ঐতিহাসিক উপন্যাস ইতিহাস থেকে গৃহীত তথ্য। এখানে ঔপন্যাসিক সবসময় ইতিহাসের দিকে নজর রাখেন। কিন্তু ঐতিহাসিক রােমান্সে লেখক ইতিহাসের থেকে তথ্য সংগ্রহ করলেও তার মধ্যে নিজের কল্পনা শক্তি প্রয়ােগ করেন। ঐতিহাসিক উপন্যাসে নায়ক নায়িকা সব ইতিহাসশ্রিত। কিন্তু ঐতিহাসিক রােমান্সে উপন্যাসের প্রয়ােজন অনেক অনৈতিকহাসি চরিত্র প্রয়ােগ করতে পারেন। ঐতিহাসিক রােমান্সে বাস্তবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেশি নয়। কিন্তু ঐতিহাসিক উপন্যাসে বাস্তবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেশি। ঐতিহাসিক রােমান্সের পাঠ করলে আমাদের মনে এক রহস্যময় আনন্দানুভূতির সৃষ্টি হয় কারণ সেখানে যুদ্ধ বিগ্রহের কাহিনি কম, আছে প্রেমের কাহিনি বেশি করে, কিন্তু ঐতিহাসিক উপন্যাসে প্রেমের কাহিনির থেকে যুদ্ধ বিগ্রহের কাহিনি তুলনা মূলক বেশি। ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখতে গেলে ইতিহাসের যুগকাল রীতিনীতি আচার-ব্যবহার প্রভৃতি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হয়। কিন্তু ঐতিহাসিক রােমান্সে এগুলি নিখুঁতভাবে না মানলেও চলে। ঐতিহাসিক উপন্যাস যেমন— ‘রাজপুত জীবন সন্ধ্যা’, ‘রাজ সিংহ’, ‘লালকেল্লা’ ইত্যাদি। ঐতিহাসিক রােমান্স যেমন— ‘দূর্গেশ নন্দিনী’, ‘কপাল কুণ্ডলা’, প্রভৃতি।

চন্দ্রশেখরকে ইতিহাসাশ্রয়ী রােমান্স উপন্যাস বলা যেতে পারে। কারণ চন্দ্রশেখরের স্থান কাল সব ইতিহাস থেকে নেওয়া এবং এর পাত্র পাত্রী ও ইতিহাস দ্বারা পুষ্ট। এর কাহিনি ও আচার ব্যবহার ইতিহাসাশ্রিত। তবুও চন্দ্রশেখর কে ঐতিহাসিক উপন্যাসরূপে চিহ্নিত করা যায় না। বঙ্কিমচন্দ্র নিজেই এ বিষয়ে সচেতন ছিলেন, ‘রাজা সিংহে’র ভূমিকা অংশে তাঁর উক্তিটিই তার প্রমাণ— “পরিশেষে বক্তব্য যে, আমি পূর্বে কখনও ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখি নাই।”

‘‘দূর্গেশনন্দিনী’ বা চন্দ্র শেখর বা সীতরামকে ঐতিহাসিক উপন্যাস বলা যাইতে পারে না। এই প্রথম ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখিলাম। ‘চন্দ্রশেখর’ কে যদি কোন ও বিশেষ ধরনের উপন্যাস রূপে চিহ্নিত করতে হয়, তবে তাকে ইতিহাসাশ্রয়ী রােমান্স এই আখ্যা দেওয়া ছাড়া আমাদের কোনও উপায় থাকে না।