গ্রিসে নগর রাষ্ট্রগুলিতে কোথাও গণতন্ত্র বা কোথাও অভিজাততন্ত্র। প্রতিষ্ঠিত হয়। গণতন্ত্রের পীঠস্থান ছিল এথেন্স। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে এথেন্সে গণতন্ত্রের ভিত্তি রচিত হয়েছিল।
[1] সেলিনের সংস্কার : গণতান্ত্রিক এথেন্সে প্রথম রাষ্ট্রপতি সােলন ম্যাজিস্ট্রেট আইন বা স্থানীয় শাসন সংস্কারের দ্বারা এথেনীয় গণতন্ত্রকে সুদৃঢ় করেন। তিনিই প্রথম বংশকৌলিন্যের বদলে সম্পদের ভিত্তিতে এথেন্সের নাগরিকদের চারটি গােষ্ঠীতে (ট্রাইব) ভাগ করেন। এ ছাড়াও তিনি হেলাইয়া নামে এক গণ- আদালত গড়ে তােলেন। এখানে সাধারণ মানুষ আর্কনদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অধিকারী ছিলেন।
[2] ক্লিখিনীসের সংস্কার : সােলনের পরবর্তীকালে ক্লিসথিনীস। গােষ্ঠীভিত্তিক বিভাজনের পরিবর্তে গ্রাম (ডেমি) ভিত্তিক দশটি অঞ্চল গড়ে তােলেন। এগুলি হয়ে ওঠে স্থানীয় শাসনব্যবস্থার এক একটি একক। তিনি জন্মকৌলিন্য বা সম্পদভিত্তিক গােষ্ঠীর বদলে বাসস্থানভিত্তিক সংগঠন গড়ে তােলেন।
[3] এফিয়ালটিসের সংস্কার : এফিয়ালটিস এথেন্সে গণতন্ত্রে কিছু পরিবর্তন আনেন। তিনি আইন করে এরিওপেগাস কাউন্সিলের সমস্ত ক্ষমতা কেড়ে নেন এবং তা গণ-পরিষদ, কাউন্সিল ও গণ-আদালতের মধ্যে ভাগ করে দেন। এছাড়াও তিনি আর্কানদের রায়ের বিরুদ্ধে একলসিয়াস আপিল অধিকার দেন।
[4] পেরিক্লিসের সংস্কার: পেরিক্লিস লটারির মধ্য দিয়ে সমস্ত নাগরিককে শাসনকাজে অংশগ্রহণে সুযােগ দেন। এ ছাড়াও আর্কন পদের অধিকারীকে রাষ্ট্রের বেতনভুক কমীতে পরিণত করেন। তিনি নাগরিকদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষে এথেনীয় পিতামাতার সন্তানদেরই নাগরিক হওয়ার অধিকার দান করেন।
[5] লটারির মাধ্যমে নির্বাচন: এথেন্সে লটারির মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্যে থেকে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শাসন কর্তাদের নির্বাচিত করা হত। এর ফলে সাধারণ শ্রেণির প্রতিনিধিদের অনেকেই রাষ্ট্র পরিচালনার সুযােগ পেত। এভাবেই দরিদ্ররাও পরিষদে এবং জুরি আদালতে বসার অধিকার পেয়েছিল।
[6] গণবিতর্ক: এথেন্সে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছিল গণবিতর্ক ব্যবস্থা। রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে একলেসিয়ার অধিবেশনে বিতর্ক হত। কোনাে একটি প্রস্তাব উঠলে তার পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্কের পর তা নির্বাচিত হত পরে উপস্থিত নাগরিকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভােটের দ্বারা।
[7] জনগণের শাসন: গ্রিক শব্দ ডেমস’ ও ‘ক্রাটাসে’ থেকেই ইংরেজি ডেমােক্রেসি’ শব্দটি এসেছে। ‘ডেমস’ হল কোনাে একটি পলিসের সমস্ত নাগরিক সংখ্যা আর ‘ক্রাটাস’ হল শাসক। এই বিচারে এথেনীয় গণতন্ত্র ছিল জনগণের শাসক। শুধুমাত্র আক্ষরিক অর্থে নয় প্রকৃত অর্থেই এথেন্সে শাসনব্যবস্থা ছিল গণতান্ত্রিক। এই শাসনব্যবস্থায় দরিদ্র জনগণের একটা বড়াে অংশ যুক্ত হওয়ার ফলে গণতন্ত্রের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল বলা চলে।
Leave a comment