মধুসূদনের ‘একেই কি বলে সভ্যতা?’ প্রহসনে নারীচরিত্রের সংখ্যা বেশি নয়। নবকুমারের মাতা (প্রহসনে যার কোনো নাম নেই, গৃহিণী বলা হয়েছে), নবকুমারের স্ত্রী হরকামিনী, বোন প্রসন্নময়ী, খুড়তুতো বোন নৃত্যকালী এবং তাস খেলার সঙ্গিনী কমলা। তবে প্রহসনটিতে গৃহিণী এবং হরকামিনী ব্যতীত অন্যান্য চরিত্রগুলির ভূমিকা উল্লেখযোগ্য নয়।
গৃহিণী :
প্রহসনটিতে নবকুমারের মাতা রক্তমাংসে গঠিত সজীব চরিত্র। তিনি স্বাভাবিক, স্নেহশীলা গৃহিণী ও জননীরূপে নাটকে অঙ্কিতা। তাঁর চরিত্রে অসঙ্গতি নেই বললেই চলে, তবে পুত্র-স্নেহাধিক্য প্রবল। তিনি কর্তার সঙ্গে বৃন্দাবনে থাকেন না কলকাতায় থাকেন নাটকে সে সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ইঙ্গিত নেই। তিনি প্রাচীনপন্থী রক্ষণশীল নারী। তাঁর পুত্রবধূ ও কন্যাদের আলস্য ও গল্পগুজব তিনি সহ্য করতে পারেন না। বউমা ও কন্যাদের তিনি ‘কলিকালের মেয়ে’ বলে খোঁটা দেন। সংসারে সমস্ত কিছুর প্রতি তাঁর সজাগ দৃষ্টি অথচ নবকুমারের প্রতি তাঁর কোনো শাসন নেই পুত্রস্নেহের আধিক্যে। তাঁর স্নেহান্ধতাই যে নবকুমারের পতনের অন্যতম কারণ এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। তিনি পুত্রের অপকর্মে বিশ্বাস করেন না। ‘জ্ঞানতরঙ্গিনী সভা’র নামও তাঁর জানা নেই; তিনি বলেন ‘রামমোহন রায়ের সভা’। পুত্রের গতিবিধি সম্পর্কে তিনি কোনো খোঁজখবর রাখেন না।
প্রহসনের শেষ দৃশ্যে নবকুমার নেশার ঝোঁকে উদ্ভট আচরণ করলে স্নেহময়ী মাতার উদ্বেগাকুলতা প্রবল হয়ে ওঠে। পুত্রের মুখ থেকে মদের গন্ধ বেরুলেও তিনি বিশ্বাস করতে পারেন না। তিনি ভাবেন, তাঁর ‘দুধের বাছাকে কেউ বিষ খাইয়েছে। কর্তামশায় নবকে তিরস্কার করলে তিনি ‘সোনার নবকে’ বকার জন্য বেদনা অনুভব করেছেন। কর্তামশায় যখন বলেন যে, নব মদ্যপান করেছে তখন গৃহিণী বাৎসল্যভরে বলেন- ‘আমার এ দুধের বাছাকে কে এসব শেখালে গো?’ নেশার ঘোরে নবকুমার ইংরেজি বুলি বললে তার মা মনে করেছেন, নবকে ভূতে পেয়েছে। শেষ পর্যন্ত পুত্রের অবস্থা উপলব্ধি করে তিনি কর্তার সঙ্গে বৃন্দাবনে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রহসনটির ‘গৃহিণী চরিত্রে একদিকে যেমন তার পুত্র স্নেহাধিক্য দেখিয়ে নবর পতনের পথকে দেখানো হয়েছে অন্যদিকে তাঁর এই সমস্ত শিশুসুলভ উক্তি যথেষ্ট হাস্যরসের যোগান দিয়েছে।’
হরকামিনী :
নবকুমারের স্ত্রী হরকামিনী বাস্তবধর্মী স্বাভাবিক চরিত্র, নাট্যকার তার চরিত্রে অতিরঞ্জন বা বিকৃতির প্রশ্রয় দেননি। হরকামিনী নবকুমারের স্ত্রী হলেও সে যেন প্রাচীন অন্তঃপুরিকা নারী। প্রহসনের শেষ দৃশ্যে অর্থাৎ দ্বিতীয়াঙ্কের দ্বিতীয় গর্ভাঙ্কে অন্যান্য নারী চরিত্রের সঙ্গে হরকামিনীর সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। দৃশ্যে হরকামিনী রাত্রিবেলায় তার ননদদের সঙ্গে তাস খেলছিল। শহরের ধনী মেয়েদের মতো সে আলস্যে, ক্রীড়াকৌতুকে, রঙ্গ রসিকতায়, তাসখেলায় দিনাতিপাত করে। নবর মা অর্থাৎ হরকামিনীর শাশুড়ি বৌমা ও মেয়েদের এই খেলাধুলা অপছন্দ করেন; তিনি রুষ্ট হন। শাশুড়ির গলা শুনে হরকামিনী তাসগুলি বালিশের তলায় লুকিয়ে রাখে। হরকামিনী জানে না যে তার স্বামী জ্ঞানতরঙ্গিনী সভায় গেছে; গৃহিণীর কাছ থেকে জানতে পারে। অর্থাৎ নবকুমারের সঙ্গে তার হৃদয়ের বন্ধন খুব বেশি ছিল না। হরকামিনীর সঙ্গে প্রসন্নকুমারীর রঙ্গরসিকতা তার অসংস্কৃত মনের প্রকাশ।
মদ্যপ নবকুমার যখন উচ্চস্বরে মদ আনতে বলে তখন হরকামিনী নবকুমারকে চুপ করতে বলার জন্য প্রসন্নকে অনুরোধ করে। হরকামিনীর পক্ষে পরিস্থিতি বেশ বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। এরপর হরকামিনী নবকুমারকে প্রতিনিবৃত্ত করতে গেলে সে তাকে পয়োধরী মনে করে প্রণয়সম্ভাষণ করলে হরকামিনী বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। হরকামিনী তার অর্থ বুঝতে পারেনি। অর্থাৎ হরকামিনী নবকুমারের বারাঙ্গনা-বিলাসী চরিত্রের সঙ্গে অপরিচিত।
যে নবকুমার ‘জ্ঞানতরঙ্গিনী সভায়’ স্ত্রীলোকদের শিক্ষিত করার জন্য ভাষণ দেয় তার স্ত্রী অশিক্ষিতা, অবরোধে বন্দিনী নারী। নবকুমারের পানোন্মত্ত অবস্থা, তার স্থূল রসিকতা ইত্যাদি হরকামিনীর পক্ষে অসহ্য। তাই সে বলে “আঃ সমস্ত রাতটা মুখ থেকে প্যাজ আর মদের গন্ধ ভক্ ভক্ করে বেরোবে এখন, এমন নাক ডাকুনি বোধ করি মরা মানুষও শুনলে জেগে ওঠে।” হরকামিনীর এই আক্ষেপে পাঠক/দর্শক বেদনাবোধ করে। হরকামিনীর শেষ উক্তিতে তার ব্যক্তিজীবনের বেদনা যেমন প্রকাশিত হয়েছে, তেমনি তৎকালীন বাংলাদেশের নারীর বেদনার্ততাও প্রকাশিত হয়েছে; সঙ্গে সঙ্গে তৎকালীন সামাজিক অসংগতিও আত্মপ্রকাশ করেছে–“ এমন স্বামী থাকলেই বা কী আর না থাকলিই বা কী। ঠাকুরঝি। তোকে বলতে কি ভাই, এইসব দেখে শুনে আমার ইচ্ছা করে যে গলায় দড়ি দে মরি। ছি ছি ছি। বেহায়ারা আবার বলে কী, যে আমরা সাহেবদের মতন সভ্য হয়েচি। হা আমার পোড়া কপাল! মদ্ মাস খ্যেয়ে ঢলাঢলি কল্লেই কি সভ্য হয়? – একেই কি বলে সভ্যতা?”
হরকামিনীর চরিত্র-বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে অশোককুমার মিশ্র তাঁর ‘বাংলা প্রহসনের ইতিহাস’ গ্রন্থে বলেছেন—’একেই কি বলে সভ্যতা?’ প্রহসনে নারী চরিত্রগুলির ভূমিকা কেবলমাত্র দুঃখ সহনে এবং নিদারুণ অন্তর্ব্যথায় সুদীর্ঘশ্বাস হাহাকারে। আপাতচটুল পশ্চাৎপট ব্যবহার করে মধুসূদন নবকুমারের অন্তঃপুরের যে চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন তা উনিশ শতকের স্বচ্ছল হিন্দুর পারিবারিক চিত্রকে উপস্থাপিত করেছে। ইংরাজি আদবকায়দায় অভ্যস্ত, সভ্যতাভিমানী নবকুমারের স্ত্রী হরকামিনী এই প্রহসনের সবচেয়ে দুঃখী চরিত্র। উগ্র আধুনিক আদবকায়দায় অভ্যস্ত স্বামীর প্রায় অশিক্ষিতা অন্তঃপুরচারিণী বাঙালি কুলবধূ সে। স্বামীর সঙ্গে তার মিলনের অবকাশ ঘটেনি, কারণ স্বামী জ্ঞানতরঙ্গিনী সভা থেকে যখন ফেরে— তখন সে প্রথমত, স্বাভাবিক থাকে না। দ্বিতীয়ত, স্ত্রীর সবচেয়ে লজ্জা স্বামী বারাঙ্গনা বিলাসে অভ্যস্ত হয়ে এসে তাকেও বারবিলাসিনীর মতই সম্বোধন করে। তৃতীয়ত, মদ ও পেঁয়াজের দুর্গন্ধে হরকামিনী ভীষণ অস্বস্তি বোধ করে। স্বামীর দৈনন্দিন অপকর্মের জন্যে দুঃখে তার আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে করে। এই দুঃখী অনুভবটুকু ছাড়া পরচর্চা, তাসখেলা এবং আদিরসাত্মক রসিকতার মধ্য দিয়েই ননদদের সঙ্গে সে দিন কাটায় আর পাঁচ জনের মত।”
প্রসন্নময়ী:
প্রসন্নময়ী সম্ভবত নবকুমারের আপন ভগ্নী; সে বহুপত্নীক স্বামীর পত্নী, কুলীনের ঘরে তার বিবাহ হয়েছে। ফলে তার সঙ্গে স্বামীর সম্পর্ক নেই। তার মনোবেদনার কোনো সংবাদ প্রহসনে পাওয়া না গেলেও হরকামিনী একবার বলেছিল, “তোর ভাতার তো তোকে একবার মনেও করে না”। তবে প্রসন্নময়ী যে শালীন, সামাজিক, রুচিসম্পন্না চরিত্র এমন বলা যাবে না। সেকালের শহরের ধনীগৃহের মেয়েদের যে রুচি ও শালীনতাবোধের অভাব ছিল তা মধুসূদন আলোচ্য প্রহসনে প্রসন্নময়ী চরিত্রের মাধ্যমে দেখিয়েছেন। অন্দরমহলে যে নানা চটুলতা, রঙ্গরসিকতা চলত তার পরিচয় এখানে আছে। তারা অলস আলাপ ও তাস খেলায় সময় অতিবাহিত করতো যা বাড়ির কর্ত্রীর পছন্দ ছিল না। তাসখেলায় প্রসন্নময়ী যথেষ্ট নিপুণা ছিল; তবে সে মায়ের গলা পেলে তাস লুকিয়ে ফেলত। ‘জ্ঞানতরঙ্গিনী সভা’ থেকে পানোন্মত্ত অবস্থায় ফিরে এসে নব যে সাহেবি কায়দায় প্রসন্নময়ীর গণ্ডদেশ চুম্বন করেছিল এটা তার এক লজ্জাজনক অভিজ্ঞতা। এইজন্য সে হরকামিনীর সামনে অপ্রস্তুত বোধ করে। মদ্যপ নবকুমার যখন নেশাগ্রস্ত উক্তিতে হরকামিনীকে পয়োধরী মনে করে প্রেম নিবেদন করে তখন প্রসন্নময়ী তাকে নবর প্রেমসম্ভাষণ বলে মনে করে। সে স্বামীবঞ্চিতা বলে হরকামিনী-নবকুমারের দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে সে ঈর্ষান্বিতা। মনে হয়, সে তার দাদা নবকুমারের চারিত্রিক অধঃপতন যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারেনি।
নৃত্যকালী ও কমলা :
নৃত্যকালী নবকুমারের সম্ভবত খুল্লতাত ভগ্নি, সে অবিবাহিতা এবং বয়ঃকনিষ্ঠা। তবে হরকামিনী ও প্রসন্নময়ীর সঙ্গে তার সম্পর্ক সমবয়সী সখিত্বের সম্পর্ক। *কমলা তাদের তাস খেলার সঙ্গী। তারা তাসখেলায় এত নিপুণ যে কর্তামার আগমনও উপলব্ধি করতে পারে না। তরঙ্গিনী সভা থেকে পানোন্মত্ত নবকুমারের প্রত্যাগমনের অভিজ্ঞতা ও প্রসন্নময়ীর সঙ্গে তার আচরণ তাদের অত্যন্ত খারাপ লেগেছিল। তারা মন্তব্য করেছিল –“ও মা, ছি! ইংরেজী পড়লে কি লোক এত বেহায়া হয় গা”। এই জাতীয় উক্তি নারীসুলভ লজ্জার উক্তির প্রকাশ। ‘একেই কি বলে সভ্যতা?’য় মধুসূদন সমকালীন অন্দরমহলের চিত্র নারী চরিত্রের মাধ্যমে রূপায়িত করেছেন। তবে নৃত্যকালী ও কমলা উভয় চরিত্রেই কোনো ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য নেই।
বারবিলাসিনী :
সেকালের কলকাতায় বাবুদের সম্ভোগলিপ্সা তীব্র ছিল। এই হঠাৎ বাবুর দল ছিলেন বিত্তবান শিক্ষিত মানুষ। নারীসঙ্গলোভী বাবুদের এই জাতীয় বাবুয়ানাতে খরচের পরিমাণও বেশী হত। নারীর প্রতি আসঙ্গলিপ্সার দুটি পরিচয় আলোচ্য প্রহসনে আছে প্রথমত, গণিকা সঙ্গ; দ্বিতীয়ত, বাইজীদের প্রতি আসক্তি। বারাঙ্গনা ও বাইজীদের নিয়ে নানা হৈ-হুল্লোড়ের চিত্র সেকালের অনেক সাহিত্যে পাওয়া যায়।
মধুসূদনের ‘একেই কি বলে সভ্যতা?’য় দুজন বারবিলাসিনীর সন্ধান পাওয়া যায়। প্রথমাঙ্কের দ্বিতীয় গর্ভাঙ্কে সিকদার পাড়া স্ট্রিটে। এরা পথচারিনী– এদের নাম থাকি ও বামা। আর দুজন বারাঙ্গনা হল নিতম্বিনী ও পয়োধরী, যারা জ্ঞানতরঙ্গিনী সভার সভ্যদের মনোরঞ্জনার্থে নিয়োজিত। অবশ্য নিতম্বিনী আর পায়োধরীকে দ্বিতীয়াঙ্কের প্রথম গর্ভাঙ্কেও দেখতে পাওয়া যায়। চরিত্রগুলি স্বল্পের জন্য অঙ্কিত; কিন্তু স্বাভাবিক ও বাস্তবানুগ। তৎকালীন শহর কলকাতা যে বাবুদের মনোরঞ্জনের জন্য বারবিলাসিনীতে ভরে গিয়েছিল সমালোচ্য প্রহসনে তারই বাস্তব চিত্রাঙ্কিত। সাধারণত ধনী ব্যক্তিরা বারাঙ্গনা রাখতেন। এদের উদ্দেশ্য ছিল ইয়ার বন্ধুদের মনোরঞ্জন করা। নবকুমারের জ্ঞানতরঙ্গিনী সভাতেও নৃত্যগীত পরিবেশের জন্য নিতম্বিনী ও পয়োধরীকে নিয়োজিত করা হয়েছিল। মধুসূদন এখানে সিকদারপাড়া স্ট্রিটের কথা বললেও গরানহাটা, সোনাগাছি প্রভৃতি অঞ্চলেও যে বারাঙ্গনা পল্লী ছিল তার কথাও বলেছেন। নবকুমারের বন্ধু কালীনাথ বারাঙ্গনামুখী ছিল। গরানহাটার নাম শুনলেই তার ছুকরি, বিন্দি ও প্যারীর কথা মনে পড়তো। মধুসূদন তৎকালীন কলকাতার বাস্তব পটভূমিকা মনে রেখে আলোচ্য প্রহসনে বারবিলাসিনীদের চিত্র এঁকেছেন।
প্রহসনে অঙ্কিত থাকি ও বামা বারবিলাসিনী দুজন কোনো প্রত্যক্ষ নাটকীয় প্রয়োজন সিদ্ধ না করলেও বৈষ্ণব বাবাজির চরিত্র উদঘাটনের জন্য এদের উপস্থাপনা করা হয়েছে। থাকি বা বামা যে কথাবার্তা বলেছে তা থেকে বোঝা যায় যে, এদের মধ্যে একজন কারোর রক্ষিতা এবং তার প্রতি উভয়ের বেশ দুর্বলতাও আছে। কিন্তু সম্প্রতি তার মন অন্য বারাঙ্গনায় আসক্ত হওয়ায় সে বেশ ক্রোধান্বিত। দ্বিতীয় বারনারী এই ব্যাপারে মনে হয় নির্বিকার, পুরুষ সম্পর্কে আসক্তিবিহীন। তাদের চরিত্র জীবন্ত হয়েছে চটুল সংলাপ ব্যবহারে ও রঙ্গ রসিকতায়। পথচারী বৈষ্ণববাবাজীকে দেখে তাদের স্বভাব কৌতুকবোধ উচ্ছ্বসিত হয়েছে। বৈরাগীকে দেখে তাদের মনে হয়েছে ‘তুলসীবনের বাঘ’। বৈষ্ণব হলেও বাবাজীর দৃষ্টিতে বেশ লোলুপতা ছিল। পুরুষ মানুষের চোখ দেখে তাদের মন বুঝে নেওয়ার ক্ষমতা যে ছিল মধুসূদন তাঁর লেখনীতে তা পরিস্ফুট করতে চেয়েছেন। বাক্নৈপুণ্যে, কৌতুকে, চাতুর্যে, অঙ্গভঙ্গিতে চরিত্র দুটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
নিতম্বিনী ও পয়োধরী বারবিলাসিনী হলেও তারা খেমটাওয়ালীও বটে; নৃত্যগীতের দ্বারা মনোরঞ্জনের জন্য তাদের ডাক পড়ে। তারা অবশ্য খুব একটা চটুল নয়, তাদের সংলাপে-আকারে-ইঙ্গিতে আদিরসাত্মক কোনো কিছু দেখানো হয়নি। নিতম্বিনী আর পয়োধরী মাঝে মাঝে জ্ঞানতরঙ্গিনী সভায় আমন্ত্রিত হয় নৃত্যগীত পরিবেশনের জন্য। কালীনাথ যে নিতম্বিনীর গৃহে আতিথ্য নিয়েছিল তা নিতম্বিনীর বক্তব্য থেকে বোঝা যায়। পয়োধরীর কাছে ছিল সদানন্দবাবু, সে বেশ হৈ-চৈ করে বলে পয়োধরীর তাকে খুব পছন্দ। নিতম্বিনী এবং পয়োধরী দুজনের জীবিকাই হল আগন্তুকদের মনোরঞ্জন করা আর অন্য বাড়িতে নৃত্যগীতের আমন্ত্রণে অংশগ্রহণ করা। মদ্যপান করতে তারা বেশ ভালোবাসে। তাদের অনুরোধে নৃত্যগীত পরিবেশন করে, আবার সভার সদস্যদের জ্ঞানগর্ভ ভাষণও শোনে। চরিত্রগুলিতে কোনো অতিরঞ্জন বা আতিশয্য দোষে দুষ্ট হয় না।
Leave a comment