প্রশ্নঃ একটি ৩০ বছরের পুরাতন দলিল সঠিক ব্যক্তির নিকট হইতে যদি আসে তবে ইহা এমনিতেই প্রমাণিত হয়—ব্যাখ্যা কর। একটি ৩০ বছরের পুরাতন দলিল হারাইয়া যাওয়ার ১০ বছর পূর্বে উঠানো জাবেদা নকল আদালতে দাখিল করিলে ইহা কি এমনিতেই বা আপনা-আপনি প্রমাণিত হইবে? যদি না হয়, তবে কেন?
[A document of thirty years old proves itself if it comes from the proper custody. – Explain. A Sale Deed is thirty years old. The original Deed is lost. The certified copy of the said deed taken 10 years back was produced in the Court. Can it prove itself? If not why?]
উত্তরঃ একটি ৩০ বছরের পুরাতন দলিল সঠিক ব্যক্তির নিকট হতে আসলে তা সঠিক বলে আদালত ধরে নিতে পারেন। অনুমান সম্পর্কে এই নীতিটি সাক্ষ্য আইনের ৯০ ধারায় বিধৃত হয়েছে।
এই ধারায় বলা হয়েছে যে, যখন কোন দলিল ৩০ বছরের পুরাতন বলে বুঝতে দেয়া হয় বা প্রমাণ করা হয় এবং তা সংশ্লিষ্ট মোকদ্দমায় যে পক্ষের হেফাজতে থাকা সঙ্গত বলে আদালত মনে করেন, সে পক্ষের হেফাজত হতে আদালতে দাখিল করা হয়; তখন আদালত ধরে নিতে পারেন যে, সেই দলিলের স্বাক্ষর এবং অন্যান্য সকল অংশ যে ব্যক্তির হস্তান্তর বলে বুঝতে দেয়া হয়, তা সেই ব্যক্তিরই হস্তান্তর এবং যেখানে দলিলটি সম্পাদিত বা প্রত্যয়িত, সেখানে আদালত ধরে নিতে পারেন যে, যে ব্যক্তির দ্বারা তা সম্পাদিত ও সত্যায়িত বলে বুঝতে দেয়া হয় সেই ব্যক্তির দ্বারা তা যথাবিহীতরূপে সম্পাদিত ও সত্যায়িত হয়েছে।
এই ধারার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, দলিল যে স্থানে ও যে ব্যক্তির হেফাজতে থাকা স্বাভাবিক, তা যদি সেই স্থানে এবং সেই ব্যক্তির হেফাজতে থাকে, তবে তা উপযুক্ত হেফাজতে আছে বলে বুঝাবে। কিন্তু দলিলটি যে হেফাজতে আছে, সেখানে থাকার আইনসঙ্গত কারণ আছে বলে যদি প্রমাণিত হয়, অথবা সংশ্লিষ্ট মোকার ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে অনুরূপ কারণ থাকা সম্ভব বলে যদি বিবেচিত হয়, তবে সেই হেফাজত অনুপযুক্ত বলে গণ্য হবে না।
অতি পুরাতন দলিলের সম্পাদক বা সাক্ষী পাওয়া দুস্কর। তাই এ সকল দলিল প্রমাণ করার জন্য আইন কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। ৩০ বছরের পুরাতন দলিলের হস্তাক্ষর সম্পাদন এবং প্রত্যয়ন বিশুদ্ধ— শুধুমাত্র এ টুকু আদালত ধরে নিতে পারেন। দলিলের বিষয়বস্তু সম্পর্কে এরূপ ধরে নেয়ার অবকাশ নেই। অন্যান্য অবস্থা এবং সাক্ষ্যের সহিত মিলায়ে পুরাতন দলিলের সাক্ষ্য হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়।
৩০ বছরের পুরাতন দলিল আপনা-আপনি প্রমাণিত হবার এই বিধি যা ৯০ ধারায় বিধৃত হয়েছে তা নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
(১) যদি দলিল প্রমাণ করার সাক্ষ্য পাওয়া যায় (এ. আই. আর ১৯৪৪ ক্যাল ২৪১);
(২) যেক্ষেত্রে দলিল প্রমাণ করার জন্য প্রদত্ত সাক্ষ্য অবিশ্বাসযোগ্য হয়েছে (এ. আই. আর ১৯২৭ ক্যাল ৮৭০)
(৩) যদি ঐ দলিল জাল বলে আদালতের বিশ্বাস করার কারণ থাকে (আই. এল. আর ২৬ এলাহাবাদ ৫৮১)
(৪) দলিলের যথার্থতা সম্পর্কে সন্দেহের উদ্রেক হলে (৩৪ আই. সি. ১৬৮)
নিম্ন আদালত কর্তৃক ৯০ ধারা মতে কোন অনুমান করলে আপীল আদালত তাতে সহজে হস্তক্ষেপ করেন না। (এ. আই. আর ১৯৬৭ বোম্বে ৩৮২)
৩০ বছরের পুরাতন দলিল হারায়ে যাবার ১০ বছর পূর্বে উঠানো জাবেদা নকল আদালতে দাখিল করা হলে তা ৯০ ধারা অনুযায়ী আপনা-আপনি প্রমাণিত হবে না। পূর্বে ৩০ বছরের পুরাতন দলিল হারায়ে গেলে কিংবা নষ্ট হয়ে গেলে কিংবা যুক্তিসঙ্গত কারণে আদালতে দাখিল করা সম্ভব না হলে তার জাবেদা নকল দাখিল করে ৬৫ ধারা মতে মাধ্যমিক সাক্ষ্য (Secondary evidence) হিসেবে গ্রহণ করে ৯০ ধারা মতে অনুমান করা যেতো, কিন্তু প্রিভি কাউন্সিল ১৯৩৫ সালে এটাকে ভুল বলে সিদ্ধান্ত দেন (এ. আই. আর ১৯৩৫ পি. সি. ১৩২)। এই নীতি এখনো অনুসৃত হয়ে আসছে। কাজেই জাবেদা নকল দলিলটি ৩০ বছরের পুরাতন না হলে ৯০ ধারা প্রযোজ্য হবে না। এটা ৩০ বছরের পুরাতন হলে তা ৯০ ধারার বিধান অনুযায়ী আপনা-আপনি প্রমাণিত হবে।
Leave a comment