প্রশ্নঃ উপবস্তুবাদ বলতে কী বুঝ?

অথবা, উপসত্তাবাদ বলতে কী বুঝ?

ভূমিকাঃ দেহ ও মনের সম্পর্ক খুবই গভীর। এরা একে অপরের সাথে পরস্পর নির্ভরশীল সম্পর্কে আবদ্ধ। দেহ যেমন মন থেকে পৃথক হয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ধরে রাখতে পারে না। ঠিক তেমনি মনও দেহ থেকে পৃথক হয়ে স্বতন্ত্র অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারে না। অর্থাৎ দেহ ও মন এক ঘনিষ্ঠ সূত্রে আবদ্ধ। তাই দেহ যখন সুস্থ থাকে মনও তখন প্রফুল্ল থাকে।

উপবস্তুবাদ বা উপসত্তাবাদঃ দেহ ও মনের সম্পর্ক বিষয়ক মতবাদগুলাের মধ্যে উপবস্তুবাদ বা উপসত্তাবাদ অন্যতম। এ মতবাদ দেহ ও মনের সম্পর্ক সম্বন্ধীয় এমন একটি মতবাদ যা মনে করে যে, মন কোনাে পৃথক বিশিষ্ট সত্তা নয় বরং দেহ বা মস্তিষ্ক ক্রিয়ার উপসত্তামাত্র।

মনে যাই ঘটে তা দৈহিক বা মস্তিস্ক ক্রিয়ার একটা উপজাত মাত্র। থমাস হাক্সলি (Thomas Huxley) এ মতবাদের একজন প্রধান প্রবর্তক।

এমতবাদ অনুসারে দেহের সঙ্গে মনের সম্পর্ক মানুষের সঙ্গে ছায়ার সম্পর্কের মতাে। মানুষের গতি তার ছায়ার গতির কারণ। পক্ষান্তরে, ছায়ার গতি মানুষের গতির কারণ নয়। অনুরূপভাবে দৈহিক পরিবর্তনের ফলেই মানসিক পরিবর্তন সাধিত হয় এবং মানসিক পরিবর্তনের ফলে দৈহিক পরিবর্তন সাধিত হয় না।

এ মতবাদ আরও মনে করে যে, দেহ থেকে মনের দিকে কেবল একমুখী কার্যকারণ সম্পর্ক থাকতে পারে। এ মতবাদ কার্যকারণ সম্পর্কের কেবল ঐ অর্ধেক অংশটুকু গ্রহণ করে যেখানে বলা হয় যে, দৈহিক ঘটনা মানসিক ঘটনাকে সংঘটিত করতে পারে কিন্তু অপর অংশটুকু এ মতবাদ অস্বীকার করে। যেখানে বলা হয় যে, মানসিক ঘটনা দৈহিক ঘটনার কারণ হতে পারে।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, উপবস্তুবাদ বা উপসঙ্গবাদ দেহ ও মনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। মন দেহেরই একটি নিষ্ক্রিয় উপবস্তু। দৈহিক প্রক্রিয়ার সাথে মানসিক প্রক্রিয়াযুক্ত বটে। কিন্তু এরা সমপর্যায়ের নয়; সমান মর্যাদার অধিকারীও নয়। দৈহিক প্রক্রিয়া মুখ্য আর মানসিক প্রক্রিয়া তার ফলস্বরূপ উপবস্তু বা গৌণ আভাস মাত্র।