উদ্দিষ্ট সময়: রাত্রিশেষে ভােরের আকাশ যখন ঘাস ফড়িংয়ের শরীরের মতাে কোমল নীল হয়ে ওঠে, এখন বলতে কবি সেই সময়টির কথা বলতে চেয়েছেন।

কবিভাবনার বিশিষ্টতা

কথামুখ : জীবনানন্দ দাশের মহাপৃথিবী কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘শিকার’ কবিতাটি রচিত হয়েছে একটি ভাের-এর পটভূমিতে।

আকাশে তারার উপস্থিতি : অন্ধকারের জরায়ু থেকে জন্ম নেওয়া ভােরে যখন আকাশের রং পালটে যায়, পেয়ারা এবং নােনার গাছের সবুজ ফুটে ওঠে—তখনই আকাশে দেখা যায় একটি তারাকে। যেন রাতের বিদায়ী অস্তিত্বকে সে ধারণ করে রাখে। ভােরের এই তারাকে কবি তুলনা করেন ‘পাড়াগাঁর বাসরঘরে সব চেয়ে গােধূলিমদির’ মেয়েটির সঙ্গে। অর্থাৎ, তারাটির উপস্থিতির সঙ্গে কবি গ্রামবাংলার বাসরঘরের মেয়েটির মতাে লজ্জা আর কুণ্ঠাকে তুলনা করেছেন। ‘বাসরঘরে’ আর ‘মদির’ শব্দের ব্যবহারে কবি সেই সলজ্জ স্বভাবকে আরও গভীর করে তােলেন।

তারাটির উপস্থিতির সঙ্গে তুলনা : এরপরেই তারাটির উপস্থিতিকে কবি তুলনা করেন ‘মিশরের মানুষী’ র সঙ্গে, যে হাজার হাজার বছর আগে এক রাতে তার বুকের থেকে মুক্তা নিয়ে রেখেছিল কবির নীল মদের গেলাসে। একটু আগে গ্রাম্য মেয়ের সঙ্গে তুলনায় যে সহজতা ছিল তা ভেঙে যায় ঐতিহাসিক আড়ম্বরে। নীল আকাশের ক্যানভাসে রাত-জাগা তারা আর নীল মদের পাত্রে রাখা মুক্তা যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। ‘মিশরের মানুষী’ আর ‘হাজার হাজার বছর’ মিলে ছবিটি দেশকালের সীমা অতিক্রম করে চিরকালীন বিস্তৃতি পায়।

ইতিকথা : ভােরের আকাশের তারা কবির চেতনায় অসামান্য শিল্পরূপ লাভ করে। প্রকৃতির যে স্নিগ্ধ, অমলিন পটভূমি তৈরি করা এখানে কবির লক্ষ্য ছিল, ভােরের তারা তাতে যেন এক নতুন মাত্রা যােগ করে।