রবীন্দ্রনাথের ‘গুরু’ নাটকে আচার্য অদীনপুণ্য একথা বলেছেন পঞ্জককে। এখানে দেবতা বলতে আশ্রমের ছােটো বালক সুভদ্রের কথা বলা হয়েছে। সুভদ্র একদিন অসচেতনে অচলায়তনের উত্তর দিকের জানলা খুলে বাইরেটা দেখে ফেলেছিল। আশ্রমের লােকের ধারণা অনুযায়ী উত্তর দিক একজটা দেবীর অধীনস্থ তাই সেদিকে তাকানাে মানে একজটা দেবীকে রুষ্ট করা। এর ফলে বালকের দুই চোখ মুহূর্তের মধ্যেই পাথর হয়ে যেতে পারত। কিন্তু একজটা দেবীর কোনাে অভিশাপই সুভদ্রের জীবনে ফলেনি। কিন্তু মনের ভয়ে সে সকলকে তার পাপের কথা জানিয়েছে। তাই মহাপঞকের মতানুসারে, তাকে মহাতামস ব্রত করে পাপক্ষালন করতে হবে।
আশ্রমের সকল রীতিনীতি আচার্যের তত্ত্বাবধানেই সম্পন্ন হয়। কিন্তু গুরুর আগমনবার্তায় তাঁর ভ্রমসংশােধন হয়েছে। তিনি সুভদ্রকে প্রায়শ্চিত্ত করা থেকে বাধা দিয়েছেন নিজের সমস্ত ক্ষমতা দিয়ে। তাই তাকে আজ দৰ্ভকপল্লিতে নির্বাসিত হতে হয়েছে। সেখান থেকেই তিনি সুভদ্রের কান্না শুনতে পাচ্ছেন। কারণ তাকে মহাতামস ব্রত পালন করতে হচ্ছে। আচার্যের মতে প্রতিটি শিশুই দেবতার আশীর্বাদপুষ্ট। সুভদ্রও একটি দেবশিশু, তাকে কষ্ট দেওয়ার মানে দেবতাকে কাঁদানাে। তাই আচার্য এমন কথা বলেছেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গুরু নাটকে মুক্তপ্রাণ, উদার চরিত্র হল পঞ্চক। এমন খােলামনের জীবন্ত মানুষের মধ্য দিয়ে কবির আত্মার প্রতিরূপ প্রতিফলিত। এই পঞ্চক অচলায়তনের সদস্য হয়েও কোনাে নিয়ম মানে না, মন্ত্রপাঠে তার তীব্র অনীহা এবং আয়তনের বাইরে স্নেচ্ছদের সঙ্গে তার অবাধ মেলামেশা আছে। পণ্যক যূনকদের কাছ থেকে যে গানের মন্ত্র শিখেছে সেটা সহজ- মাটির গান- “আমরা চাষ করি আনন্দে মাঠে মাঠে বেলা কাটে সকাল হতে সন্ধে।” অর্থাৎ, সর্বদা খােলা আকাশের নীচে মাটিকে চাষ করে, গান গেয়ে প্রকৃতির সংস্পর্শে আনন্দে এরা সারাদিন কাজ করে। চযামাটির গন্ধে এদের প্রাণ ভরে ওঠে, ধানের শিষে পুলক লাগে। এদের নেতা দাদাঠাকুর এদের কোনাে আনন্দেই বাধা দেয় না। তাই এরা পঞ্চককে শােনায়- “সব কাজে হাত লাগাই মােরা, সব কাজে, বাঁধা-বাধন নেই গাে নেই দেখি খুঁজি, বুঝি, ভাঙি, গড়ি, যুঝি।”
অচলায়তনের শিক্ষার্থীদের যে মন্ত্র শেখানাে হয় তার থেকে যুনকদের গান একেবারে আলাদা। অচলায়তনের শিক্ষার্থীদের গান, নাচ করতে মানা, খােলা মাঠে ঘুরতে মানা, মুক্ত আলােয় আকাশের নীচে দৌড়াতে মানা। তারা হাসতে জানে না। আনন্দ করতেও শেখেনি। কেবল যন্ত্রের মতাে মন্ত্রোচ্চারণ ও প্রায়শ্চিত্তই এদের কাছে প্রকৃত জীবন বলে বিবেচিত হয়। ম্লেচ্ছদের সঙ্গে এরা মিশতে পারে না কারণ তারা অবােধ এবং মাটির কাজ করে। এই আনন্দহীন বন্ধনের জীবন পঞ্চকের অপছন্দের।
রবীন্দ্রনাথের ‘গুরু’ নাটকে পঞ্চক আয়তনের নিয়মনীতি মানে না। সকল নিয়মের বিপরীত প্রতিক্রিয়া তার মধ্যে প্রতিফলিত। তাই সে বার বার নিয়মের বেড়াজাল পেরিয়ে যুনকদলের সঙ্গে মেলামেশা করে। যুনকদের অবাধ, মুক্ত জীবন তার পছন্দের। তাই তাদের দলনেতা দাদাঠাকুরকেও সে খুব শ্রদ্ধা করে। যূনকদের দশজন লােককে স্থবিরপত্তনের রাজা বন্দি করেছে বলি দেবে বলে, আবার চণ্ডক নামক শূনককে মেরে ফেলেছে লুকিয়ে অচলায়তনের মন্ত্র শেখার অপরাধে। এইসব অত্যাচারের উপযুক্ত শাস্তি দিতে দাদাঠাকুর যুনকদের নিয়ে স্থবিরপত্তনে অগ্রসর হয়। তাদের অবরােধের প্রাচীর ভেঙে ফেলে তিনি তার ওপর দিয়ে রাজপথ করতে চান। কিন্তু তিনি পককে সঙ্গে নিতে চাননি কারণ পঞকের যুদ্ধের সময় তখনও উপস্থিত হয়নি। পককে তিনি গুরুর জন্য অপেক্ষা করতে বলেছেন। অচলায়তনের ধারণায় উদ্বুদ্ধ পঞ্চক গুরুর প্রতি অধিক আস্থাবান। তাই দাদাঠাকুর তার কাছে গুরুর বেশেই ধরা দিতে চেয়েছেন। যুদ্ধ করার চেয়ে অচলায়তন ভাঙার পরে গঠনমূলক কাজের জন্যই পঞ্চককে বেশি দরকার-এই বিশ্বাস থেকেই দাদাঠাকুর পঞ্চককে তার দলে নেননি।
এই উক্তিটি ‘গুরু’ নাটকের অন্যতম প্রধান চরিত্র পঞ্চক বলেছে।
বহুদিনের প্রচলিত সংস্কারে বন্দি অচলায়তনে গুরুর আগমন বার্তায় সকলে উদবিগ্ন, সেই সঙ্গ পঞ্চকও। জীবনের প্রকৃত আদর্শ কী হওয়া উচিত সে বিষয়ে তার গুরুর সাহায্য প্রয়ােজন। এ কথা সে যখন যূনকদের নেতা দাদাঠাকুরকে জানায় তখনই দাদাঠাকুর তাকে বলে যে গুরু আসা মানে অনেক উৎপাত বাড়বে। কিন্তু পঞ্চক এই উৎপাতই সাধ করে পেতে চাইছে।
প্রতিদিনের একঘেয়ে বদ্ধ জীবনযাপনে সে হাঁপিয়ে উঠেছে। এর মধ্যে সে কিছু পরিবর্তন চায়, নতুনত্বের আস্বাদ পেতে চায়, খােলা আকাশের নীচে মুক্ত কণ্ঠে গান গেয়ে মুক্ত মনে ছুটে বেড়াতে চায়। খাঁচায় বদ্ধ পাখির মতাে জীবন তার দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে, এর থেকে সে মুক্তি পেতে চায়। নড়াচড়াবিহীন অচল জীবন বদ্ধ জলাশয়ের মতাে মজে যায়। সেটা তখন মৃত্যুরই দোসর হয়ে ওঠে। তাই জীবনে গতির সঞ্চার করতে হয়, যাতে সে মুক্তির আনন্দ উপভােগ করতে পারে। কর্মের মধ্য দিয়েই পঞ্চক জীবনে গতির সঞ্চার করতে চায়। কর্মীরা প্রতি মুহূর্ত বেঁচে উঠছে, তাই জীবনের মূলমন্ত্র হওয়া উচিত ‘চরৈবেতি’। তাই পঞ্চক তাদের বৈচিত্র্যহীন, নীরস জীবনে একটু উৎপাত-ই চেয়েছে।
“যিনি সব জায়গায় আপনি ধরা দিয়ে বসে আছেন তাঁকে একটা জায়গায় ধরতে গেলেই তাঁকে হারাতে হয়।” মন্তব্যটির মর্মার্থ আলােচনা করাে।
“আজ কোনাে নিয়ম রক্ষা করা চলবে বলে বােধ হচ্ছে না।”- কেন এই দিনে নিয়ম রক্ষা করা সম্ভব নয় বলা হয়েছে?
“ও আজ যেখানে বসেছে সেখানে তােমাদের তলােয়ার পৌঁছােয় না।” -সেখানে তলােয়ার না পৌঁছানাের কারণ কী?
“খােলা জায়গাতেই সব পাপ পালিয়ে যায়।” -মন্তব্যটির মধ্য দিয়ে বক্তা কী বােঝাতে চেয়েছেন?
“দুজনে মিলে কেবলই উত্তর দক্ষিণ পুৰ পশ্চিমের সমস্ত দরজা জানলাগুলাে খুলে খুলে বেড়াব।” -বক্তা এই মন্তব্য করেছেন কেন?
“পঞ্চকদাদা বলেন অচলায়তনে তাঁকে কোথাও ধরবে না।” -মন্তব্যটির প্রসঙ্গ ও তাৎপর্য আলােচনা করাে।
“…তফাতটা এই যে, তােমরা বােঝা বয়ে মর, আমি হালকা হয়ে বসে আছি।” -বক্তা এই মন্তব্যটির মধ্যে দিয়ে কী বােঝাতে চেয়েছেন?
“অচলায়তনে এবার মন্ত্র ঘুচে গান আরম্ভ হবে।” -অচলায়তনে মন্ত্রের প্রভাব কেমন ছিল?
“তােমার জয়জয়কার হবে সুভদ্র। তিনশাে পঁয়তাল্লিশ বছরের আগল তুমি ঘুচিয়েছ।”- এই কথার মধ্যে দিয়ে বক্তা কী বােঝাতে চেয়েছেন?
“তুচ্ছ মানুষের প্রাণ আজ আছে কাল নেই, কিন্তু সনাতন ধর্মবিধি তাে চিরকালের।”- এই মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে বক্তা কী বােঝাতে চেয়েছেন?
“…নিয়ে এস হৃদয়ের বাণী। প্রাণকে প্রাণ দিয়ে জাগিয়ে দিয়ে যাও।”- মন্তব্যটির প্রসঙ্গ ও তাৎপর্য আলােচনা করাে।
“তােমাদের হাতে দিয়ে আমার যে শান্তি আরম্ভ হল তাতেই বুঝতে পারছি গুরুর আবির্ভাব হয়েছে।” -মন্তব্যটির মাধ্যমে বক্তা কী বােঝাতে চেয়েছেন?
“কিন্তু দেখছি হাজার বছরের নিষ্ঠুর মুষ্টি অতটুকু শিশুর মনকেও চেপে ধরেছে, একেবারে পাঁচ আঙুলের দাগ বসিয়ে দিয়েছে রে।” – বক্তা এই মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে কী বলতে চেয়েছেন?
“পৃথিবীতে জন্মেছি পৃথিবীকে সেটা খুব কষেবুঝিয়ে দিয়ে তবে ছাড়ি।” -বক্তার এই মন্তব্যের তাৎপর্য আলােচনা করাে।
“এমন জবাব যদি আর-একটা শুনতে পাই তা হলে তােদের বুকে করে পাগলের মতাে নাচব…”— এ কথা বলার মধ্যে দিয়ে বক্তা কী বােঝাতে চেয়েছেন?
“তাকে বাঁধছি মনে করে যতগুলাে পাক দিয়েছি সব পাক কেবল নিজের চার দিকেই জড়িয়েছি।”— মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করাে।
“তুমি যে আমার সঙ্গে লড়াই করবে— সেই লড়াই আমার গুরুর অভ্যর্থনা।”—বক্তা এই কথার মধ্যে দিয়ে কী বােঝাতে চেয়েছেন?
‘গুরু’ নাটকে ‘গুরু’-র ভূমিকাটি বিশ্লেষণ করাে।
একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কীভাবে ‘অচলায়তন’ হয়ে ওঠে?
‘পাথরগুলাে সব পাগল হয়ে যাবে…’ —পাথরগুলাে পাগল হয়ে যাবে কেন?
‘গুরু’ নাটকে পঞ্চক চরিত্রটি আলােচনা করাে।
অচলায়তনের প্রাচীর ভেঙে পড়লে ছাত্রদের মধ্যে এর কী প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল?
“অচলায়তনে তাঁকে কোথাও ধরবে না” -কাকে কেন অচলায়তনের কোথাও ধরবে না?
অচলায়তনের বালক সম্প্রদায়ের কী বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ে?
“এই তাে আমার গুরুর বেশ” -গুরুর কোন বেশের কথা বলেছে?
“শিলা জলে ভাসে”—কে, কোন্ প্রসঙ্গে কেন এ কথা বলেছেন?
“ভুল করেছিলুম জেনেও সে ভুল ভাঙতে পারিনি।” কে কাকে কোন্ ভুলের কথা বলেছে? ভুল ভাঙেনি কেন?
Leave a comment