শব্দের উৎস এবং অর্থ: উপনিবেশবাদ শব্দটি ইংরেজি ‘Colo-nialism’ শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ। আবার উপনিবেশবাদ বা ‘Colo-nialism’ কথাটি এসেছে লাতিন শব্দ ‘Colonia’ থেকে যার অর্থ হল বিশাল সম্পত্তি বা এস্টেট (estate)।

সংজ্ঞা: সাধারণভাবে বলা যায় কোনাে দেশ যদি অন্য দেশের ভূখণ্ড বা অঞ্চলকে নিজের অধীনস্থ করে নেয় তাহলে সেই অঞ্চলটির নাম হয় উপনিবেশ। ‘Encyclopaedia of Social Sciences’ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে উপনিবেশবাদ হল অন্য দেশের ভৌগােলিক অঞ্চলের ওপর শাসন প্রতিষ্ঠা ও সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ।

[১] জাতীয় মুক্তি আন্দোলন: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন উপনিবেশে জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য বিরােধী এই মুক্তিসংগ্রাম চরমে পৌছােয়। এই উপনিবেশ বিরােধী আন্দোলন ঔপনিবেশিক শক্তিকে উদবিগ্ন করে তােলে। ব্রিটিশ, ফরাসি, ডাচ, স্পেনীয় শক্তিগুলি উপনিবেশগুলিকে স্বাধীনতা প্রদানে বাধ্য হয়। এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বহু দেশ জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের সুফল হিসেবে স্বাধীনতা লাভ করে।

[২] জাতীয়তাবাদী চেতনা: ঔপনিবেশিকতাবাদ অবসানের একটি মূল কারণ হল জাতীয়তাবাদী চেতনার জাগরণ। জাতীয় মুক্তির বাসনা উপনিবেশবাদ বিরােধী মানসিকতাকে তীব্র করে তােলে। ফলে অতীত ঐতিহ্যের জাগরণ শুরু হয়। ঔপনিবেশিক শক্তির শাসন ও শােষণ জাতীয় চেতনার উন্মেষে সাহায্য করে। জাতীয় চেতনার এই জাগরণের ফলেই এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ঔপনিবেশিক শক্তি হার মানে।

[৩] জাতীয়তাবাদী চেতনা: ঔপনিবেশিকতাবাদ অবসানের একটি মূল কারণ হল জাতীয়তাবাদী চেতনার জাগরণ। জাতীয় মুক্তির বাসনা উপনিবেশবাদ বিরােধী মানসিকতাকে তীব্র করে তােলে। ফলে অতীত ঐতিহ্যের জাগরণ শুরু হয়। ঔপনিবেশিক শক্তির শাসন ও শােষণ জাতীয় চেতনার উন্মেষে সাহায্য করে। জাতীয় চেতনার এই জাগরণের ফলেই এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ঔপনিবেশিক শক্তি হার মানে।

[৪] বিশ্বযুদ্ধের ক্ষতিকর প্রভাব: ইউরােপের বুকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে মিত্রশক্তি জোটের রাখা প্রতিশ্রুতির অন্যতম শর্ত হিসেবে বলা হয় যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর উপনিবেশবাসীরা স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক স্বায়ত্তশাসনের অধিকার লাভ করবে। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হবার পর সেই প্রতিশ্রুতি পালিত না হওয়ায় উপনিবেশবাসীরা জাতীয় আন্দোলন গড়ে তােলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যােগদান করে ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে, যার দরুন উপনিবেশ বিরােধী আন্দোলনগুলি দমন বা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা তারা হারায়।

[৫] মার্কিন ও সােভিয়েত ভূমিকা: সােভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই, মহাশক্তিধর রাষ্ট্র হয়ে ওঠার লক্ষ্যে উপনিবেশগুলিকে স্বাধীন করে নয়া উপনিবেশবাদের মাধ্যমে পরােক্ষভাবে নিজ নিজ রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা শুরু করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মূলত তিনটি কারণে ঔপনিবেশিকতাবাদের অবসান চায়। এই কারণগুলি হল- [i] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায়নি ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং স্পেনের মতাে পশ্চিমি শক্তিগুলি পুনরায় উপনিবেশগুলির সাহায্য নিয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠুক। [ii] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে ঘােষণা করা হয় যে, মিত্রশক্তিগুলি নিজ নিজ উপনিবেশগুলির প্রতি যুদ্ধের আগে ও পরে যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি রেখেছিল সেগুলি ঠিকমতাে পালন করুক। [iii] ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির অপসারণের পর বিশ্বরাজনীতির শূন্যতা পূরণে সােভিয়েতের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ইচ্ছুক ছিল।

[৬] রাষ্ট্রসংঘের গঠন: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাষ্ট্রসংঘ বা সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ গড়ে উঠলে উপনিবেশবাদের বিলুপ্তির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। রাষ্ট্রসংঘের গৃহীত কর্মসূচিতে উপনিবেশগুলির বিলুপ্তির প্রক্রিয়াকে দ্রুত কার্যকর করার ওপর জোর দেওয়া হয়। রাষ্ট্রসংঘের মহাসনদের একাধিক অনুচ্ছেদে উপনিবেশগুলিকে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার প্রদানের কথা বলা হয়। রাষ্ট্রসংঘের প্রস্তাবে বলা হয় প্রতিটি জাতি এবং রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও অধিকার লাভ করবে। উপনিবেশগুলির স্বাধীনতা লাভের লড়াইয়ে রাষ্ট্রসংঘের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বহু দেশ এগিয়ে আসে। ফলে ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি নিজ নিজ উপনিবেশ থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়।

[৭] নির্জোট আন্দোলন: নির্জোট আন্দোলন এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকা থেকে উপনিবেশবাদকে মুছে ফেলতে বিশেষ সাহায্য করে। নির্জোট সম্মেলনগুলিতে উপনিবেশবাদের বিরােধিতা করা হয়। নির্জোট দেশগুলির নেতৃবর্গ উপনিবেশবাসীদের স্বাধীনতার লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করে এবং স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়।