“এখন ইহা আমাদের মতো নির্জনবাসপীড়িত সঙ্গিনীহীন মাসুল-কালেক্টরের অতি বৃহৎ এবং অতি শূন্য বাসস্থান”– উৎস নির্দেশ করো। কে এবং কেন এই কথা বলেছিল?

আলোচ্য অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোচ্য কথাটি ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ গল্পের নায়ক তথা বরীচের তুলার মাসুল কালেক্টর বলেছিল। 

মাসুল কালেক্টরের অফিস ও বাসস্থান হিসেবে হায়দ্রাবাদের নিজাম সরকার যে স্থান নির্দেশ করেছিলেন, সে স্থান প্রায় আড়াই শো বছর আগে দ্বিতীয় শা-মামুদ ভোগবিলাসের জন্যে নির্মাণ করেছিলেন। তরুণী পারশিক রমণীরা সেখানে লীলাবিলাস ভঙ্গীমায় গোলাপগন্ধী শীতলশিকর ফোয়ারার জলে স্নান করতো। স্নানের আগে শুস্তা নদীর জলে পা ডুবিয়ে এলোচুলে বসে সেতার কোলে নিয়ে গজল গান করতো। তরুণীদের হাস্যে লাস্যে নূপুর নিরূণে মুখরিত থাকতো এই নির্জন প্রাসাদ। কিন্তু এখন সেই পাষাণ প্রাসাদে সে ফোয়ারা খেলে না, সাদা পাথরের ওপর তরুণীদের কোমল চরণ পড়ে না। তরুণ মাসুল কালেক্টার সেই নির্জন বিশাল পাযাণপ্রাসাদে এসে বিগত দিনের কথা স্মরণ করে এই কথা বলেছিল।

“পরদিন প্রাতে সমস্ত ব্যাপারটি পরম হাস্যজনক বলিয়া বোধ হইল”–কার উক্তি? কোন ব্যাপারটি পরমহাস্যকর বলে বোধ হল?

আলোচ্য কথাটি ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ গল্পের নায়ক তথা বরীচের তুলার মাসুল কালেক্টর বলেছিল। শুস্তা নদীর তীরের পাষাণপ্রাসাদের নির্জনতা নায়ককে এমন আকৃষ্ট করেছিল যে, রাত্রিবাসের সময় এর বিগত দিনের ভাবনা তার মনে চিত্তবিকার ঘটিয়েছিল। সন্ধ্যার সময় তার মনে হল কয়েকজন প্রমোদচঞ্চল নারী শুস্তা নদীর জলে স্নান করতে নেমেছে। শতধারার মতো সকৌতুক কলহাস্যের সঙ্গে নায়কের পাশ দিয়ে চলে গেল। সে যে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে সে দিকে ভ্রুক্ষেপ মাত্র না করে তারা চলে গেল। শুস্তার জলে নেমে সখীরা একে অন্যের দিকে জল ছিটিয়ে স্নানের আগে খেলা করতে লাগল। তারপর একসময় হাওয়ার মতোই তারা মিলিয়ে গেল। এই দৃশ্য দেখে প্রথমে সে উত্তেজনায় অধীর হয়েছিল। কিন্তু পরের দিন সকালে বাস্তবের স্পর্শ পেয়ে গতরাতের ঘটনাকে স্মরণ করে তার চিত্তবিকারের জন্যে হাসি পেয়েছিল।

“আমার দিনের সহিত রাত্রির ভারি একটা বিরোধ বাধিয়া গেল”—মন্তব্যটি কার? এই মন্তব্যের কারণ কী?

আলোচ্য মন্তব্যটি ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ গল্পের নায়ক তথা বরীচের তুলার মাসুল কালেক্টরের।

কালেক্টার দিনের বেলা তুলার মাসুল আদায় করার কাজে নিযুক্ত থাকতো। টমটম হাঁকিয়ে অফিসে যেত। কিন্তু নির্জন প্রাসাদে দিনের বেলাঁ কাউকে কোথাও দেখা যেত না, অথচ রাত্রি হলেই শুনতে পেত কে যেন কাঁদছে, কোনো ঘরে বাদশাহী মজলিস বসেছে। দেখতে পেত সুন্দরী রমণী জরির চটি পরা শুভ্র সুন্দর চরণযুগল লাল মখমলের ওপর ন্যস্ত করে কারো জন্যে প্রতীক্ষমান। লাস্যময়ী তরুণীরা নিজেদের মতো হাস্যপরিহাসে মুখরিত। কেউ বা সেতার কোলে গীতরত। কোনো কোনো রাত তার উদ্বেগের সঙ্গে কাটতো, কোনো রাত কাটতো অদম্য প্রেম-কৌতূহলে। পরের দিন সকালে ঘুম ভাঙতো মেহের আলির ‘তফাৎ যাও, সব ঝুট হ্যায়’ চিৎকারে।—তার এই অবস্থার কথা বোঝানোর জন্যে উক্ত মন্তব্যটি সে করেছিল।

“এইরূপে আমার আরব্য উপন্যাসের এক রাত্রি অকস্মাৎ শেষ হইল”—উৎস নির্দেশ করো। বক্তা তার রাত্রিকে আরব্য উপন্যাসের সঙ্গে তুলনা করেছে কেন?

আলোচ্য অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।

বক্তা তথা ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ গল্পের নায়ক অর্থাৎ তুলার মাসুল কালেক্টার রাত্রি যাপন করতো দ্বিতীয় শা-মামুদ নির্মিত অধুনা নির্জন এক পাষাণপ্রাসাদে। সেখানে রাত্রে ঘুমের ঘোরে স্বপ্নের মতো বিগত দিনের লাস্যময়ী পারসিক তরুণীদের প্রত্যক্ষবৎ দেখতে পেত। এক রাত্রে কোনো এক সুন্দরীর ইশারায় মহলের পর মহল পেরিয়ে, একটি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সে পর্দার আড়াল থেকে কোনো এক সুন্দরীর চরণযুগল দেখেছিল। সেই দরজার সামনে খোলা তরবারি হাতে এক কাফ্রিখোজা দুই পা ছড়িয়ে দিয়ে বসে বসে ঢুলছিল। নায়ক তাকে যেই সময় ডিঙাতে গেল ঠিক সেই সময় কেই কাফ্রিখোজার ঘুম ভেঙে গেল। ঠিক সেই সময় ‘তফাৎ যাও, তফাৎ যাও’ এই বিকট চিৎকারে নায়কের ঘুম ভেঙে গেল। হঠাৎ জেগে উঠে নায়ক বুঝতে পারল সে এতক্ষণ এক অবাস্তব জগতের মধ্যে আচ্ছন্ন ছিল। পাঠকের সঙ্গে সেই জগতের উপমা দিতে সে বিগত রাত্রিকে আরব্য উপন্যাসের সঙ্গে তুলনা করেছিল।