বাংলাদেশ গ্রাম প্রধান দেশ। আমাদের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরীক্ষায় একটি গ্রামে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – রচনা লিখতে আসে তাই আমি একটি গ্রামে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – রচনা যথাযথভাবে লেখার চেষ্টা করেছি। তোমরা যারা পরীক্ষায় একটি গ্রামে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – রচনা লিখতে চাও আমার পোস্ট তাদের জন্য।

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমাদের স্কুলের যেকোনো পরীক্ষায় বিশেষ করে বোর্ড পরীক্ষায় একটি ভ্রমণ মূলক রচনা অবশ্যই পড়া দরকার কারণ এর মধ্যে থেকে অধিকাংশ সময় রচনা আসে। তাই আমি তোমাদের জন্য একটি গ্রামে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – রচনা সঠিকভাবে লিখার চেষ্টা করেছি।

একটি গ্রামে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – রচনা 

ভূমিকা

সুনিবিড়ি ছায়া ঢাকা গ্রামখানি মোর।

সবুজ শ্যামলে ঘেরা পাখি ডাকা ভোর।

বাংলাদেশ গ্রাম প্রধান দেশ। ৬৮ হাজার গ্রাম নিয়ে আমাদের এই বাংলাদেশ গঠিত। বাংলাদেশের প্রকৃতি যে কতটা সবুজ শ্যামলে ঘেরা তা বোঝা যায় একমাত্র শহরের বিষাক্ত নিঃশ্বাস এবং কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ থেকে। তাই পড়াশোনার ফাঁকে যখন ছুটি পাওয়া যায় তখন ইচ্ছে করে গ্রাম ঘুরিয়ে দেখতে। সৃষ্টিকর্তা গ্রামকে যেন সাজিয়েছেন তার নিজস্ব রূপ রস এবং গন্ধ দিয়ে তবে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে গ্রামেও অনেকটাই শহরের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এরপরেও গ্রাম সুন্দর, শস্য-শ্যামলে ভরা, নির্মল বায়ু প্রবাহিত হয় প্রতিনিয়ত তাই গ্রামে গেলে মন নিমিষেই ভালো হয়ে যায়।

গ্রাম ভ্রমণের পরিকল্পনা

আমি শহরে বসবাস করি। শহরের এই ব্যস্ত জীবন থেকে মুক্তির স্বাদ পেতে আমি বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করে বাবা মায়ের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যায় এইবার পরিকল্পনা করেছি গ্রাম ভ্রমণে যাব এবং সেই পরিকল্পনা মত আমি গ্রামে বেড়াতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ গ্রাম ভ্রমণের অভিজ্ঞতা একটি অন্যরকম বিষয়। গ্রামের রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি, জীবনধারা এবং ঐতিহ্য এবং একটি গ্রাম থেকে ও অন্য একটি গ্রাম অদ্বিতীয় একটির সঙ্গে আরেকটির যেন কোন মিল নেই। গ্রামের মানুষের মানসিকতা প্রকৃতির মত উদার।

গ্রামে যাত্রা পথ

আমি শহর থেকে গ্রামে যাওয়ার জন্য প্রথমে আমার পছন্দের বিষয় বেছে নিলাম রেল ভ্রমণ করার জন্য আর এই জন্য আমি ট্রেনে করে গ্রামে ভ্রমণ করতে যাব এই সিদ্ধান্ত নিলাম। বার্ষিক পরীক্ষা শেষে আমি গ্রাম ভ্রমণে যাব এটাই ছিল আমার পরিকল্পনা। আর আমি সেই মতো স্টেশনে গেলাম এবং টিকেট নিয়ে বসলাম আমার আসনে তারপর ট্রেন ঝকঝকিয়ে শব্দ করে ছুটে চলল আমার গ্রামের উদ্দেশ্যে। তাইতো কবি বলেছেন-

ঝকঝকাঝক ট্রেন চলেছে রাত দুপুরে ওই,

ট্রেন চলেছে ট্রেন চলেছে ট্রেনের বাড়ি কই!

গ্রামের বাড়িতে প্রথম দিন

আমি যখন আমার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছলাম তখন দেখলাম এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য আরো বেশি মনোমুগ্ধকর। বাড়ির চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সবুজ শস্য ক্ষেত, আর কিছুটা দূরে রয়েছে ঘন জঙ্গল প্রকৃতির এমন মাধুর্য উপভোগ করতে এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে গ্রামের বাড়িতে আমি পৌঁছে গেলাম। বাড়িতে পৌঁছামাত্রই আমি বুঝতে পারলাম গ্রামের আত্মীয়স্বজন কতটা অতিথি পরায়ণ। তাদের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ হলাম এবং বুঝতে পারলাম এটাই হয়তো আমার আত্মার টান।

গ্রামের বাড়িতে বিদ্যুৎ রয়েছে তবে তা স্থায়ীভাবে নয় এই আসে এই যায়। আমাকে তেমনি একটি ঘরে থাকতে দিল। গ্রামের বাড়িতে যারা রয়েছে তারা একান্নবর্তী পরিবারে বসবাস করে। আর আমি যে ঘরে রাত্রে ঘুমাবো ঠিক করলাম সেই ঘরের পাশে রয়েছে বাঁশ বন এবং একটু পাশেই রয়েছে পুকুর আর এমন মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ আর এমন মনমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখতে দেখতেই আমার গ্রাম ভ্রমণের প্রথম দিন শুরু হল।

আমার গ্রাম দেখা

প্রতিবছর বার্ষিক পরীক্ষা শেষে আমি আমার বাবা-মায়ের সাথে কোথাও না কোথাও ঘুরতে বের হই। এবারও ঠিক বার্ষিক পরীক্ষা শেষে আমি গ্রাম ভ্রমনে বের হয়েছিলাম। গ্রামে আমার এ বারই প্রথম আসা।  আমাদের গ্রামের সৌন্দর্য মুগ্ধ করে কারণ গ্রাম হচ্ছে সবুজে ছায়ায় ঘেরা, গ্রামে রয়েছে বিশাল এবং বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ এবং সেই সাথে বয়ে চলে আঁকাবাঁকা নদী এবং মেঠো পথ। আর এগুলো আমাদের জানান দেয় প্রকৃতি যেন নিয়মে বয়ে চলে।

গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য শহরের অনুভব করা যাবে না, গ্রামের সৌন্দর্য অনুভব করতে হলে গ্রামে আসা প্রয়োজন আমি এসে তা বুঝতে পারলাম। তাই তো শহরে যারা বসবাস করে, তারা হয়তো নাড়ীর টানেই গ্রামে ছুটে চলে নিজের গ্রামের বাড়িতে। একজন মানুষ যতই বড় হোক না কেন, সে তার শৈশব যে পল্লী জননীতে কাটিয়েছে সে সেই গ্রামের টানে ছুটে চলে নিজের আপন পথে। আর এজন্যই হয়তো সাহিত্যের কবিরা তাদের কবিতায় প্রকাশ করেছেন গ্রামের প্রতি তাদের ভালোবাসার কথা –

এঁকেবেঁকে পথখানি মিলায় সুদূর।

দু পাশের গাছে গাছে ফল আর ফুল।

গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

আমাদের গ্রামগুলো যেন প্রকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ। গ্রামে রয়েছে ছোট ছোট কুড়ে ঘর আর এই ঘরগুলো ছাওয়া হয় সাধারণত খড় দিয়ে। অধিকাংশ ঘর গুলো দেখা যায় আধা পাকা যেগুলো টিনের ছাউনিতে ঘেরা বাড়ি দেখা যায় তবে ঘরবাড়ি যেমনই হোক না কেন এখানে রয়েছে মেঠো পথ, রয়েছে সবুজ ঘাস, গাছপালা, নীল আকাশ আর রয়েছে পাখির কিচির মিচির শব্দ যা শুনলে মনটা আনন্দে ভরে ওঠে। সবচেয়ে বেশি সুন্দর গ্রামের সকালবেলা।

আবার সন্ধ্যা বেলায় ঝিঝিরি শব্দে মন ভরে ওঠে। কোন কোন ঘরে জলে বৈদ্যুতিক লাইটের পরিবর্তে মাটির কুপি যা কেরোসিনের তেল দিয়ে জ্বলে সেটা আসলেই স্মৃতিময়। গ্রামে রয়েছে জীবনধারণের জন্য টাটকা শাক-সবজি, ফলমূল আর রয়েছে পরিপূর্ণ শস্য ক্ষেত। তাইতো কবি বলেছেন-

অপরূপ এ গ্রামখানি ছবিতে আঁকা।

শিল্পীর মায়াময় এক সুষমা মাখা।

গ্রামে ফসলের ক্ষেত

গ্রামের ক্ষেতগুলো ফসলে পরিপূর্ণ। সেখানে তৈরি হয় সকল ধরনের ফসল যা আমরা শহরের মানুষ কিনে খাই। আমাদের কৃষক ভাইয়েরা তাদের পরিশ্রমের মাধ্যমে ঘাম ঝরিয়ে তাদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে আমাদের জন্য এই খাদ্যগুলো তৈরি করেন। যখন গ্রামের ক্ষেতে ফসল গুলো তৈরি করা হয় তখন যেন সবুজের বেষ্টনীতে ভরে থাকে আবার কিছুদিনের ব্যবধানে এগুলো হয়ে ওঠে সোনালী রঙে। যখন সোনালী রঙ ধারণ করে তখন কৃষকেরা এগুলো ঘরে নিয়ে আসে এবং এগুলো থেকে তৈরি হয় আমাদের জন্য খাবার। হেমন্ত কালে সোনালী ধানে কৃষকের গোলা ভরে ওঠে। আর এজন্যই হয়তো কবি বলেছেন-

সোনালী ধানের ক্ষেত ফসলের বান।  

শীতল বাতাসে পাবে সরিষার ঘ্রাণ।

গ্রামে রাতের আকাশ

আমরা যারা শহরে বসবাস করি তারা বুঝতেই পারি না গ্রামের রাতের আকাশ কতটা সুন্দর দেখা যায়। রাতের আকাশে তারা গুলো ঝিকিমিকি করে জ্বলে, মনে হয় যেন তারার মিলন মেলা বসেছে। যা আমরা শহরের এই বৈদ্যুতিক আলোর মাঝে কখনোই খুঁজে পায় না। আর জ্যোৎস্না রাত হলে তো কোন কথাই নেই। জোসনার আলোতে চারিদিকে ভরে ওঠে।

রাতের আকাশে পাবে তারা সোজা কর,

প্রকৃতির রূপ দেখে কাটাই প্রহর।

গ্রামের উৎসব

গ্রামগুলোতে সারা বছরই যেন বারো মাসে তেরো পার্বণ লেগেই থাকে। সব সময় যেন আনন্দে পরিপূর্ণ। গ্রামে হেমন্ত কালে যখন পাকা ধান ঘরে ওঠে তখন কৃষকের ঘরে ঘরে নতুন ধানের পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হয় যা আসলেই মনমুগ্ধকর এবং উপভোগ করার মত। এছাড়াও গ্রামে বিভিন্ন ধরনের মেলা বসে সেখানে গ্রামের মানুষের মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিস পাওয়া যায় যাতে রয়েছে প্রকৃতির ছোঁয়া।

জমির আলপথ ধরে ঘোরা

গ্রাম ভ্রমণের অভিজ্ঞতার মধ্যে আরেকটি নতুন অভিজ্ঞতা হলো গ্রামের মেঠো পথে হাঁটা এবং ফসলের ক্ষেতের আলপথ দিয়ে ঘুরে বেড়ানো। দুই পাশে ফসলের ক্ষেত এবং মাঝে সরু রাস্তা একে বেঁকে এগিয়ে চলে। পাশে রয়েছে একটি নদী। বর্ষাকালে নদীর দু’কুল ছাপিয়ে পানি কখনো কখনো ফসলের ক্ষেতে ও ঢুকে পড়ে। আমি ধান ক্ষেত দেখতে দেখতে একটু দূরে দেখতে পেলাম পানের বরজ, এরপরে কিছু দূরে রয়েছে একটি পাড়া যেখানে লোকজন বসবাস করে। এইভাবে আমি গ্রামের আলপথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে এক সময় বাড়ি ফিরে আসলাম।

গ্রামের নদীতে মাছ ধরার অভিজ্ঞতা

আমরা যারা শহরে বসবাস করি তারা মাছ ধরার কোন কৌশল জানিনা বললেই চলে আর অভিজ্ঞতা তো অনেক দূরের কথা। গ্রামের নদীতে আমার ছিপ দিয়ে মাছ ধরার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। মাছ ধরার পূর্বের কোন অভিজ্ঞতা না থাকলেও আমি ছিপে মাছ ধরার চেষ্টা করেছি। তবে আমার ছিপে যদিও মাছ উঠেনি ঠিকই তবে আমার পাশে আমার চাচতো ভাইদের ছিপে ঠিকই মাছ ধরা পড়েছে আর এই মাছ দেখেই আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেছি।

আমার চাচতো ভাই তার ছিপ দিয়ে নদী থেকে পুটি মাছ, তেলাপিয়া মাছ এছাড়াও ছোট পোনা মাছ ধরে ফেলল আর সেই মাছ দিয়ে রান্না হল দুপুরে সে যে কি আনন্দ এবং অনুভূতি তা বর্ণনায় প্রকাশ করা যায় না। আমার মনে হচ্ছিল মাছগুলো যেন আমি নিজেই ধরেছি।

গ্রামের খাওয়া দাওয়া

গ্রাম ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গেলে সেখানকার মানুষের খাওয়া-দাওয়ার কথা বলতে হয়। কারণ গ্রামের মানুষের খাওয়া দাওয়া আর শহরের মানুষের খাওয়া-দাওয়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। শহরের মানুষের রান্না, স্বাদ, গন্ধ আর গ্রামের মানুষের গ্রামীণ পানি এবং মাটির বিশুদ্ধতার রান্না সত্যিই আলাদা আর এর প্রধান কারণ হয়তো সেখানে পাওয়া যায় নির্ভেজাল শাকসবজি যার স্বাদ এবং গন্ধ পুরোটাই আলাদা। গ্রামের ধানক্ষেত থেকে ধরা চিংড়ি এবং দেশি মোরগের মাংসের স্বাদ সত্যিই আলাদা। এই গ্রাম্য খাবারের স্বাদ আমি কখনোই ভুলতে পারবো না।

উপসংহার

গ্রামের মুক্ত পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করে কিছুদিন কাটিয়ে আমি আমার চিরোচেনা শহর জীবনে ফিরে এসেছি। আর আমি সাথে করে নিয়ে এসেছি আমার সারা জীবনে মনের রাখার মত একরাশ স্মৃতি এবং গ্রামে ফেলে এসেছি আমার শহর জীবনের সকল অহংকার এবং গ্রামের জন্য বুক ভরা ভালোবাসা। গ্রাম থেকে ফিরে এসে কিছুদিন আমার শহরের পরিবেশটা মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছিল। আমি ঠিক করেছি আমি আবারো যখন সুযোগ পাবো তখনই ঘুরতে যাব গ্রামে কারণ সেখানে রয়েছে প্রকৃতির কাছে মাটির স্নিগ্ধ গন্ধ। আর ততদিন আমার স্মৃতি পটে জেগে থাকবে গ্রাম ভ্রমণের এই অভিজ্ঞতার কথা।

সাজানো গোছানো সব প্রভুরই গড়া।

আমাদের গ্রামখানি মমতায় ভরা।