ভূমিকাঃ নীতিবিদ্যা সমাজে বসবাসকারী মানুষের আচরণ সম্পৰ্কীয় বিজ্ঞান। নীতিবিদ্যার আচরণে বিচার বিবেচনামূলক এবং নির্বাচনে-এর মাধ্যম হিসেবে দেখানাে হয়েছে। আচরণের এমন সব ক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে যা আপনা আপনি হয়। যাকে ঐচ্ছিক ক্রিয়া বলা হয়। নীতিবিদ্যার আলােচনায় এর গুরুত্ব অপরিসীম।
ঐচ্ছিক ক্রিয়াঃ আমাদের কতকগুলাে ক্রিয়ার মধ্যে আমরা এমন সব ক্রিয়া সম্পাদন করি যার সামনে একটি উদ্দেশ্য ও নির্দিষ্ট লক্ষ্য কাজ করে এবং ব্যক্তি তার পছন্দ বিচার বিবেচনার মাধ্যমে তা সম্পাদন করে এমন সব ক্রিয়াকে নীতিবিদ্যায় ঐচ্ছিক ক্রিয়া বলা হয়।
অধ্যাপক লিলি বলেন, “ঐচ্ছিক ক্রিয়া এমন এক ক্রিয়া যা মানুষ ইচ্ছা করলে ভিন্নভাবে সম্পাদন করতে পারে। যেমনঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের একটিই উদ্দেশ্য থাকে যে ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে এবং ভাল বিষয় পেতে হবে। যার মূল লক্ষ্য হলাে ভবিষ্যতে ভাল চাকরি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা।
ঐচ্ছিক ক্রিয়ার স্তরঃ ঐচ্ছিক ক্রিয়াকে বিশ্লেষণ করলে আমরা এর কয়েকটি স্তর পাই। এই স্তরগুলােকে মােটামুটি তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
(ক) মানসিক স্তর।
(খ) লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আঙ্কিক ক্রিয়া ও পেশীগত সঞ্চালনের স্তর।
(গ) ফলাফলের আকারে পরিসমাপ্তি।
(ক) মানসিক স্তরঃ ঐচ্ছিক ক্রিয়ার মানসিক স্তর সম্পাদিত হয় মনস্তাত্ত্বিকভাবে। এর উৎপত্তি মূলত প্রেষণা চক্রের মতােই। এর কয়েকটি ধাপ রয়েছে। যেমন-
১. অভাব;
২. কামনা;
৩. পরিকল্পনা;
৪. যুক্তি;
৫. বিচার বিবেচনা;
৬. সিদ্ধান্ত।
(খ) লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আঙ্কিত ক্রিয়া ও পেশীগত সঞ্চালন স্তরঃ এই পর্যায়ে এসে ব্যক্তিকে কোনাে উদ্দেশ্য সাধনে তার অঙ্গপ্রতঙ্গ পরিচালনা করতে হয়। যেমন- প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার জন্য মানসিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে থাকলে চলবে না বরং তাকে শারীরিকভাবে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হবে এবং লক্ষ্য পূরণে আনুষঙ্গিক ক্রিয়া সম্পাদন করতে হবে।
(গ) বাস্তবায়নের স্তরঃ এটি ঐচ্ছিক ক্রিয়ার শেষ স্তর। এই স্তরে এসে কাম্যবস্তু লাভের পর ব্যক্তির মধ্যে কতকগুলাে পরিবর্তন সাধিত হয় এবং তৃপ্তি লাভের পর ব্যক্তি বিশ্রাম নেয়।
উপসংহারঃ ঐচ্ছিক ক্রিয়ার স্বাভাবিক সম্পাদনে মানসিক ক্রিয়ার বিভিন্ন স্তরগুলাের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং মানুষের কাম্য উদ্দেশ্য গঠনে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
Leave a comment