‘কিন্তু অনুপমা মণি নয়’—উৎস নির্দেশ করো। মণি ও অনুপমা কে কে? তাদের পার্থক্য কোথায়?
আলোচ্য অংশটি জগদীশ গুপ্তের “পয়োমুখম্” নামক গল্প থেকে উদ্ধৃত।
আলোচ্য গল্পের মণি হল ভূতনাথের প্রথম পক্ষের স্ত্রী। আর অনুপমা হল দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। মণির মৃত্যুর পর ভূতনাথ অনেক ওজর আপত্তির পর বিয়ে করে অনুপমাকে।
মণি ছিল ছেলেমানুষ মেয়ে। ভূতনাথ জোরে কথা বললেই সে ভয় পেত। সে ছিল ভূতনাথের অনুগত। শাশুড়ীর বাধ্য। কিন্তু অনুপমা তা নয়। অনুপমা ভূতনাথকে বিদ্রূপ করে। শাশুড়ীর ওপর খরদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বুঝিয়ে দেয়, সে অত সহজ মেয়ে নয়। ভূতনাথ ধমক দিলে সে ধমকের প্রতিধ্বনি যা সঙ্গে সঙ্গে ফিরে আসে তা মূলধ্বনিকে বহু নিচে ফেলে আসে। মণির কাছে ভূতনাথ অতি সহজ ছিল। কিন্তু অনুপমার কাছে ভূতনাথকে প্রায়শই অপ্রস্তুত হতে হয়।
‘বৌমাকে বিশেষ যত্ন আত্তি করো। ওঁর লক্ষ্মীর অংশ প্রবল’— কে কাকে এই কথা বলেছিলেন? ‘বৌমা’ বলে কাকে বলা রছে? ‘ওঁর লক্ষ্মীর অংশ প্রবল’ কথাটির তাৎপর্য কী?
আলোচ্য কথাটি জগদীশ গুপ্তের “পয়োমুখম” নামক গল্পের কৃষ্ণকান্ত, মাতঙ্গিনীকে বলেছিলেন। এখানে বৌমা বলতে ভূতনাথের দ্বিতীয় পক্ষের পত্নী অনুপমাকে বোঝানো হয়েছে।
ভূতনাথের পিতা কৃষ্ণকান্ত ছিলেন অর্থের কাঙাল—অর্থপিশাচ বলতে যা বোঝায় সেই ধরনের লোক অনুপমার সঙ্গে ভূতনাথের বিয়ে দেবার সময় তিনি পণও নিয়েছিলেন। কবিরাজী ছিল তাঁর মূল পেশা। তবে কবিরাজী ছাড়াও ছোটোখাটো ব্যবসায় তিনি পয়সা লাগাতেন। কিছুদিন পাটের ব্যবসায় পয়সা লাগিয়েছিলেন। এবার দু’হাজার টাকা মুনাফা হয়েছিল। তাঁর ধারণা হয়েছিল নতুন বৌ অনুপমার কল্যাণেই তিনি লাভের মুখ দেখেছেন। তাই বৌমার আয় পয় ভালো ভেবে, বৌমাকে যত্ন-আত্তি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মাতঙ্গিনীকে।
“ভূতনাথ নতুনতর একটা আঘাত পাইল”—উৎস নির্দেশ করো। ‘নতুনতর আঘাত’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
আলোচ্য অংশটি জগদীশ গুপ্তের “পয়োমুখম” নামক গল্প থেকে উদ্ধৃত।
ভূতনাথের প্রথম পত্নী মণির মৃত্যুর পর অনেক ওজর আপত্তির পর ভূতনাথ অনুপমাকে বিবাহ করতে সম্মত হয়েছিল। অনুপমা উদ্ভিন্ন নিটোল যৌবনা, আরক্ত গণ্ডতট, মুক্তমালার মতো দন্তপাতি, ফুল্ল অধরপুট। মণি ছিল নিতান্তই বালিকা, কিন্তু বাধ্য। অনুপমার ছিল দাপট। সেই দাপটের কাছে ভূতনাথ অভিভূত হয়ে থাকতো। প্রায়ই তাকে বিদ্ধ হতে হত খর তীক্ষ্ণ বিদ্রূপের বাণে। মণির মতোই দু-একদিনের ভেদ বমির পর অনুপমার মৃত্যু হলে, ভূতনাথ নতুন করে আঘাত পেয়েছিল। মণি ছিল তার খেলার সামগ্রী, স্নেহের জিনিস, মিষ্ট দৌরাত্ম্যের পাত্রী। কিন্তু অনুপমা তার যৌবনের সহচরী। অনুপমার নিরূপম রূপ-দীপালির চতুর্দিকে যৌবনের যে রাস আয়োজন দিন-দিন অপর্যাপ্ত নিবিড় হয়ে উঠেছিল, তাঁরই আবেদন ভূতনাথের বুকে রক্তে দুর্নিবার জাগরণ এনে দিয়ে গেছে। অনুপমার সমস্ত অকারণ অতৃপ্ত তৃয়ার খরতাপে বাষ্প হয়ে দেখতে দেখতে ভূতনাথের মনোরাজ্য থেকে অদৃশ্য হয়ে তার চোখের সামনে জ্বলতে থাকতো অনুপমার ইন্দ্রজালের আলোকোৎসবের মতো রূপ, আর চির-বিলসিত বসন্তের কুসুমোৎসবের মতো যৌবন। তাদের অভাবে ভূতনাথের আদিগন্ত শুষ্ক কর্কশ হয়ে গেল।
“এবার মধুসূদন তাঁহার ডাকে বিচলিত হইয়া প্রাণ রক্ষার দূত পাঠাইয়া দিলেন”—উৎস নির্দেশ করে বিষয়টি ব্যাখ্যা করো।
আলোচ্য অংশটি জগদীশ গুপ্তের “পয়োমুখম” নামক গল্প হইতে উদ্ধৃত।
আলোচ্য গল্পের অন্যতম অবলম্বন ভূতনাথের স্ত্রী ভাগ্য ভালো ছিল না। দু-দুবার বিয়ে করার পর তার স্ত্রীদ্বয় একইভাবে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অস্বাভাবিক ভেদ বমি করতে করতে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে যায়। তাদের অকাল প্রয়াণে মাতঙ্গিনী নিতান্তই ব্যথিত হয়েছিলেন। এরপর ভূতনাথের তৃতীয় পক্ষের ক্ষেত্রেও যখন দেখা গেল সেই জ্বর শুরু হল, তখন ভূতনাথের মা মাতঙ্গিণী মনপ্রাণ দিয়ে মধুসূদনকে ডাকতে লাগলেন। তিনি আগের দুই বউকে নিজের পেটের মেয়ের মতোই স্নেহ করতেন। ভূতনাথের তৃতীয়পক্ষ বীণাপাণিও তাঁর স্নেহ বঞ্চিত ছিল না। তাই তিনি বীণাপাণির আরোগ্য কামনায় ভগবানের কাছে আকুল প্রার্থনা করতে লাগলেন।
ভূতনাথ দিনকতক হল কিছু রহস্য অনুমান করতে পারছিল। তার শ্বশুর মাসে মাসে তার পিতাকে বীণাপাণির গায়ের রঙ কালো বলে দশ টাকা পাঠাতেন। ভূতনাথ তার পিতার অর্থলোলুপতার কথা জানতে পেরে সে অর্থের আমদানি বন্ধ করে দিয়েছিল। এই সময় সে অনুমান করেছিল, পিতার অর্থলোলুপতাই তার দুই স্ত্রীর মৃত্যুর কারণ। সম্ভবত তিনিই ওষুধের বদলে বিষ প্রয়োগ করে দুটি নিরীহ বধূকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন। তাই এই বারে বীণাপাণির অসুখ করলে ভূতনাথ প্রচ্ছন্নে পিতার কার্যকলাপ লক্ষ করছিল। একদিন দুপুরবেলা কৃষ্ণকান্ত বীণাপাণিকে ওষুধ দিয়ে এলে ভূতনাথ সঙ্গে সঙ্গে বীণাপাণির ঘরে গিয়ে সে ওষুধ ফিরিয়ে নিয়ে তার পিতা কৃথ্বকান্তের কাছে চলে যায়। বীণাপাণির প্রাণ রক্ষা পায় ও কৃষ্ণকান্তের ক্রূর রূপ ধরা পড়ে।
“এ বৌটার পরমায়ু আছে”—কে কাকে কথাটি বলেছে? বৌটার পরমায়ু থাকার কারণ কী?
আলোচ্য কথাটি জগদীশচন্দ্র গুপ্তের ‘পয়োমুখম’ গল্পের অন্যতম চরিত্র ভূতনাথ তার বাবা কবিরাজ শ্রীকৃষ্ণকান্তকে বলেছিল।
ভূতনাথের শ্বশুর মাসে মাসে তার পিতাকে বীণাপাণির গায়ের রঙ কালো বলে দশ টাকা করে পাঠাতেন। ভূতনাথ বুঝল কন্যার গায়ের রঙ কালো বলে তার পিতাকে মাসে মাসে জরিমানা দিতে হয়। পিতার অর্থগৃধুতা ভূতনাথের মনে এক ভয়ঙ্কর সন্দেহের জন্ম দিল যে আগেকার বধূদের মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না। বীণাপাণির হঠাৎ জ্বর হলে ভূতনাথ প্রচ্ছন্নে পিতার কার্যকলাপ লক্ষ করছিল। সন্ধ্যার পর বীণাপাণি একলা শুয়েছিল। কৃষ্ণকান্ত সেখানে এসে একটা ওষুধ দিয়ে কিছুক্ষণ পরে সেটা খেতে বলেন। তিনি চলে যেতেই ভূতনাথ বীণাপাণিকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারল যে তিনি একটা ওষুধ গিয়ে গিয়েছেন। ওষুধ বীণাপাণি খায়নি শুনে ওষুধের খলটা নিয়ে সে বেরিয়ে যায়। কৃষ্ণকান্ত তাকিয়ায় ঠেস দিয়ে পরম তৃপ্তির সঙ্গে ধূমপান করছিলেন। সহসা খলহাতে ভূতনাথের আবির্ভাবে অপরিসীম ত্রাসে অভিভূত হয়ে পড়লো। ভূতনাথ একটু হেসে বলল, ‘এ বোঁটার পরমায়ু আছে, তাই কলেরায় মরল না বাবা। পারেন তো নিজেই খেয়ে ফেলুন।’ বলে খলসমেত ওষুধ আড়ষ্ঠ কৃষ্ণকান্তের সামনে নামিয়ে রাখল। এতে বীণাপাণির প্রাণ রক্ষা পায় ও কৃষ্ণকান্তের ক্রূর রূপটি ধরা পড়ে।
Leave a comment