ওজোন স্তরের ক্ষয় নিয়ন্ত্রণে 1987 খ্রিষ্টাব্দে কানাডার মন্ট্রিলে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা মন্ট্রিল প্রােটোকল নামে পরিচিত। 1990 খ্রিষ্টাব্দে লন্ডনে এবং 1992 খ্রিষ্টাব্দে কোপেনহেগেনে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলির প্রয়ােগ সুনিশ্চিত করা হয়। মন্ট্রিল সম্মেলনে গৃহীত চুক্তির সারমর্ম হল一

  • 1995 খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে সমস্ত উন্নত দেশগুলিকে সি.এফ.সি. ও হ্যালন উৎপাদন বন্ধ করতে হবে।

  • কার্বন টেট্রাক্লোরাইড (CCl৪) এবং ট্রাইক্লোরাে ইথেন (CH৩CCl৩) -এর উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বন্ধ করতে হবে।

  • ক্লোরােফলুরােকার্বনের পরিবর্ত দ্রব্য হিসেবে হাইড্রোক্লোরােফুরােকার্বন (HCFC) এবং হাইড্রোফ্লুরাে কার্বন (HFC) যৌগেরও ব্যবহার 2040 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বন্ধ করতে হবে।

উক্ত চুক্তিগুলি সঠিকভাবে কার্যকর হলে স্ট্রাটোস্ফিয়ারে ক্লোরিনের পরিমাণ হবে 4-5 ppb। 2005 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই ঘনত্বের কোনাে পরিবর্তন না হলেও ভবিষ্যতে এর ঘনত্ব অতি দ্রুত হ্রাস পাবে। ক্লোরিনের ঘনত্ব 2 ppb-তে নেমে না আসা পর্যন্ত ওজোন স্তরে ক্ষয়ের কাজ চলবে প্রায় 2075 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। বর্তমানে মন্ট্রিল পােটোকল চুক্তি কার্যকর হওয়ায় সমগ্র বিশ্বে হ্যালন উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। ওজোন স্তরের ক্ষয় প্রতিরােধের জন্য বর্তমানে যেসব প্রচেষ্টা চলেছে, সেগুলি হল

ওজোন ক্ষয়কারী পদার্থসমুদ্রের নির্গমন রোধ : উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে ওজোন ক্ষয়কারী পদার্থসমূহের বায়ুমণ্ডলে নির্গমন বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যেমন—রেফ্রিজারেটর, এয়ার কম্ডিশনার প্রভৃতি যন্ত্রে ক্লোরােফ্লুরােকার্বনের পরিবর্তে হাইড্রোজেন-সহ অন্যান্য পরিবেশের অনুকূল গ্যাসের ব্যবহার।

ওজোন ক্ষয়কারী পদার্থসমুছের পুনর্ব্যবহার : ওজোন স্তর ক্ষয় করে এমন সব পদার্থ যেগুলি ইতিমধ্যেই ব্যবহৃত হয়েছে, সেগুলি যতটা সম্ভব পুনরুদ্ধার করে বারে বারে ব্যবহারের (Recycle) চেষ্টা হচ্ছে। যেমন—অব্যবহার্য বা অকেজো রেফ্রিজারেটর থেকে CFC যৌগ পুনরুদ্ধার করে নতুন করে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ক্ষতিকর রাসায়নিক যৌগের বিকল্প উদ্ভাবন : CFC বা হ্যালােনজাতীয় ওজোন স্তর ক্ষয়কারী রাসায়নিক যৌগের বিকল্প উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে, যেগুলি বাতাসে নির্গত হলেও কোনােভাবে ওজোন স্তরের ক্ষতিসাধন করবে না।

ওজোন ক্ষয়কারী পদার্থসমূহের উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ : ওজোন ক্ষয়কারী পদার্থসমূহের ব্যবহার ও উৎপাদন ধীরে ধীরে কমিয়ে এনে শেষে একেবারেই বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

আধুনিককালে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, নাইট্রোজেন অক্সাইড, ক্লোরাে্ুরােকার্বন, জলীয়বাল্প ইত্যাদি গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রাতিরিক্ত ঘনত্ব বৃদ্ধির জন্য এই গ্যাসগুলি মিলিতভাবে বায়ুমণ্ডলে চাদোয়ার মতাে একটি গ্যাসীয় স্তরের সৃষ্টি করে এবং এই স্তর গ্রিনহাউসের মতাে আচরণ করে। এর ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির ঘটনাকে গ্রিনহাউস প্রভাব বলে।

সাধারণভাবে বায়ুমণ্ডলের স্বাভাবিক গ্যাসীয় অবস্থায় পৃথিবী ক্ষুদ্র তরঙ্গের সৌরবিকিরণ থেকে যে পরিমাণ তাপ গ্রহণ করে, সেই পরিমাণ তাপকে পৃথিবীপৃষ্ঠ দীর্ঘ তরঙ্গের বিকিরণের মাধ্যমে মহাশূন্যে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। এভাবে পৃথিবী উত্তাপের সমতা বজায় রাখে।

কিন্তু গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির ঘনত্ববৃদ্ধির জন্য বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ক্ষুদ্র তরঙ্গের সৌরবিকিরণ অতি সহজেই পৃথিবীপৃষ্ঠে প্রবশে করতে পারলেও পার্থিব বিকিরণ রূপে দীর্ঘ তরঙ্গের সবটাই মহাশূন্যে ফিরে যেতে পারে না। এর কিছু অংশ এইসব গ্রিনহাউস গ্যাস দ্বারা আবদ্ধ ও শােষিত হয়। এই শােষিত তাপ পুনরায় বিকিরণের মাধ্যমে পৃথিবীপৃষ্ঠে ফিরে আসে ও বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে। ফলে, সারা পৃথিবীর তাপমাত্রা স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে বেশি থাকে। এটি বিশ্ব উন্মায়ন নামে পরিচিত।