কমিউনিজমের পতনের পর স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যে ভারসাম্য সংরক্ষণের বিষয়টিকে নিয়ে উত্তর কমিউনিস্ট দেশগুলি সমস্যার সম্মুখীন হয়। এই সমস্যার সুরাহার স্বার্থে বিদ্যমান রাজনীতিক, আর্থনীতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠাসমূহের রূপান্তর অপরিহার্য প্রতিপন্ন হয়। ইতিপূর্বে কোন দেশই রাজনীতিক, আর্থনীতিক, সামাজিক – তিনটি ক্ষেত্রেই এ রকম নাটকীয় পরিবর্তন সাধনের প্রয়োজনীয়তার মুখে পড়ে নি। স্বভাবতই এ বিষয়ে যথাসম্ভব বিস্তারিত আলোচনা আবশ্যক।
কমিউনিজমের পতনের পর রাজনীতিক ক্ষেত্রে নেতৃত্বমূলক ভূমিকা থেকে কমিউনিস্ট পার্টি অপসারিত হয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের ভূমিকা ও ভূমিকাক্ষেত্রের পরিবর্তন সাধনের ব্যাপারে নতুন নেতাদের ঘাড়ে দায়িত্ব এসে পড়ে। কমিউনিস্ট শাসনে রাষ্ট্রকে সামনে রেখে কমিউনিস্ট পার্টি ছিল সর্বশক্তিমান। নাটকীয় রাজনীতিক পরিবর্তনের পরে রাষ্ট্রক্ষমতা হ্রাস করার কথা বলা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রের ক্ষমতা হ্রাসের বিষয়টি মোটেই সহজসাধ্য নয়। কারণ কমিউনিজমের পতনের সাথে সাথে সমান্তরালভাবে রাষ্ট্রব্যবস্থাও বিশেষভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। অথচ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অতিমাত্রায় অপরিহার্য প্রতিপন্ন হয়। যাইহোক অনেক উত্তর-কমিউনিস্ট দেশে রাষ্ট্রের সামর্থ্য ও স্বাধীন অবস্থানকে সংকুচিত করার পরিকল্পনা গৃহীত হয়। কিন্তু রাষ্ট্রব্যবস্থাকে অকার্যকর করা হয়নি। কিন্তু এ ধরনের রাজনীতিক উদ্যোগ-আয়োজনকে সফল করা মোটেই সহজসাধ্য নয়।
শাসনব্যবস্থার প্রকৃতি: উত্তর-কমিউনিস্ট দেশগুলি রাজনীতিক ক্ষেত্রে বিবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়। সংশ্লিষ্ট সমস্যাদির কেন্দ্রীয় বিষয় হল শাসনবিভাগ ও আইন বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক সম্পর্কিত। কমিউনিস্ট আমলে প্রকৃত প্রশাসনিক কর্তৃত্ব ন্যস্ত ছিল কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদকের হাতে। রাষ্ট্র বা সরকারের প্রধানের ক্ষমতা ছিল গুরুত্বহীন। কমিউনিজমের পতনের পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার উপর কমিউনিস্ট পার্টির একচ্ছত্র আধিপত্যের অবসান ঘটে। স্বভাবতই শাসন বিভাগীয় ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্ব-বিবাদের সৃষ্টি হয়। ইউরোপীয় পার্লামেন্টীয় মডেল এবং মার্কিন রাষ্ট্রপতি-শাসিত মডেল—এই দুই মডেলের শাসনব্যবস্থার মধ্যে উত্তর কমিউনিস্ট দেশসমূহের কোন মডেলের শাসনব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত কিনা সে বিষয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। পশ্চিম ইউরোপের অধিকাংশ দেশে পার্লামেন্টীয় মডেল বর্তমান। কিন্তু উত্তর-কমিউনিস্ট অনেক দেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব্যবস্থার জন্য প্রবল প্রবণতা ও লোক দেখা দেয়। এই ঝোঁকের পিছনে কারণ ছিল। কমিউনিস্ট এলিটরা চাইছিলেন এমন একটি নতুন শাসন-প্রতিষ্ঠান যা আইনসভার নিয়ন্ত্রণমুক্ত হবে এবং হবে যথেষ্ট শক্তিশালী। রাষ্ট্রপতির পদই হবে এ রকম একটি অমিত শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে কমিউনিস্ট এলিটরা তাদের সাবেকি ব্যাপক ক্ষমতা পুনর্বিনিয়োগের সুযোগ পাবে। আবার কমিউনিস্ট বিরোধীরাও চাইছিল রাষ্ট্রপতি-শাসিত শাসনব্যবস্থা। এক্ষেত্রে স্বতন্ত্র যুক্তির ক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। রাষ্ট্রপতিকে জনসাধারণ সরাসরি নির্বাচিত করতে পারবে। জননেতা ও জনপ্রতিনিধি রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে কমিউনিস্ট শাসনের যাবতীয় চিহ্নের অবশিষ্টাংশকে ধুয়ে মুছে ফেলা সম্ভব হবে। তবে পূর্ব ইউরোপের অধিকাংশ উত্তর কমিউনিস্ট দেশ চূড়ান্ত বিচারে পার্লামেন্টীয় মডেলের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা শাসিত শাসনব্যবস্থা গ্রহণ করে। তবে পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত অনেক দেশই আধা-রাষ্ট্রপতি শাসিত বা পুরোপুরি রাষ্ট্রপতি-শাসিত শাসনব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা নির্মাণ: কমিউনিস্ট আমলের শাসনব্যবস্থা ছিল সর্বাংশে কর্তৃত্ববাদী। কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম ছিল দীর্ঘকাল। স্বভাবতই উত্তর কমিউনিস্ট আমলে দেশগুলি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার সুযোগ-সম্ভাবনা লাভ করে। গণতান্ত্রিক রাজনীতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রক্রিয়াটির সঙ্গে বহু ও বিভিন্ন কর্মসূচী সংযুক্ত। এই সমস্ত কর্মসূচীর মধ্যে কতকগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এগুলি হল: স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠার জন্য শাসনতন্ত্রের পুনর্লিখন বা সংবিধানের মৌলিক সংশোধন; নির্বাচনী নিয়মকানুন প্রণয়ন; বিচার বিভাগীয় সংস্থাসমূহের পুনর্গঠন; রাজনীতিক দলসমূহের নিয়ন্ত্রণ; সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ প্রভৃতি। এ সমস্ত কর্মসূচী এমনভাবে বাস্তবে রূপায়িত করতে হবে যাতে সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের সমর্থন সুনিশ্চিত হয়।
নির্বাচনী নিয়মকানুন প্রণয়ন: উত্তর-কমিউনিস্ট দেশগুলিতে নির্বাচনী বিধি-বিধান নিয়েও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। একদল মানুষ সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থাকে সমর্থন করেন। এঁদের যুক্তি অনুযায়ী সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে সরকারের মধ্যে বিভিন্ন মতাদর্শ ও ক্রিয়াকারীকে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হবে। তারফলে সরকারের বৈধতা বৃদ্ধি পাবে। বিরুদ্ধবাদীরা একপ্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচনী ক্ষেত্রের কথা বলেন। এই ব্যবস্থায় দুটি বড় রাজনীতিক দল গড়ে উঠবে এবং এই ব্যবস্থায় আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সুবিধা পাওয়া যাবে। উত্তর-কমিউনিস্ট অনেক দেশই সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নীতি গ্রহণ করে। আবার বেশ কিছু দেশ উপরিউক্ত দুটি নির্বাচনী ব্যবস্থার এক মিশ্র রূপকে গ্রহণ করে।
আইনের অনুশাসন প্রতিষ্ঠান: কমিউনিস্ট শাসনব্যবস্থায় আইনের অনুশাসন ছিল নিতান্তই দুর্বল। আইন ছিল কমিউনিস্ট পার্টির হাতের মুঠোয়। পার্টি নির্বিবাদে আইন প্রণয়ন, পরিবর্তন ও লঙ্ঘন করতে পারত হেলায়। এই কারণে কমিউনিস্ট আমলে আইন সম্পর্কে জনসাধারণের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল হতাশাপূর্ণ ও দোষদর্শী। এ রকম অবস্থায় আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতিজনিত সমস্যাদির সৃষ্টি হয়। কমিউনিজমের পতনের পর রাষ্ট্রের পীড়নমূলক ক্ষমতা প্রত্যাহত হয় এবং দুর্বল হয়ে পড়ে। কমিউনিস্ট পার্টি অপসারিত হওয়ার পর যারা ক্ষমতায় এল তাদের দায়িত্ব হল নিয়মকানুনের আইনী কাঠামো গড়ে তোলা এবং কার্যকর করা। কিন্তু কমিউনিস্ট জমানার মত ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের সুযোগ নিয়ে মর্জিমাফিক কাজ করা যাবে না। পরিবর্তিত পরিস্থিতি-পরিমণ্ডলে সমাজে আইনের অনুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। আইনের অনুশাসন এমনভাবে প্রবর্তন করতে হবে যাতে ব্যক্তিবর্গ স্বেচ্ছায় তা মান্য করে চলে; ব্যক্তিগত স্বার্থের সহায়ক না হলেও মান্য করে চলে।
নাগরিক আধিকার: কমিউনিজমের পতনের পর নাগরিক অধিকার সংরক্ষণের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। কমিউনিস্ট শাসনাধীনে সংবিধানে নাগরিকদের অধিকার ও স্বাধীনতাসমূহ বিস্তারিতভাবে বিধিবদ্ধ ছিল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে কমিউনিস্ট শাসনকর্তারা সাধারণত নাগরিক অধিকারসমূহকে উপেক্ষা করতেন। কমিউনিস্ট শাসনের অবসানের পর নতুন শাসনকর্তারা নাগরিক অধিকারসমূহের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও সংরক্ষণকে সুনিশ্চিত করার ব্যাপারে বিশেষভাবে দায়বদ্ধ হয়ে পড়েন। সংবিধানে কী ধরনের অধিকারকে বিধিবদ্ধ করা হবে? নাগরিক অধিকার সম্পর্কিত বিবাদ-বিরোধ মীমাংসার চূড়ান্ত ক্ষমতা কার হাতে থাকবে? এই সমস্ত বিষয়ে সত্বর সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরী হয়ে পড়ে। কমিউনিস্ট আমলে বিচার বিভাগ স্বাধীন বা শক্তিশালী ছিল না। উত্তর-কমিউনিস্ট আমলে সাংবিধানিক আদালতের ভূমিকাটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া আইনের অনুশাসনকে শক্তিশালী করা অপরিহার্য প্রতিপন্ন হয়।
উত্তর-কমিউনিস্ট আমলে রাজনীতিক রূপান্তরের মূল্যায়ন
পূর্ব ইউরোপ ও সোভিয়েত ইউনিয়নে কমিউনিজমের পতনের পর প্রায় দুর্দশক হতে চলল। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে রাজনীতিক রূপান্তরের ফলাফল কি হয়েছে সে বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। আইনের অনুশাসন, বাক্য ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, সমবেত হওয়ার অধিকার, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা, আর্থনীতিক ও মানবাধিকারসমূহের নিরাপত্তা, দুর্নীতির প্রকৃতি ও পর্যায় প্রভৃতির পরিপ্রেক্ষিতে উত্তর-কমিউনিস্ট আমলে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের রাজনীতিক পরিস্থিতি পরিমণ্ডলের আকৃতি-প্রকৃতি পর্যালোচনা করা যেতে পারে। উপরিউক্ত বিষয়াদির পর্যালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পর্যালোচনা করা সম্ভব হবে কেন সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে গণতান্ত্রিক রূপান্তর সফল হয়েছে, উদারনীতিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের অধিকাংশ দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নে বর্তমানে যোগদান করেছে। বেশ কিছু উত্তর-কমিউনিস্ট দেশ আইনের অনুশাসন ও গণতন্ত্রের লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে অগ্রবর্তী অবস্থান অর্জন করেছে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলির গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ যথেষ্ট সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুস্থির। এই সমস্ত দেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার মানও বেশ উন্নত। অনেকে এগুলিকে সুদৃঢ় গণতন্ত্র বলার পক্ষপাতী। হাঙ্গেরী, পোল্যান্ড ও চেকোশ্লোভাকিয়া প্রভৃতি মধ্য ইউরোপের এবং বালটিক রাষ্ট্রগুলি হল সুদৃঢ় গণতন্ত্র। উপরিউক্ত উত্তর-কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলিতে সুদৃঢ় গণতন্ত্র কায়েম হয়েছে। এর পটভূমি পর্যালোচনা করলে কতকগুলি কারণ স্পষ্টত প্রতিপন্ন হয়। এই কারণগুলি হল: বিভিন্ন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব; আইনের অনুশাসন; নাগরিক সমাজ; পশ্চিম ইউরোপের সঙ্গে অধিক সংযোগ সম্পর্ক; সংক্ষিপ্ত সময়ের কমিউনিস্ট শাসন; অধিকতর আর্থনীতিক উন্নয়নের প্রাক্ কমিউনিস্ট ইতিহাস প্রভৃতি।
পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসা অধিকাংশ উত্তর-কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক অবস্থা বেশ বেহাল। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে, ইউক্রেন, জর্জিয়া প্রভৃতি দেশের কথা বলা যায়। এই সমস্ত দেশের গণতন্ত্র উদারনীতিক নয়। সংশ্লিষ্ট অনেক দেশেই কোন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নেই, থাকলেও সেগুলি নিতান্তই দুর্বল। এ রকম কিছু দেশে কর্তৃত্ববাদী নেতারা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করেছে। এই সমস্ত কর্তৃত্ববাদী নেতাদের অধিকাংশই ছিলেন পূর্বতন কমিউনিস্ট ‘নোমেনক্লেচার’ (nomenklature)-এর সদস্য। এই দেশগুলি দীর্ঘকাল ধরে পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট শাসনাধীনে ছিল। এই দেশগুলির গণতন্ত্রের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা নিতান্তই কম। দারিদ্র্য এই দেশগুলির সঙ্গী। এই সব দেশে আইনের অনুশাসন অনেকাংশে অনুপস্থিত। অনেকদিন পরেও, এই দেশগুলি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে বেশীদূর এগোতে পারে নি; আইনের অনুবর্তিতার প্রশ্নেও পিছিয়ে। রাশিয়ার প্রসঙ্গেও এ কথা অনেকাংশে প্রাসঙ্গিক। এই সমস্ত উত্তর-কমিউনিস্ট দেশের শাসন ক্ষমতায় আসীন ব্যক্তিবর্গ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অসাধু উপায়ে নিজেদের বিত্তবান করেছেন। নাগরিক সমাজ এখানে দুর্বল। গণতান্ত্রিক অধিকার ও স্বাধীনতাসমূহ এখনও নিয়ন্ত্রিত। তবে সাম্প্রতিককালে সংশ্লিষ্ট উত্তর-কমিউনিস্ট দেশগুলিতে কিছু আশাব্যঞ্জক বা সদর্থক লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। ইউক্রেন ও জর্জিয়ায় ব্যাপকভাবে গণবিক্ষোভ সংগঠিত হয়েছে। গণবিক্ষোভের ঝড়ে নিজেদের সুরক্ষিতভাবে প্রতিষ্ঠিত নেতারা বহুলাংশে ধুয়ে মুছে গেছে।
কমিউনিজমের সমাপ্তি সব জায়গায় শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পথে হয়েছে, এমন নয়। ক্ষেত্রবিশেষে কমিউনিজমের সমাপ্তি সন্ত্রাসবাদ বিরোধী বিশ্বব্যাপী সংগ্রামের পথ প্রদর্শন ও প্রশস্থ করেছে। পূর্ব ইউরোপ ও পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের বাইরে অতি ধীর গতিতে গণতন্ত্রের বিস্তার ঘটেছে। তা ছাড়া কতকগুলি দেশে কমিউনিস্ট শাসন এখনও অব্যাহত। চীন, কিউবা, ভিয়েতনাম, উত্তর কোরিয়া ও লাওস-এ কমিউনিস্ট সরকারই ক্ষমতাসীন আছে। সংশ্লিষ্ট কমিউনিস্ট সরকারসমূহ কর্তৃত্ববাদী। উল্লিখিত কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলির মধ্যে একমাত্র চীনই উল্লেখযোগ্য আর্থনীতিক সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করেছে এবং তাৎপর্যপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে। এশিয়া ও আফ্রিকার অন্যান্য দেশে কমিউনিস্ট শাসনের পতন ঘটেছে। ক্ষেত্রে বিশেষে কমিউনিস্ট শাসনের অবসানের সঙ্গে সঙ্গে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে। ১৯৮৯ সালে আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত বাহিনী প্রত্যাহৃত হয়। সঙ্গে সঙ্গে দেশব্যাপী গৃহযুদ্ধ মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। ১৯৯৬ সাল অবধি দেশটি গৃহযুদ্ধের তাণ্ডবে দিশেহারা হয়ে পড়ে। তালিবানরা আফগানিস্তানের অধিকাংশ অঞ্চলে ক্ষমতা দখল করে। এই সময় লাদেন-এর নেতৃত্বাধীন আল কায়েদা-র কর্তৃত্ব কায়েম হয়। তারপর মার্কিন হস্তক্ষেপের ফলে রাজনীতিক পরিস্থিতির আবার পরিবর্তন ঘটে।
Leave a comment