[1] প্রাথমিক প্রতিরােধ: আলজেরিয়ায় ফরাসি অভিযানের বিরুদ্ধে ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে প্রথম সক্রিয় প্রতিরােধ গড়ে তােলেন মুহাই আদ দিন এবং তার মিত্র ওরান-এর মাখজেনরা। এই সময় মাসকারার নিকটবর্তী অঞ্চলের উপজাতিগােষ্ঠীর যােদ্ধারা মুহাই আদ্ দিনের পুত্র আবদ-আল-কাদিরের নেতৃত্বে ফরাসি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। পশ্চিমাঞ্চলের উপজাতি যােদ্ধারা কাদিরকে সমর্থন করেন। ফরাসিরা ওরান প্রদেশে কাদিরের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নিলেও ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের পর উভয় পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয়। মাক্টার যুদ্ধে আল-কাদিরের অগ্রগতি অব্যাহত থাকে।
[2] সিক্কাকের যুদ্ধ: ফরাসি জেনারেল ক্লজেল ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে ট্রেমকেন দখল করে সেখানে এক বিরাট সেনাবাহিনী নিয়ােগ করেন। এদিকে কাদির ট্রেমকেনে ফরাসি বাহিনীকে বিপর্যস্ত করে তুললে ক্লজেলের নির্দেশে ফরাসি সেনাপতি বুগিয়াড (Bugeaud) তাফনা (Tafna) নদী পর্যন্ত ফরাসি আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। বুগিয়াড ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে সিক্কাকের যুদ্ধে আল-কাদিরকে পরাস্ত করলে কাদির পিছু হঠতে বাধ্য হন।
[3] কনস্টানটইন দখল: ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে ফরাসি জেনারেল ক্লজেল কনস্টানটাইনের যুদ্ধে আলজেরিয়া বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়। এজন্য পরবর্তী অভিযানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ফরাসি সেনাপতি দ্য কমটি ডি ডামরিমন্ট। তিনি সফল অভিযান চালিয়ে ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে কনস্টানটাইন দখল করেন।
[4] আবদ-আল-কাদিরের পরাজয়: আবদ-আল-কাদির তাফনা চুক্তির (১৮৩৭ খ্রি.) মাধ্যমে আলজেরিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি ফরাসি বাহিনীর বিরুদ্ধে আবার জেহাদ ঘােষণা করেন। ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দ ধরে তিনি আলজিয়ার্স ও ওরান-এ ফরাসিদের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে যান। শেষপর্যন্ত ফরাসি সেনাপতি বুগিয়াড স্মালার যুদ্ধে আল-কাদিরের বাহিনীকে বিপর্যস্ত করেন। আল কাদির ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্স দখল করার পর থেকে ফরাসি বাহিনী আলজেরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল ক্রমাগত নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এনে সেখানে নিজেদের ঔপনিবেশিক শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত করে। আলজেরিয়ায় ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের প্রসার সম্পর্কে নীচে আলােচনা করা হল一
[1] ফরাসি শাসন প্রতিষ্ঠা: ফরাসি জেনারেল ক্লজেলের নেতৃত্বে আলজেরিয়ায় একটি সাধারণ ফরাসি প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি আলজেরিয়ার ফরাসি ঔপনিবেশিক প্রশাসনে সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের যুক্ত করার উদ্যোগ নেন। ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে অন্তত ৫০ হাজার ফরাসি এখানে এসে বসবাস শুরু করে। পরবর্তীকালে স্পেন, ইটালি, মাল্টা ও অন্যান্য দেশের মানুষও রাজধানী আলজিয়ার্স-সহ আলজেরিয়ার বিভিন্ন শহর ও উপকূলবর্তী সমভূমিতে বসবাস করতে আসে। বহু আলজেরীয় নাগরিক ফরাসি ভাষা, পােশাক, রীতিনীতি প্রভৃতি শিখে নেয়।
[2] কৃষির প্রসার: আলজেরিয়ার বহু কৃষিজমি অধিগ্রহণ করা হয়। ইউরােপীয় কৃষকরা এই জমি চাষে নেতৃত্ব গ্রহণ করে। কিছু জমিকে তুলাে চাষের জন্য চিহ্নিত করা হয়। জমিতে ব্যক্তিগত বিনিয়ােগকে উৎসাহ দেওয়া হয়। এর ফলে বছর দশের মধ্যেই আলজেরিয়ায় কৃষি, ফ্যাক্টরি, ব্যাবসা প্রভৃতি ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি লক্ষ করা যায়। দ্রুত সস্তা শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব ঘটে। ক্লজেলের পরবর্তী শাসক বার্থেজেন উপনিবেশের বিস্তারে খুব একটা আগ্রহী ছিলেন না।
[3] রােগিভাের উদ্যোগ: বার্থেজেনের পরবর্তী ফরাসি শাসক রােগিভাের আমলে আলজেরিয়ার ঔপনিবেশিক সম্প্রসারণ তীব্রতর হয়। তিনি ফরাসিদের হারানাে অঞ্চলগুলি পুনরুদ্ধার করেন এবং আলজেরিয়বাসীদের ওপর তীব্র নির্যাতন ও দমনপীড়ন চালিয়ে ঔপনিবেশিক সম্প্রসারণে অধিক সাফল্য পান।
[4] পরবর্তী অগ্রগতি: পরবর্তী ফরাসি শাসক ব্যারন ভােইরােল, আলেক্সিস ডেসমাইকেলস্ প্রমুখের আমলে আলজেরিয়ার ওরান, আরজিউ, মােস্তাগানেম প্রভৃতি অঞ্চলে ফরাসি নিয়ন্ত্রণ সম্প্রসারিত হয়।
[5] সামরিক গভর্নর নিয়ােগ: ফরাসি সরকার ঔপনিবেশিক আলজেরিয়ার শাসনভার ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে একজন সামরিক গভর্নরের হাতে তুলে দেয়। এখানে প্রথম ফরাসি গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত হন জাঁ-ব্যাপটিস্ট ডুয়েট। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে আলজেরিয়ার ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসন যথেষ্ট সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।
Leave a comment