প্রথাগত ইতিহাসের আড়ালে শ্রমজীবী মানুষের যে অবদান সভ্যতাকে সচল রাখে তারই ইঙ্গিত রয়েছে এ কবিতায়। সাত দরজাওয়ালা থিবস তৈরির জন্য ইতিহাসে কেবল রাজাদের নামই লেখা আছে। কিন্তু যাদের কঠোর শ্রমে এর নির্মাণ সম্ভব হল, তারা চির-উপেক্ষিতই থেকে গেছে। বারবার ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েও ব্যাবিলনের যে পুনর্নির্মাণ সম্ভব হয়েছে, সে তাে আসলে শ্রমজীবী মানুষদেরই অবদান। অথচ ইতিহাস এদের অবদানের কোনাে মূল্যই দেয় না। সমৃদ্ধ লিমাকে যারা তৈরি করেছিল বা যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে তৈরি হয়েছিল চিনের প্রাচীরের মতাে বিস্ময়, সেইসব শ্রমিকের সন্ধান কেউ রাখে না। প্রথাগত ইতিহাস প্রকৃতপক্ষে এরকমই অজস্র বঞ্চনার কাহিনি। রােমকে গড়ে তুলেছিল কারা কিংবা সিজার কাদের জয় করে ইতিহাসে বিখ্যাত হয়েছেন— সেসব কথা ইতিহাসে লেখা থাকে না। বাইজেনটিয়াম সভ্যতার সমৃদ্ধির কথাই সবাই বলেছে, কিন্তু প্রাসাদের বাইরে যে মানুষেরা থাকত তাদের কথা কেউ বলেনি। উপকথার আটলান্টিস ক্রীতদাসদের ছাড়া সম্পূর্ণ ছিল না। আলেকজান্ডারের ভারত বিজয়ও সম্ভব হত না তার সৈন্যরা না থাকলে। সিজারের একার পক্ষে গলদের পরাজিত করা সম্ভব ছিল না। আর্মাডা ডুবে যাওয়ার সময়ে শুধু স্পেনের রাজা ফিলিপই নয়, সেখানকার সাধারণ মানুষও কেঁদেছিল। রােমান সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের দীর্ঘ সাত বছরের যুদ্ধ জয়ও তার একার পক্ষে কখনােই সম্ভব হত না। এভাবেই ইতিহাসের প্রতিটি ঘটনায়, বিজয়ােৎসবের ভােজর আয়ােজনে কিংবা মহামানবের প্রতিষ্ঠায় সমাজের সাধারণ মানুষের গুরুত্বকেই কবি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন।