অথবা, এরিস্টটল দাস প্রথা সম্পর্কে যে যুক্তি দিয়েছেন, তা সংক্ষেপে লিখ।
ভূমিকাঃ দাসপ্রথা প্রাচীন গ্রিক সভ্যতার অনিবার্য ফসল। মধ্যযুগের মানবশ্রেণীর মধ্যে তা বিদ্যমান এবং আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায়ও কমবেশি পরিলক্ষিত। এরিস্টটল দাস প্রথাকে সমর্থন করে বলেছেন, নাগরিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যে সকল যন্ত্র বা সরঞ্জাম প্রয়ােজন প্রয়ােজন হয় ক্রীতদাস সেরূপ এক যন্ত্র।
দাস প্রথার পক্ষে এরিস্টটলের যুক্তিঃ এরিস্টটল শুধু দাস প্রথাকে সমর্থন করেননি বরং যুক্তির ম্যারপ্যাঁচে একে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে বলিষ্ঠ যুক্তিও দাঁড় করিয়েছেন। তিনি দাস প্রথার সপক্ষে যে সকল যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন তা নিম্নরূপ-
(১) প্রকৃতির বিধানঃ প্রকৃতির ভেতর এক শ্রেণীকে প্রভু আর শ্ৰেণীকে দাস হিসেবে তিনি দেখতে পেয়েছেন। এ ব্যাপারে তার যুক্তি হলাে- শাসন কাজই হােক আর নেতৃত্বই হােক সবকিছুতেই উত্তম কর্তৃক অধমের ওপর কর্তৃত্ব থাকবে। এটা প্রকৃতির বিধান।
(২) পরিবার গঠনের দিক থেকেঃ পরিবার গঠনের দিক থেকে তিনি তিনটি অপরিহার্য উপাদানকে চিহ্নিত করেছেন। তা হলো- প্রভু দাস, স্বামী-স্ত্রী এবং পিতা-সন্তান। ছােট পরিবারে প্রভু, স্বামী ও পিতা একই ব্যক্তির মাঝে সমন্বিত হয়। কিন্তু বড় পরিবারে তা নাও হতে পারে। পরিবার সৃষ্টির জন্য একজন নারী ও পুরুষের একত্রে বসবাসকে তিনি যথেষ্ট মনে করেননি। তার দৃষ্টিতে পরিবারে দাসের উপস্থিতি অপরিহার্য।
(৩) জ্ঞান ও প্রতিভার ভিন্নতার কারণেঃ এরিস্টটল প্রকৃতিক নিয়মে দাস প্রথাকে সমর্থন করেছেন। সমাজে কিছু লােক প্রজ্ঞার অধিকারী এবং সেই প্রজ্ঞার বলে তারা শুধু আদেশ প্রদানেই সক্ষম।
(৪) সম্পদ ও যন্ত্রঃ সম্পদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে তিনি বলেন গৃহের ভেতর ও বাইরে পরিবারের প্রয়ােজনীয় সবকিছুই সম্পদ। তিনি সম্পদের অপর নাম দিয়েছেন যন্ত্র। তার সজীব ও নির্জীব যন্ত্রের মধ্যে দাসকে সজীব যন্ত্রে বা সম্পদে গণ্য করেছেন। আর জীবনযাপনের জন্য সম্পদ অপরিহার্য, তাই দাসও অপরিহার্য। আর দাস প্রভুর সেবায় নিয়ােজিত থাকবে।
(৫) সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রয়ােজনঃ দাস প্রথা বিদ্যমান থাকলে প্রভু রাজনৈতিক, সামাজিক ও নৈতিক ক্ষেত্রে অধিক সময় ব্যয় করতে পারেন। সংসারজীবন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় প্রভু ও দাসদের সম্মিলিত কর্ম প্রচেষ্টায়। প্রভুদের রয়েছে মানসিক বল এবং দাসদের রয়েছে দৈহিক ক্ষমতা।
(৬) শক্তি ও গুণের দিক থেকেঃ যাদের শক্তি ও গুণ আছে তারাই দেশ শাসনের যােগ্য। এ কারণে যুদ্ধবন্দীদেরকেও দাসে রূপান্তরিত করতে এরিস্টটল মতামত প্রদান করেন। যদিও এদের মাঝে অনেক প্রভুত্ব থাকতে পারে। কিন্তু শক্তিধরেরাই দেশ শাসনের অধিকারী নীতির ভিত্তিতেই এসব প্রভুরা দাসে পরিণত হয়।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, এরিস্টটলের দাস প্রথা বিদ্যমান না থাকলেও আমরা আজও শাসক ও শাসিতের সন্ধান পাই। একশ্রেণীর লােক আজও মানবেতর জীবনযাপন করছে এবং অপর শ্রেণী কর্তৃক তারা ব্যবহৃত হচ্ছে। সাদা আর কালাে মানুষের মাঝে পার্থক্য করা হচ্ছে।
Leave a comment