চক্রবর্তী নামে এক কাল্পনিক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ প্রসন্ন গোয়ালিনীর দধিদুগ্ধে প্রতিপালিত হয় এবং নসীরাম বাবুর দেওয়া আফিং বটিকা উদরস্থ করে মাঝে মাঝে দিব্য দৃষ্টি লাভ করতেন এবং তারই ঝোঁকে আবোল তাবোল কথা বলতেন।

কমলাকান্তের ‘দপ্তর’ গ্রন্থের প্রবন্ধসমূহকে বিভিন্ন বিষয়ের আলোকে ভাগ করা যেতে পারে। যথা:
১. সমাজ বিষয়ক প্রবন্ধ- বসন্তের কোকিল, মনুষ্য ফল ইত্যাদি।
২. রাজনীতি বিষয়ক প্রবন্ধ- পলিটিকস, বাঙালির মনুষ্যত্ব ইত্যাদি।
৩. সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধ- বড় বাজার, পতঙ্গ ইত্যাদি।
৪. অর্থনীতি বিষয়ক প্রবন্ধ- আমার মন, বিড়াল প্রভৃতি।

ডি-কুইনসি ইংরেজি সাহিত্যিক ও সমালোচক। বঙ্কিমচন্দ্র কমলাকান্তের দপ্তর রচনা করেন Confessions of an Englsih Opian Eater এর অনুসরণে। মন ও মেজাজের দিক দিয়ে দু’জনের মধ্যেই সাদৃশ্যের চেয়ে বৈসাদৃশ্য বেশি। ডি-কুইনসি ব্যক্তিগত জীবনে অসুখ সারাবার জন্য আফিম ধরেন এবং ভয়ানকভাবে নেশাগ্রস্ত হয়ে অদ্ভুত স্বপ্ন দেখতে থাকেন। কমলাকান্তের ধরন ধারণ অন্যরকম। তিনি নেশা করলেও জগৎ সংসার সম্পর্কে সবসময় অবহিত, সবার প্রতিই তার একটা ঔদার্যের দৃষ্টি আছে। সমাজ ও মানুষের নানা প্রকার অন্যায় ও অসংগতিকে কমলাকান্ত উদার হাস্যের দ্বারা সহ্য করেন। কখনো তিনি নেশার ঝোঁকে বিড়ালের ডাকের মধ্যে আধুনিক সাম্যবাদের যুক্তিপূর্ণ বিতর্ক শুনতে পান, কখনো স্বদেশ প্রাণ কমলাকান্ত দেশকে মা বলে ডাকতে শেখান।

জাতির কল্যাণের জন্য বঙ্কিমচন্দ্র কমলাকান্তের ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন। সমস্ত দেশবাসীকে তিনি এসব শোনাতে চেয়েছিলেন যা ছদ্মবেশ ব্যতীত বলা যায় না। তাই কমলাকান্তকে বঙ্কিমের ছায়া বলে অভিহিত করা হয়। এজন্য গ্রন্থের রচনারীতি, রস ও চরিত্রের আবেদন বিচিত্র। তাই বঙ্কিমচন্দ্র ‘কমলাকান্তের দপ্তর’কে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে মনে করতেন। কারণ 4। এতেই তিনি ছদ্মবেশের অন্তরালে নিজের মনের কথা খোলাখুলিভাবে বলতে পেরেছেন।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।