ভূমিকাঃ নীতিবিদ্যা সমাজে বসবাসকারী মানুষ এর আচরণ সম্পৰ্কীয় বিজ্ঞান। যা মানুষের আচরণ এর উপর নৈতিক অবধারণ প্রয়ােগ করার মাধ্যমে মানুষের আচরণ মূল্যায়ন করে। এ প্রসঙ্গে আচরণের স্বরূপ জানার জন্য। নীতিবিদ্যার উদ্দেশ্য এবং অভিপ্রায় সম্পর্কে আলােচনা করা হয়।
উদ্দেশ্য এবং অভিপ্রায়ের পার্থক্যঃ উদ্দেশ্য এবং অভিপ্রায় সম্পর্কে পার্থক্য জানার আগে আমাদের এদের সংজ্ঞাগত বিষয়বস্তু সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করা জরুরি।
উদ্দেশ্যঃ উদ্দেশ্য শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ Motive যা মানুষকে কোনাে কাজ করতে প্ররােচিত করে। এ প্রসঙ্গে বলা হয় এটি হলাে মানুষের একটি চালিকা শক্তি বা Diving force। উপযােগবাদীরা একে অনুভূতি অর্থে ব্যবহার করেন। আবার অন্যান্য ভাববাদী দার্শনিকরা একে কাম্য লক্ষ্যের ধারণা বলেন।
অভিপ্রায়ঃ অভিপ্রায় শব্দটি ইংরেজি Intention থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। অভিপ্রায় একটি মানসিক ধারণা। কোনাে বস্তু সম্পর্কে ব্যক্তির জন্য অভিপ্রায় সৃষ্টি হয় তখন ব্যক্তি এর অভাববােধ করে এরপর কাম্য বস্তুটি পাওয়ার কামনা পােষণ করে এরপর কাম্যবস্তুর প্রতি প্রবৃত্ত হয় এবং শেষে তা পাওয়ার পন্থা সম্পর্কে একটা স্পষ্টদৃষ্টি ও এর ফলাফল সম্পর্কে পূর্বদৃষ্টি রাখে।
পার্থক্যঃ উদ্দেশ্য এবং অভিপ্রায়ের মধ্যকার মূল পার্থক্যগুলাে নিম্নরূপ-
১. অভিপ্রায় সৃষ্টি হয় বাইরের জগতের কর্তার দ্বারা পূর্বসৃষ্ট প্রত্যাশিত ফলের দ্বারা। পক্ষান্তরে উদ্দেশ্য কর্তার নিজস্ব মনে অবস্থান থেকে সৃষ্টি হয়।
২. অভিপ্রায়ের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য, পন্থা ও ফলাফল জড়িত থাকে পক্ষান্তরে উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে পন্থা বা ফলাফল সম্পর্কে ধারণা থাকে না।
৩. অভিপ্রায় মানুষের ঐচ্ছিক ক্রিয়ার উচ্চতর স্তরে থাকে। পক্ষান্তরে উদ্দেশ্য ঐচ্ছিক ক্রিয়ার নিম্নতর স্তরে থাকে।
৪. অভিপ্রায়ের ক্ষেত্রে ফলাফলের পূর্বসৃষ্টি জড়িত কিন্তু উদ্দেশ্য এরকম কোনাে পূর্বসৃষ্টি দ্বারা সৃষ্টি হয় না। ৫.অভিপ্রায় এর সাথে উদ্দেশ্য জড়িত। পক্ষান্তরে উদ্দেশ্য অভিপ্রায়ের একটা অংশ মাত্র।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, উদ্দেশ্য এবং অভিপ্রায়ের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হলেও একটি কর্ম সৃষ্টিতে উৎসের ভূমিকা জড়িত এবং মানুষের কর্মের বা আচরণের স্বরূপ বুঝার জন্য এবং অবধারণ সৃষ্টিতে উভয়ের ভূমিকা অপরিসীম।
Leave a comment