প্রহসন সম্পর্কে মাইকেল মধুসূদনের যে বিশেষ উৎসাহ ছিল তা বলা যায় না। তথাপি ঘটনাক্রমে তিনি পর পর দুখানি প্রহসন লিখে ফেলেন। একই নাট্যকারের রচনা বলে স্বভাবতই এ দুটিতে নানা সাদৃশ্য ও সংযোগ পরিলক্ষিত হয়। পরিবেশের দিক থেকে বিচার করলে প্রথমটি কলকাতার পরিবেশে এবং দ্বিতীয়টি গ্রামের পরিবেশে স্থাপিত। তথাপি প্রথমটিতে বৈশ্বব বাবাজী গ্রাম জীবনের এবং দ্বিতীয়টিতে আনন্দ অম্বিকা কলকাতার পরিবেশের ইঙ্গিত দেয়।

দুটি প্রহসনেরই গঠনতত্ত্বের প্রকৃতি একই ; বাড়ি থেকে কোনো উচ্ছৃঙ্খল আচরণের স্থানে গমনই হল প্রহসন দুটির মূল ঘটনা। দুটি স্থানই কোনো পবিত্র স্থান—জ্ঞান তরঙ্গিনী সভা বা শিব মন্দির ; দুটি পবিত্র স্থানেরই পবিত্রতার অপবিত্রীকরণ ঘটেছে এবং শেষে নায়ক চরিত্রের মানসিক পরিবর্তন এসেছে। দুটি নাটকেরই নামকরণ করা হয়েছে শেষ সংলাপ দিয়ে।

বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ-তে গদাধর কালীর ভূমিকা নিয়েছে। কালী যেমন বাড়ি থেকে নবকে ‘জ্ঞানতরঙ্গিনী’ সভায় নিয়ে গিয়েছিল, গদাও তেমন ভক্তবাবুকে। গদাধর রামের তামাক খাওয়া, আর বেহালা বাদকগণের গাঁজা খাওয়া, একই ব্যাপার। দুটি ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ইতর ও অস্ত্যজ শ্রেণির মানুষের সংলাপের মাধ্যমে উচ্চবিত্ত মানুষের সমীক্ষা ও মূল্যায়ন করা হয়েছে। দুটির পটভূমি সন্ধ্যাবেলা।

নবকালী যেমন কর্তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচরণ করে, ভক্তপ্রসাদের বিরুদ্ধে তেমন হানিফ ফতেমা-বাচস্পতি। বৈব বাবাজীর মধ্যে কামনা-বাসনার প্রকাশ না থাকলে তার সঙ্গে বাচস্পতির তুলনা করা যেত। এই ধরনের চরিত্র মাইকেলের অন্যান্য নাটকেও আছে। দুটিতেই কলিকালের প্রাসঙ্গিক উল্লেখ মেলে। ভক্তপ্রসাদ ও নব-দুজনেরই মানসিক পরিবর্তনে দুটি প্রহসন শেষ হয়েছে। নাট্য ঘটনাকে ব্যঞ্জনাপূর্ণ করে তুলতে দুটো নাটকেই দেখা যায় গানের ব্যবহার। তবে প্রথমটিতে— ‘Anti closure’ এবং পরেরটিতে closure রীতি অনুসৃত হয়েছে। সেই কারণেই প্রথম প্রহসনটিকে অধিকতর সাহিত্য গুণান্বিত বলে মনে হয়।