আখ্যানকাব্য: বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে যেসব আখ্যানকাব্যের পরিচয় আমরা পাই, তা ছিল দেবদেবীর মাহাত্মজ্ঞাপক অথবা দৈব-নিরপেক্ষ নরনারীর প্রেমের উপাখ্যান। কিন্তু উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে পাশ্চাত্য আদর্শে যেসব আখ্যানকাব্য রচিত হয়েছিল, সেগুলি ছিল ইতিহাস আশ্রিত এবং স্বদেশপ্রেম ও জাতীয়তাবােধে পরিপূর্ণ। এই আখ্যানকাব্যগুলির উৎস কিংবদন্তি বা ইতিহাস হলেও এগুলিতে কবিকল্পনা স্থান পাওয়ায় কখনাে কখনাে তা সমসাময়িক হয়ে উঠেছে। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে আখ্যানকাব্যের শ্রেষ্ঠ চারজন কবি হলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩), রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮২৭-১৮৮৭), হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৩৮-১৯০৩) এবং নবীনচন্দ্র সেন (১৮৪৭-১৯০৯)। মধুসূদনের ‘তিলােত্তমাসম্ভব কাব্য’ (১৮৬০), রঙ্গলালের ‘পদ্মিনী উপাখ্যান’ (১৮৫৮), ‘কর্মদেবী’ (১৮৬২), ‘শূরসুন্দরী’ (১৮৬৮) ও ‘কাঞীকাবেরী’ (১৮৭৯), হেমচন্দ্রের বীরবাহু কাব্য (১৮৬৪), ‘চিন্তাতরঙ্গিণী’ (১৮৬১) ও ‘আশাকানন’ (১৮৭৬) এবং নবীনচন্দ্রের ‘পলাশীর যুদ্ধ’ (১৮৭৫), ‘ক্লিওপেট্রা’ (১৮৭৭) ও রঙ্গমতী’ (১৮৮০)এ বিষয়ে উল্লেখযােগ্য।

মহাকাব্য: মহাকাব্য বলতে আমরা বুঝি সেইসব আখ্যানকাব্যকে, যার মধ্যে বিশাল কালের প্রেক্ষাপটে জাতীয় জীবনের উত্থানপতনের কাহিনি বর্ণিত হয়। মহাকাব্য দু-প্রকার : (ক) আর্য মহাকাব্য বা ধ্রুপদি মহাকাব্য। যেমন রামায়ণ, মহাভারত। (খ) সাহিত্যিক মহাকাব্য যেমন-মাইকেল মধুসূদনের মেঘনাদবধ কাব্য। আলংকারিকরা মহাকাব্যের কতকগুলি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। এগুলি হল-

  • মহাকাব্যে কবির ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতির প্রকাশ না ঘটে তাতে ঘটনা ও চরিত্রের বস্তুনিষ্ঠ বর্ণনা প্রকাশিত হয়।

  • পৌরাণিক বা ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে মহাকাব্য।

  • মহাকাব্যের নায়ক হন সুখে-দুঃখে অচল, দৃঢ়চেতা এবং ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পুরুষ।

  • আটটির বেশি সর্গে বিভক্ত মহাকাব্যের কাহিনি স্বর্গ মর্ত্য-পাতাল জুড়ে রচিত হয়।

  • গাম্ভীর্যপূর্ণ কাব্যভাষায় রচিত মহাকাব্যে বীররস ও করুণরসের প্রাধান্য থাকে।

উনিশ শতকের মহাকাব্য: উনিশ শতকে যেসব আখ্যানকাব্য সাহিত্যিক মহাকাব্যে উন্নীত হয়েছে, সেগুলি হল হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৃত্রসংহার (দুই খণ্ড ১৮৭৫ ও ১৮৭৭), নবীনচন্দ্র সেনের ত্রয়ীকাব্য—’রৈবতক’ (১৮৮৭), ‘কুরুক্ষেত্র’ (১৮৯৩) ও ‘প্রভাস’ (১৮৯৬) এবং মাইকেল মধুসূদনের ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ (১৮৬১)।

লিরিক বা গীতিকবিতা: কবি মনের আবেগ-অনুভূতি-কল্পনা ছন্দময়ভাবে প্রকাশিত হয় যেসব কাহিনিবিহীন কবিতায়, সংক্ষেপে তাই-ই হল লিরিক বা গীতিকবিতা। গীতিকবিতার বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উক্তি এই প্রসঙ্গে উল্লেখযােগ্য- “বক্তার ভাবােচ্ছাসের পরিস্ফুটতামাত্র যাহার উদ্দেশ্য সেই কাব্যই গীতিকাব্য।”

বিহারীলাল চক্রবর্তীর কাব্যচর্চা: আধুনিক বাংলা কাব্যের প্রথম গীতিকবি হলেন ভোরের পাখি বিহারীলাল চক্রবর্তী (১৮৩৫-১৮৯৪)। বিহারীলাল রচিত উল্লেখযােগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল ‘সঙ্গীত শতক’ (১৮৬২), ‘বঙ্গসুন্দরী’ (১৮৭০), ‘নিসর্গসন্দর্শন’ (১৮৭০), ‘বন্ধুবিয়ােগ’ (১৮৭০), ‘প্রেমপ্রবাহিনী’ (১৮৭১), ‘সারদামঙ্গল’, (১৮৭৯) এবং ‘সাধের আসন’ (১৮৮৯)। ‘সঙ্গীত শতক’ কাব্যে কবি তাঁর কৈশাের ও প্রথম যৌবনের অভিজ্ঞতা ও অন্যান্য ভাবনা অস্ফুটভাবে প্রকাশ করেছেন। বিহারীলাল ‘নিসর্গসন্দর্শন’ কাব্যের কবিতাগুলিতে নিসর্গ প্রকৃতিতে ব্যক্তিসত্তা আরােপ করে সচেতন কবি হৃদয়ের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে যে নবতম কাব্যশৈলীর উদ্ভাবন ঘটিয়েছেন, তা গীতিকবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। জননী-জায়া- কন্যা-ভগিনী—প্রভৃতি বিবিধ মূর্তিধারিণী নারীর স্নেহ-মায়া- মমতাময় রূপ ও সৌন্দর্যের সন্ধান করেছেন কবি বঙ্গসুন্দরী কাব্যে। আর নিজের এবং বন্ধুবর্গের জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতাকে এবং নিজের প্রেমানুভূতিকে কাব্যের আকারে রূপদান করেছেন কবি তার ‘বন্ধুবিয়ােগ’ ও ‘প্রেম-প্রবাহিনী’ কাব্যদুটিতে। তবে বিহারীলালের শ্রেষ্ঠ কাব্য ‘সারদামঙ্গল’, যেখানে কবির সৌন্দর্যচেতনা, গীতিবৈশিষ্ট্য পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। ‘সাধের আসন’ কাব্যটিতে কবি সৌন্দর্যতত্ত্বের তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা করেছেন।

বিহারীলালের কাব্যপ্রতিভা: ‘ভােরের পাখি’ কবি বিহারীলালের উল্লেখযােগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল ‘সঙ্গীত শতক’ (১৮৬২), ‘বঙ্গসুন্দরী’ (১৮৭০), ‘নিসর্গসন্দর্শন’ (১৮৭০), ‘বন্ধুবিয়ােগ’ (১৮৭০), ‘প্রেমপ্রবাহিনী’ (১৮৭১), ‘সারদামঙ্গল’ (১৮৭৯) এবং ‘সাধের আসন’ (১৮৮৯)। ‘সঙ্গীত শতক’ কবির গানের সংকলন। ‘নিসর্গসন্দর্শন’ কাব্যে মানবিক প্রকৃতির সঙ্গে কবি-হৃদয়ের সম্পর্ক স্থাপন হতে দেখা যায়। প্রকৃতিকে যথাযথভাবে দেখার ফলে কবি-হৃদয়ের মুগ্ধতার পরিচয় ছড়িয়ে আছে ‘সমুদ্র-দর্শন’, ‘নভােমণ্ডল’ প্রভৃতি কবিতায়। জননী-জায়া- কন্যা-ভগিনী-প্রভৃতি বিবিধ মূর্তিধারিণী নারীর স্নেহ-মায়া মমতাময় রূপ ও সৌন্দর্যের সন্ধান করেছেন কবি বঙ্গসুন্দরী কাব্যে। নিজের এবং বন্ধুবর্গের জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং নিজের প্রেমানুভূতিকে কাব্যের আকারে রূপদান করেছেন কবি তাঁর বন্ধুবিয়ােগ’ ও ‘প্রেমপ্রবাহিনী’ কাব্যে। বিহারীলালের শ্রেষ্ঠ কাব্য হল সারদামঙ্গল’, যেখানে কবির সৌন্দর্যচেতনা ও গীতিবৈশিষ্ট্য পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। রবীন্দ্রনাথের নতুন বউঠান কাদম্বরী দেবীর অনুরােধে কবি বিহারীলাল ‘সাধের আসন কাব্য তার সৌন্দর্যভাবনার তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।

পরিশেষে বলতে হয়, বিহারীলালের কবিতার অতিআবেগ ছন্দে ও ভাষায় কিছু কিছু শিথিলতা নিয়ে এসেছে। তা সত্ত্বেও তার কবিতা বাংলা কাব্যসাহিত্যের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কারণ আখ্যানকাব্য-মহাকাব্য ধারার পর তিনিই প্রথম বাংলা কাব্যের ইতিহাসে গীতিকবিতার উৎস-মুখ খুলে দিয়েছিলেন।

সংক্ষেপে উনিশ শতকের বাংলায় নবজাগরণের পরিচয় দাও।

উনিশ শতকের নবজাগরণ বাঙালির সমাজজীবনে কী প্রভাব ফেলেছিল সংক্ষেপে তা আলােচনা করাে।

উনিশ শতকের নবজাগরণ বাংলা সাহিত্যে কী প্রভাব ফেলেছিল সংক্ষেপে তা আলােচনা করাে।

‘দিগদর্শন’ থেকে ‘সমাচার চন্দ্রিকা’ পর্যন্ত বাংলা সাময়িকপত্রের ইতিহাস সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

সম্বাদ প্রভাকর থেকে ‘বঙ্গদর্শন’ পর্যন্ত বাংলা সাময়িক পত্রের ইতিহাস সংক্ষেপে লেখাে।

সম্বাদ প্রভাকর সাময়িকপত্রের সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও গুরুত্ব লেখাে।

‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকার সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও গুরুত্ব লেখাে।

বাংলা সাময়িকপত্রের ইতিহাসে তত্ত্ববােধিনী পত্রিকার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

বাংলা সাময়িকপত্রের ইতিহাসে ‘বিবিধার্থ সংগ্রহ’ পত্রিকার গুরুত্ব আলােচনা করাে।

বাংলা সংবাদ ও সাময়িকপত্রের ইতিহাসে পরিচয় পত্রিকার গুরুত্ব আলােচনা করাে।

‘সবুজপত্র’ পত্রিকার গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য আলােচনা করাে।

আধুনিক বাংলা সাহিত্যে ‘কল্লোল’ পত্রিকার গুরুত্ব আলােচনা করাে।

সমালােচনা সাহিত্যধারার ‘শনিবারের চিঠি’ পত্রিকাটির গুরুত্ব আলােচনা করাে।

বাংলা সাময়িকপত্রের ইতিহাসে ‘ভারতী’ পত্রিকার গুরুত্ব আলােচনা করাে।

‘সাধনা’ পত্রিকার গুরুত্ব আলােচনা করাে।

‘প্রবাসী’ পত্রিকার গুরুত্ব আলােচনা করাে।

বাংলা গদ্যের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের ভূমিকা সম্পর্কে আলােচনা করাে।

ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের লেখকগােষ্ঠীর মধ্যে প্রধান‌দুজনের নাম উল্লেখ করে বাংলা গদ্যের ক্রমবিকাশে এঁদের কৃতিত্বের পরিচয় দাও।

বাংলা গদ্যের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান সম্পর্কে আলােচনা করাে।

বাংলা প্রবন্ধসাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ‘হুতােম প্যাঁচার নক্সা’র অবদান সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

বাংলা গদ্যসাহিত্যে প্যারীচাঁদ মিত্রের অবদান সম্পর্কে লেখাে।

বাংলা প্রবন্ধ-সাহিত্যের ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের অবদান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

প্রমথ চৌধুরীর দুটি গদ্যগ্রন্থের নাম লেখাে এবং তাঁর গদ্যরচনার বৈশিষ্ট্য বিচার করাে।

বাংলা গদ্যসাহিত্যে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কৃতিত্ব আলােচনা করাে।

বাংলা আখ্যানকাব্য ও মহাকাব্যসাহিত্যে মধুসূদন দত্তের অবদান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’ ও ‘ব্রজাঙ্গনা কাব্য’-এর পরিচয় দাও।

মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা কাব্যগুলির নাম লিখে তাঁর লেখা শ্রেষ্ঠ কাব্যটির বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করাে।