প্রশ্নঃ এজাহার কি? কে ইহা দায়ের করতে পারে? ইহা দায়ের করার কোন সময় সীমা আছে কি? থানায় ভারপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার এজাহার প্রাপ্তির পর ফৌজদারী কার্যবিধির বিধান অনুযায়ী কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন আলোচনা কর।
এজাহার (F. I. R): এজাহার বা প্রাথমিক তথ্য বিবরণী বলতে আমলযোগ্য অপরাধ সম্পর্কে থানায় প্রদত্ত প্রথম বিবরণকে বুঝায় যার উপর ভিত্তি করে তদন্ত কার্য শুরু হয়। সময়ের দিক দিয়ে এ বিবরণটা প্রথম দেয়া হয় বলে একে প্রাথমিক তথ্য বিবরণী বলা হয়। (The first information report is the earliest information of an offence.) এ প্রসঙ্গে ফৌজদারী কার্যাবিধির ১৫৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসারের নিকট কোন আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটন সম্পর্কে কোন সংবাদ মৌখিকভাবে প্রদান করা হলে তিনি তা লিখে তথ্য প্রদানকারীকে পড়ে শুনাবেন ও তার স্বাক্ষর নিবেন এবং লিখিতভাবে প্রদত্ত বিবরণীতে তথ্য প্রদানকারী স্বাক্ষর করবেন। এর সারমর্ম উক্ত অফিসার কর্তৃক সরকারের নির্দেশিত ফরমে লিপিবদ্ধ করবেন। এটাই প্রাথমিক তথ্য বিবরণী হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
এজাহারের শর্তাবলীঃ
১. এজাহারে যে তথ্য প্রদান করা হয় তা অবশ্য কোন অপরাধ সংঘটন সম্পর্কিত হতে হবে।
২. অপরাধটি আমলযোগ্য (cognizable) হতে হবে। আমলযোগ্য না হলে থানায় এজাহার না করে জি. ডি. এন্ট্রি করা হয়।
৩. ইহা থানায় ভারপ্রাপ্ত অফিসারের নিকট প্রদান করতে হবে।
৪. ইহা লিখিতভাবে দেয়া যায় বা মৌখিকভাবেও দেয়া যায়। মৌখিকভাবে এজাহার দেয়া হলে তা থানার কর্তব্যরত অফিসার তা লিখে নিবেন এবং লেখার পর তথ্য প্রদানকারীকে তা পড়ে শোনাবেন ও তার স্বাক্ষর বা টীপসই নিবেন৷
৫. তথ্য প্রদানকারী কর্তৃক তথ্যের সারমর্ম সরকারের নির্দেশিত আকারে রক্ষিত রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
৬. একটি অস্পষ্ট তথ্য যা পুলিশ অফিসারকে তদন্ত করতে বাধ্য করে না তা ১৫৪ ধারার অর্থে এজাহার নয়।
৭. প্রাথমিক তথ্য বিবরণী কিন্তু ১৬১ ও ১৬২ ধারা মতে পুলিশ কর্তৃক তদন্তের প্রারম্ভের প্রাপ্ত তথ্য হতে স্বতন্ত্র।
কে এজাহার দায়ের করতে পারেঃ কে এজাহার দায়ের করবে সে সম্পর্কে কোন বাঁধা ধরা নিয়ম নেই। সাধারণত যার সম্পত্তিতে বা শরীরে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সে ব্যক্তিই থানায় এজাহার দিয়ে থাকে। তবে অন্য ব্যক্তি যে অপরাধ সম্পর্কে অবহিত আছে সেও এজাহার দিতে পারে। একটি এজাহার ও একটি জি. ডি. এন্ট্রির মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করতে গিয়ে Jhantu and others v. State [1 B CR 244 ] মামলায় আদালত বলেন যে, একটি আমলযোগ্য অপরাধ সম্পর্কে তথ্য প্রদান, অভিযুক্ত করণ হচ্ছে এজাহার যা পুলিশের নিকট করা হয় এবং পুলিশ তদন্তের উদ্দেশ্যে যে কোন লোক এটা করতে পারে।
একাধিক উৎস হতে তথ্য প্রদান করা হলে সময়ের দিক দিয়ে যেটা সর্বাগ্রে প্রদান করা হয় তা এজাহার বা প্রাথমিক তথ্য বিবরণী। কোন পুলিশ অফিসার স্বতপ্রবৃত্ত হয়ে কোন অপরাধের তদন্ত করে রিপোর্ট দিলে তা এজাহার হিসেবে গণ্য হবে না, এছাড়া টেলিফোন বা স্বাক্ষরবিহীন টেলিগ্রামের মারফত কোন তথ্য প্রদান করলে তা এজাহার হিসেবে গণ্য হবে না। অবশ্য এরূপ খবর পাবার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা অপর কারো নিকট হতে তথ্য সংগ্রহ করে তাতে সে ব্যক্তির স্বাক্ষর নিলে তা এজাহার হিসেবে গণ্য হবে।
থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসারের করণীয়ঃ প্রাথমিক তথ্য বিবরণী পাবার পর থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন-
১. আমলযোগ্য অপরাধের সংবাদ প্রাপ্তির পর থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ১৫৪ ধারা মোতাবেক তা লিপিবদ্ধ করবেন তদন্তের জন্য অগ্রসর হবেন। অপরাধটি যদি আমলযোগ্য না হয় তবে তিনি তথ্যের সারমর্ম ডাইরীতে লিপিবদ্ধ করবেন এবং সংশ্লিষ্ট ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট তথ্য প্রদানকারীকে যেতে বলবেন। এক্ষেত্রে ম্যাজিষ্ট্রেটের নির্দেশ ছাড়া পুলিশ অফিসার তদন্ত করতে পারেন না। (১৫৫ ধারা)
২. আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে এজাহার পাবার পরই পুলিশ অফিসার তদন্ত করতে পারেন, এজন্য ম্যাজিষ্ট্রেটের অনুমতির প্রয়োজন হয় না, তবে ১৫৭ ধারা মোতাবেক তিনি সংশ্লিষ্ট ম্যাজিষ্ট্রেটকে এ বিষয়ে অবহিত করবেন। তবে গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে যে কোন প্রকারে সংবাদ পেলেই পুলিশ অফিসার তদন্ত শুরু করতে পারেন এজাহারের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না৷ [ ১৫৬ ধারা ]
৩. কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ করা হলে এবং অভিযোগটি গুরুতর প্রতীয়মান না হলে বা তদন্ত করার মত যথেষ্ট কারণ না থাকলে ১৫৭ (ক) (খ) ধারা মোতাবেক তদন্ত করা হতে তিনি বিরত থাকবেন। তবে বিষয়টি যথাযথভাবে তিনি এজাহারে লিপিবদ্ধ করবেন।
৪. ১৫৭ ধারা মোতাবেক পুলিশ অফিসার কর্তৃক রিপোর্ট প্রদানের পর ম্যাজিষ্ট্রেট তিনি তদন্তের নির্দেশ দিবেন বা অন্য কোন ম্যাজিষ্ট্রেট দ্বারা প্রাথমিক অনুসন্ধানের ব্যবস্থা করবেন। [ ১৫৯ ধারা ]
৫. তদন্তের স্বার্থে পুলিশ অফিসার যে কোন সাক্ষী তলব করতে পারবেন (১৬০ ধারা) এবং তার জবানবন্দী নিতে পারবেন (১৬১ ধারা) এছাড়া প্রয়োজন বোধে যে কোন স্থানে তল্লাশী করতে পারবেন। (১৬৫ ধারা)
৬. তদন্তের পর বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট রিপোর্ট প্রদান করবেন। অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হলে তিনি চূড়ান্ত রিপোর্ট (Final Report) দিবেন এবং প্রমানিত হলে অভিযোগপত্র (Charge = sheet) জমা দিবেন। এর উপর ভিত্তি করে বিচার কার্য শুরু হবে।
Leave a comment