অথবা, এরিস্টটলের সরকারের ব্যবস্থার শ্রেণীবিভাগ সংক্ষেপে লিখ।
ভূমিকাঃ রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে যেসব মনীষীর নাম সর্বাধিক উল্লেখযােগ্য তাদের মধ্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল অন্যতম। এরিস্টটল যেসব গ্রন্থ রচনা করেছেন, সেগুলাের মধ্যে ‘The Politics’ সর্বাধিক উল্লেখযােগ্য। ‘The Politics’ এরিস্টলের মূলগ্রন্থ। কেননা এগ্রন্থের মধ্যে যাবতীয় রাষ্ট্রচিন্তার পূর্ণ বিকাশ সাধিত হয়েছে। The Politics গ্রন্থের তৃতীয় পুস্তকের চতুর্থ অধ্যায় সরকারের শ্রেণীবিভাগের ওপর আলােকপাত করেন।
সরকারের শ্রেণীবিভাগঃ এরিস্টটল সরকারের শ্রেণীবিভাগ করেছেন দু’টি নীতির ওপর ভিত্তি করে। যথা (ক) সংখ্যা নীতি; (খ) উদ্দেশ্যনীতি। নিম্নে তা আলােচনা করা হলাে-
(১) সংখ্যানীতিঃ সংখ্যানীতি অনুসারে রাষ্ট্রের চরম ক্ষমতা কতজন ব্যক্তির নিকট থাকবে সে বিষয়টা নির্ধারণ করা হয়। যথা- একজনের শাসন, কয়েকজনের শাসন এবং বহুজনের শাসন। সংখ্যানীতি অনুসারে রাষ্ট্রের চরম ক্ষমতা একজনের হাতে থাকলে, তাকে একজনের শাসন, কয়েকজনের হাতে থাকলে তাকে কয়েকজনের শাসন এবং বহুজনের নিকট থাকলে তাকে বহুজনের শাসন বলে।
(২) উদ্দেশ্য নীতিঃ এরিস্টটল উদ্দেশ্য নীতি অনুসারে সরকারকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন। যথা- (১) স্বাভাবিক সরকার; (২) বিকৃত সরকার।
(১) স্বাভাবিক সরকারঃ যে সরকার জনগণের কল্যাণের জন্য পরিচালিত হয়, তাকে স্বাভাবিক সরকার বলে। এ সরকারকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা- রাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র ও মধ্যতন্ত্র বা পলিটি।
(২) বিকৃত সরকারঃ যে সরকার জনগণের স্বার্থে পরিচালিত না হয়ে নিজস্বার্থ, শ্রেণী স্বার্থ কিংবা গােষ্ঠী স্বার্থে পরিচালিত হয়, তাকে বিকৃত সরকার বলে। যেমন- স্বৈরতন্ত্র, ধনিকতন্ত্র ও গণতন্ত্র।
পরিশেষঃ আলােচনার পরিশেষে বলা যায় যে, এরিস্টটল সরকারের যে শ্রেণীবিভাগ করেছেন তা প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তিনি সরকারকে যে দু’টি নীতির আলােকে শ্রেণী বিন্যাস করেছিলেন তা সত্যিই অবিস্মরণীয়। তিনি সরকারের শ্রেণীবিভাগগুলাের মধ্যে মধ্যতন্ত্র বা পলিটের সমর্থক ছিলেন।
Leave a comment