বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে 15 থেকে 30 কিমি উচ্চতায় রয়েছে। পুরু ওজোন গ্যাসের স্তর। এখানে ওজোন গ্যাসের ধ্বংস ও সৃষ্টি—দুইই ঘটে থাকে। তবে এই গ্যাসের সৃষ্টি অপেক্ষা ধ্বংসের পরিমাণ বেশি হলে ওজোন স্তর পাতলা বা ক্ষয় হতে থাকে। ওজোন গ্যাসের বিনাশ ঘটে যেসব কারণে সেগুলি হল一

(১) প্রাকৃতিক কারণ : সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির উপস্থিতিতে একটি ওজোন কণার (O৩) সঙ্গে একটি অক্সিজেন পরমাণুর (O) আলােক রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে ওজোন ধ্বংস হয়। এই বিক্রিয়ায় ওজোন কণাটি অক্সিজেন অণুতে পরিণত হয়। প্রকৃতিতে ওজোন গ্যাসের ধ্বংস ও সৃষ্টি খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।

(২) মনুষ্যসৃষ্ট কারণ : মানুষের বিবিধ কাজকর্মের ফলে বিভিন্ন গ্যাস উৎপন্ন হয়, যেমন জীবাশ্ম জ্বালানির দহন থেকে নাইট্রোজেন অক্সাইডসমূহ (NOx,), পারমাণবিক বিস্ফোরণের ফলে বাতাসে নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড (NO২,) বৃদ্ধি, কারখানার চিমনি থেকে সালফেট এরােসল, হিমায়ন যন্ত্রে ব্যবহৃত CFC-11, 12, 22, 113, হ্যালােন ইত্যাদি গ্যাস। এসব গ্যাসের সঙ্গে O৩, র বিক্রিয়া ঘটলে ওজোন গ্যাসের বিনাশ ঘটে।

বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব 200 ডবসন একক (1 ডবসন একক = প্রতি বর্গসেমি স্থানে 2.69 x 10১৬ ওজোন অণু) অপেক্ষা আরও কমে গিয়ে ওজোন স্তরের ক্ষয় বা পাতলা হয়ে যাওয়াকে ডক্টর জি.সি. ফারমেন ওজোন গহ্বর বলে আখ্যা দিয়েছেন। প্রতিবছর সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসে (দক্ষিণ গােলার্ধের বসন্তকালে) অ্যান্টার্কটিকার ওপরে স্ট্রাটোস্ফিয়ারে এই গ্যাসের ঘনত্ব অনেক কমে গিয়ে ওজোন গহ্বর সৃষ্টি হয়। এই গহ্বর যেভাবে সৃষ্টি হয় তা নীচে আলােচনা করা হল一

প্রথম পর্যায়ে : শীতকালে সূর্যের অনুপস্থিতিতে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা দ্রুত হ্রাস পায়। ফলে দক্ষিণ মেরুর চতুর্দিকে ঘূর্ণায়মান পশ্চিমা বায়ুর গতিবেগ খুব বেড়ে যায় এবং এর কেন্দ্রে একটি আবর্তের (Vortex) সৃষ্টি হয়। এই আবর্তের মধ্যস্থিত বাতাসের গতিবেগ 300 কিমিরও বেশি হয়। ফলে আবর্ত মধ্যস্থিত বায়ু চারপাশের বায়ু থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং তখন বায়ুর উয়তা অধিক মাত্রায় হ্রাস পেয়ে নেমে আসে –80 °সে.।

দ্বিতীয় পর্যায় : এই পর্যায়ে স্ট্রযাটোাস্ফিয়ারে মেঘের (Polar Stratospheric Cloud – PSC) সৃষ্টি হয়। জল ও নাইট্রিক অ্যাসিড ঘনীভূত হয়ে নাইট্রিক অ্যাসিডের ট্রাইহাইড্রেট (HNO3, 3H,0) কেলাসরূপে এই মেঘে অবস্থান করে। এই সময় স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওজোন স্তরে ক্লোরিন নাইট্রেট (CIONO,) এবং হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCl) নিষ্ক্রিয়ভাবে আবর্তের চারিদিকে অবস্থান করে।

তৃতীয় পর্যায় : হাইড্রোজেন ক্লোরাইডের সঙ্গে ক্লোরিন নাইট্রেটের সংঘাত ঘটলে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় আণবিক ক্লোরিন (Cl২) গ্যাস উৎপন্ন হয়।

শেষ পর্যায় : বসন্তের প্রথমে সূর্যের আবির্ভাবে আণবিক ক্লোরিন অতিবেগুনি রশ্মির দ্বারা ভেঙে গিয়ে পারমাণবিক ক্লোরিনে (CI) পরিণত হয়। এই ক্লোরিন পরমাণু ওজোন অণুকে অক্সিজেন (0২) এবং ক্লোরিন মনােক্সাইডে (ClO) পরিণত করে।

 এভাবে ওজোন অণুর বিয়ােজনের ফলে স্ট্রাটোস্ফিয়ারের নীচের দিকে ওজোন স্তর পাতলা হয় এবং এই স্তর ক্রমাগত পাতলা হতে হতে একসময় ওজোন গম্বর সৃষ্টি হয়।