অবিমিশ্র ঐতিহাসিক উপন্যাসের নিদর্শন বাংলা সাহিত্যে এক রমেশচন্দ্রের উপন্যাসেই লভ্য। তিনি কল্পনার রামধনুতে বা আদর্শবাদের দ্বারা ইতিহাসকে রূপান্তরিত করার বিরোধী ছিলেন। তাই তিনি ইতিহাসের যথাসাধ্য সত্যচিত্রণের প্রয়াসী হন। বাংলা সাহিত্যের প্রতিকূল আকাশ-বাতাসের মধ্যে ঐতিহাসিক উপন্যাসের যতদূর বৃদ্ধি ও পরিণতি হওয়া সম্ভব, তাঁর উপন্যাসে সেই উজ্জ্বল রূপ চোখে পড়ে। একথা ঠিক, বঙ্কিমের মতো অসাধারণ দীপ্ত কল্পনা তাঁর ছিল না, কিন্তু তাঁর মধ্যে ঐতিহাসিকের সত্যনিষ্ঠা ছিল। শিল্পীর সূক্ষ্ম স্পর্শকাতরতা না থাক, কোথাও রুচিবোধের অভাব হয় নি। কথাশিল্পীর প্রজ্ঞা ও ঐতিহাসিকের নিরপেক্ষ দৃষ্টির সংযমে হিন্দুয়ানীর উন্মত্ত আবেগ দমিত হয়েছিল।
রমেশচন্দ্র দত্তের রচনাসমূহ:
(১) ইতিহাসমূলক রোমান্স : ‘বঙ্গ-বিজেতা’ (১৮৭৪), ‘মাধবীকঙ্কণ’ (১৮৭৭)।
(২) ঐতিহাসিক উপন্যাস: মহারাষ্ট্র জীবনপ্রভাত’ (১৮৭৮), ‘রাজপুত জীবনসন্ধ্যা’ (১৮৮৯)।
(৩) সামাজিক উপন্যাস : ‘সংসার’ (১৮৮৬), ‘সমাজ’ (১৮৯৪)। প্রথমটির একটি ইংরেজী অনুবাদ প্রকাশিত হয় ‘The Lake of the palms’ নামে।
‘বঙ্গ-বিজেতা’র বিষয় টোডরমলের বঙ্গবিজয়, সময় ষোড়শ শতাব্দীর অষ্টম দশক। পরের তিনটি উপন্যাসের সময় যথাক্রমে সপ্তদশ শতাব্দীর আদি, মধ্য ও অন্ত্যভাগ। চারটি উপন্যাসের কাহিনী মূলতঃ আকবর, জাহাঙ্গীর, সাজাহান এবং ঔরংজেবের শতবর্ষব্যাপী রাজত্বকাল জুড়ে বিস্তৃত। তাই পরবর্তীকালে উপন্যাসগুলির দ্বিতীয় সংস্করণ ‘শতবর্ষ’ (১৮৭৯) নামে প্রকাশিত হয়েছিল।
রমেশচন্দ্রের ঐতিহাসিক উপন্যাসগুলিকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথম উপন্যাস দুটি ‘বঙ্গবিজেতা’ ও ‘মাধবীকঙ্কণ’ এক শ্রেণীর অন্তর্গত। ‘জীবনপ্রভাত’ ও ‘জীবনসন্ধ্যা’ অপর শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। প্রথম শ্রেণীতে কল্পনার আধিপত্য, দ্বিতীয় শ্রেণীতে সত্যনিষ্ঠার প্রাদুর্ভাব, কল্পনা ঐতিহাসিক সত্যের অনুগামী হয়েছে। প্রথম দুটি উপন্যাসে বর্ণনীয় বস্তু ও মুখ্য চরিত্রগুলি প্রধানত কাল্পনিক। পরের দুটি উপন্যাস ইতিহাসের সংশয়হীন ভিত্তির উপর সুপ্রতিষ্ঠিত। ইতিহাসের শুকনো হাড়ের মধ্যে প্রাণসঞ্চার করে মানুষের হৃদয়াবেগের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে হলে কল্পনার সাহচর্য অপরিহার্য। রমেশচন্দ্রের শেষের উপন্যাস দুটিতে এই জাতীয় কল্পনা স্থান পেয়েছে। তবে তা ঐতিহাসিক সত্যের বিরোধী নয়, অনুগামী হয়েছে। এই দুই গ্রন্থে ইতিহাস প্রধান হয়ে উঠেছে। এর কারণ, লেখকের ঐতিহাসিক জ্ঞানের প্রসারতায় রাজপুত ও মারাঠাদের ইতিহাসের কাহিনীতে তিনি রস-ফল্গুধারা আবিষ্কার করেছেন।
ইংরেজ ঔপন্যাসিকদের মধ্যে Sir Walter Scott ছিলেন রমেশচন্দ্রের প্রিয়তম লেখক। তাঁর নিজের ভাষায় : “Sir Walter Scott was my favourite author 40 years ago. I spent my days and nights over his novels,…… but no subject, not even poetry had such a hold upon me as history.” ইতিহাস পাঠে আগ্রহ, স্কটের উপন্যাসে তন্ময়তা এবং বাংলা সাহিত্যসৃষ্টিতে বঙ্কিমের সস্নেহ উৎসাহ—এ তিনের বাস্তব ফল তার বাংলা উপন্যাস। অবশ্য ‘দুর্গেশনন্দিনী’, মৃণালিনী’, এবং পরবর্তীকালে ‘যুগলাঙ্গুরীয়’, ‘চন্দ্রশেখর’ ‘কপালকুণ্ডলার’ আদর্শ তার সামনে ছিল। কিন্তু সেইগুলির দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার মতো মানসিকতা তার ছিল না। রমেশচন্দ্র ছিলেন বঙ্কিম-উপন্যাসের ভক্ত পাঠক। ‘দুর্গেশনন্দিনী’ ও ‘মৃণালিনী’ রচিত না হলে ‘বঙ্গবিজেতা’ রচিত হত কিনা সন্দেহ। মাধবীকঙ্কণ’, উপন্যাসটি ‘দুর্গেশনন্দিনী’, ‘মৃণালিনী’ ও ‘বিষবৃক্ষে’র প্রভাবপুষ্ট। কেবল এক জায়গায় শিষ্য গুরুকেও অতিক্রম করে গিয়েছিল ব’লে মনে হয়। সেটি বিধবা-বিবাহ সমর্থনে।
‘বঙ্গবিজেতা’ উপন্যাসের বিষয় টোডরমলের বঙ্গ-বিজয়। ষোড়শ শতকের অষ্টম দশকের সমকালে কাহিনীটি মূর্ত হয়েছে। এখানে প্রেম, ভ্রুরতা, আত্মত্যাগ, গৃহজীবন— মানবচরিত্রে আলো-আঁধারের বিচিত্র লীলা বর্ণিত। ঐতিহাসিকের সত্যনিষ্ঠা সর্বত্র অনুভব করা যায়। ঐতিহাসিক চরিত্র টোডরমল জীবন্তরূপে উপস্থিত। কিন্তু ইন্দ্রনাথ, নগেন্দ্রনাথ, বিমলা, সতীশচন্দ্র প্রভৃতি অন্য চরিত্রগুলি বিশেষত্ব বর্জিত। সরলা অমলার মধ্যে সখী প্রীতির প্রকাশে, মহাশ্বেতার প্রতিহিংসা বা শকুনির শয়তানির মধ্যে হয়ত কিছু প্রাণের লক্ষণ আছে। কিন্তু উপেন্দ্রনাথ ও কমলা যেন রূপকথার চরিত্র। ইন্দ্রনাথের প্রতি বিমলার গোপন প্রেম জগৎসিংহের প্রতি আয়েষার ব্যর্থ প্রেমের যেন করুণ অনুকরণ হয়ে উঠেছে। কেবল যুদ্ধবর্ণনায় কিছুটা অভিনবত্ব আছে।
‘বঙ্গ-বিজেতা’ উপন্যাসের তিন বছর পরে লিখিত হয় মাধবীকঙ্কণ’। কাহিনী পরিকল্পনায় টডের লেখা রাজপুতনার ইতিহাস এবং টেনিসনের ‘Enoch Arden কাব্যের আদর্শ এখানে যুগ্মভাবে বহমান। নরেন্দ্রনাথ নামে এক জমিদারপুত্র জমিদারী হারিয়ে ও হেমলতা নামে এক বালিকার প্রণয়ে ব্যর্থ হয়ে দেশ ছেড়ে সুজার দরবারে উপস্থিত হয়। তারপরে সাজাহানের রাজত্বশেষে যে তুমুল ভ্রাতৃবিরোধ দেখা যায় তার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তার চরিত্রের নৈরাশ্যবোধ, দ্বন্দ্ব ও অস্থির হঠকারিতা শিল্পীর নিপুণ তুলিতে চিত্রিত হয়েছে। শেষপর্যন্ত বিবাহিতা হেমলতার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ঘটে এবং বাল্যপ্রেমের স্মৃতি নিদর্শন স্বরূপ যে মাধবীকঙ্কণ সে হেমলতাকে পরিয়ে দিয়েছিল হেমলতা তা ফিরিয়ে দিয়ে তাদের সমস্ত সম্পর্কের সমাপ্তি ঘোষণা করে। এই বিদায়দৃশ্যটি আবেগের গভীরতায়, সংযত প্রকাশভঙ্গিমায় ও বিষাদময় করুণরসের উদ্দীপনে বাংলা উপন্যাসে অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। ঔপন্যাসিক কলা-কৌশল ‘বঙ্গ-বিজেতা’র তুলনায় এখানে অনেক পরিণত। পারিবারিক জীবনের সঙ্গে ইতিহাসের যোজনাও যথাযথ হয়েছে। রাজমহলে সুজার দরবার, নর্মদাযুদ্ধে পরাজয়ের পর মেওয়ারী ও মাড়োয়ারী সৈন্যদলের মধ্যে সম্পর্ক, বারাণসী ও দিল্লীর জনপদ এবং মোগল অন্তঃপুরের বিলাস-ব্যসনের চিত্র সব মোটামুটিভাবে সুঅঙ্কিত হয়েছে। কিন্তু নরেন্দ্রনাথ-হেমলতা-জোলেখার ত্রিভুজ প্রেমের চিত্রঙ্কনে গল্পগ্রন্থনে ত্রুটি দেখা গেছে। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘চন্দ্রশেখরে’ প্রতাপ-শৈবলিনীর বাল্যপ্রণয়ের মতোই নরেন্দ্র-হেমলতার বাল্যপ্রেম এখানে অভিশপ্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। কিন্তু হেমলতার ব্যর্থজীবনের বঞ্চনা ও আত্মবিসর্জন আর শৈবলিনীর দ্বন্দ্ব-দীর্ণ প্রায়শ্চিত্ত এক ব্যাপার হয়নি। উপরন্তু চন্দ্রশেখরের মতো ইতিহাস এবং ব্যক্তিপ্রেমের কাহিনী কল্পনার রসায়নে মিশ্রিত হয়নি, পৃথক থেকে গেছে। হেমলতার প্রেমলাভের সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হয়েই নরেন্দ্রনাথ যেন ইতিহাসের ঘূর্ণাবর্তে নিক্ষিপ্ত হয়েছে, নয়ত এই উপন্যাসে ইতিহাসের কোন গুরুত্ব থাকে না। জোলেখা চরিত্রটিও বিশ্বাসযোগ্য হয়নি। বস্তুত, ইতিহাস অপেক্ষা রোমান্সই এখানে প্রধান হয়েছে।
রমেশচন্দ্রের ‘মহারাষ্ট্র জীবনপ্রভাত’ ও ‘রাজপুত জীবনসন্ধ্যা’ সম্পূর্ণভাবে ইতিহাস মিশ্রিত উপন্যাস। বঙ্কিম-শিষ্য রমেশচন্দ্র উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন স্বদেশপ্রীতি। পরাধীনতার পরিবেশে সৃষ্ট উপন্যাসগুলির মধ্যে তিনি সঞ্চার করেছিলেন সেই দেশানুরাগ। এছাড়া তাঁর নিজস্ব সংযোজন রূপে ছিল—
- (ক) সরল সত্যানিষ্ঠা,
- (খ) প্রখর ইতিহাস চেতনা বা তথ্যবাদিতা,
- (গ) হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কে সহিষ্ণু মনোভাব,
- (ঘ) ঐতিহাসিক উপন্যাস রচনার উপযোগী প্রকরণগত বিশেষত্ব।
তিনি ইতিহাসের ভাবটি ফুটিয়ে তোলার জন্য চরিত্রগুলির মধ্যে আদর্শবাদ, কূটনীতি, রণকৌশল, বিচারবুদ্ধি, প্রতিজ্ঞা ও সংকল্প, ধূর্ততা, ঈর্ষা, প্রেম ও বাগ্মিতা, বিদ্রোহদমনে কঠোরতা, অসম সাহসিকতা ইত্যাদি নাটকীয় উপকরণ ব্যবহার করেছেন।
রমেশচন্দ্র ‘মহারাষ্ট্র জীবনপ্রভাত’ ও ‘রাজপুত জীবনসন্ধ্যা’ উপন্যাস দুটির ঘটনাবলী ইতিহাসের অধ্যায় থেকেই সঙ্কলিত। এর প্রধান ও অপ্রধান চরিত্রেরাও ইতিহাসপ্রসিদ্ধ। ইতিহাসে অনুল্লেখিত কাল্পনিক মানব-মানবী এখানে প্রায় অনুপস্থিত। বস্তুত, এই দুটি উপন্যাস সম্পূর্ণভাবেই ইতিহাস নির্ভর, রমেশ-প্রতিভার শ্রেষ্ঠ স্বাক্ষর।
সংসার ও সমাজ : সামাজিক উপন্যাস রচনায় রমেশচন্দ্র নতুন পথের দিশারী। এখানে তিনি শুধু সামাজিক সত্যের দরদী চিত্রকর নন, সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধেও খড়গহস্ত বিদ্রোহী। ‘সমাজ’ উপন্যাসে বহুবিবাহপ্রথার ব্যঙ্গচিত্র ফুটে উঠেছে তারিণী মল্লিকের চরিত্রে : “তারিণীবাবুর মুখে হাসি আর ধরিত না, চুলে ঘন ঘন কলপ দিতেন, কাহার সাধ্য একগাছি পাকা চুল বাহির করে। নাপিতের মাহিয়ানা দ্বিগুণ করিয়া প্রত্যহ ক্ষৌরকার্য সম্পাদন করিতেন, দাঁড়ি-গোঁফ এখনও উঠে নাই বলিলেও চলে।”
অন্যদিকে ‘সংসার’ উপন্যাসে তিনি বিধবা-বিবাহের সমর্থনে প্রগতিশীল চিন্তা-ভাবনার পরিচয় দিয়েছেন। তার মতে, বৈধব্যের দ্বারা যেখানে সাংসারিক বন্ধন অদৃষ্ট কর্তৃক ছেদিত সেখানে নতুন স্বামীগ্রহণ বিধেয়। এদিক থেকে বিচার করলে তিনি বঙ্কিমকে অতিক্রম করে গেছেন। তার বিশ্বাস সমাজের কল্যাণ নির্ভর করে ব্যক্তিমানুষের উপর, শিক্ষার উপর নয়। অসাধারণ মানসিক ভারসাম্য থাকলে তবেই এই মধ্যপন্থা অবলম্বন সম্ভব। আসলে, বঙ্কিম-প্রবর্তিত সামাজিক উপন্যাসই কেবলমাত্র তাঁকে সামাজিক উপন্যাস রচনায় অনুপ্রাণিত করেনি, এর অন্তরালে অন্য কারণও ছিল। রমেশচন্দ্র ‘সংসারে’ বিধবাবিবাহ এবং ‘সমাজে’ অসবর্ণ বিবাহ সমর্থন করেছিলেন সচেতনভাবে। তিনি লিখেছিলেন : “Sansar goes in for widow marriage and Samaj goes in for inter-caste marriage”. সেইসময় এই মনোভাব দুঃসাহসিক ছিল। বিপরীতভাবে, বঙ্কিমচন্দ্ৰ ‘বিষবৃক্ষ’ এবং ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ উপন্যাস লিখে বিধবাবিবাহের অনৈতিকতা দেখিয়েছিলেন। তাঁর অন্যান্য অনেক লেখায় (এমন কি বিদ্যাসাগর সম্পর্কে মনোভাব প্রকাশেও) এই বিরূপতার পরিচয় আছে। পক্ষান্তরে, রমেশচন্দ্র উপন্যাসে বিধবাবিবাহ এবং অসবর্ণ বিবাহের দৃষ্টান্ত দিয়ে সমাজের পরিবর্তন সম্ভাবনা অনুভব করেছিলেন।
সীমাবদ্ধতা : বঙ্কিমচন্দ্র এবং রমেশচন্দ্রের মধ্যে পারস্পরিক তুলনা:
রমেশচন্দ্রের উপন্যাসের কিছু সীমাবদ্ধতা দেখা যায় যেমন—
(১) যা সূক্ষ্ম ও গভীর কল্পনাময় রমেশ-উপন্যাসে তার পরিচয় বিরলদৃষ্ট। ফলে বঙ্কিমচন্দ্রের ঐতিহাসিক উপন্যাসে কল্পনায় ঐশ্বর্যে যে সমকালের জাঁকজমকপূর্ণ রাজকীয় পরিবেশ প্রত্যক্ষ হয়ে উঠে, অতীতের ধূসর ম্রিয়মাণ চরিত্রগুলি হৃদয়াবেগের স্পর্শে জীবন্ত মনে হয়, রমেশ উপন্যাসে তা অনুভব করা যায় না।
(২) রোমান্সরসে উজ্জীবিত আখ্যান রচনায় এবং অন্তর্দ্বন্দ্বময় চরিত্র রচনায় রমেশচন্দ্রের মধ্যে কোন ঔপন্যাসিক প্রতিভা লক্ষ্য করা যায় না।
(৩) বঙ্কিমচন্দ্রের ‘দেবী চৌধুরাণী’র ভবানী পাঠক, ‘আনন্দমঠে’র সস্তাননেতা ইত্যাদি অর্ধ-ঐতিহাসিক চরিত্রগুলি বীরত্ব ও দেশপ্রেমে যেভাবে পরবর্তীকালে বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রেরণা সঞ্চার করেছিল, রমেশচন্দ্রের উপন্যাসের চরিত্রগুলি সম্পূর্ণ ঐতিহাসিক হওয়া সত্ত্বেও সে ধরনের কোন উন্মাদনাময় প্রেরণা সৃষ্টি করতে পারে নি।
এইসব ত্রুটি সত্ত্বেও মনে হয় বাংলা ঐতিহাসিক উপন্যাস রচনায় এবং সামাজিক উপন্যাসের মধ্যে পল্লী অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক পরিচয়সহ প্রগতিশীল মনোভাব প্রকাশের জন্য রমেশচন্দ্র দত্তের নামটি কোন মতেই বিস্মৃত হবার নয়।
Leave a comment