মার্কসীয় দর্শনের ভাষ্য অনুযায়ী পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সুবাদে শিল্পায়নের ব্যাপক বিকাশ ও বিস্তার ঘটে। সঙ্গে সঙ্গে এ কথাও বলা হয় যে, পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সুবাদে গুরুতর অন্যায়-অবিচারের সৃষ্টি হয়। পুঁজিবাদ যে সংঘাত-সংঘর্ষের জন্ম দেয়, তার ফলে তার নিজের পতন ঘটে। পুঁজিবাদের ধ্বংসাবশেষের উপর কমিউনিজম গড়ে উঠে। কমিউনিজমের উদ্দেশ্য হল সম্পূর্ণ সাম্যভিত্তিক এক উন্নত সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলা। কিন্তু কমিউনিজম গড়ে তোলাটা সহজসাধ্য কাজ নয়। সমালোচকদের অভিমত অনুযায়ী কমিউনিস্ট ব্যবস্থার মধ্যে মানুষজন ব্যক্তিগতভাবে নিজেদের অভিব্যক্ত করতে খুব বেশী স্বাধীনতা পায় না। কঠিন পরিশ্রম বা আবিষ্কারমূলক কাজকর্মের জন্য উৎসাহ প্রদানমূলক কিছু দেওয়া হয় না। সংশ্লিষ্ট সমস্যাদির সমাধানের লক্ষ্যে গৃহীত ব্যবস্থাদির পরিণামে কমিউনিজমের পতন ঘটে।
পূর্ব ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের অধিবাসীরা ১৯৮৯ সালে কমিউনিজমের প্রতিষ্ঠানসমূহকে উপড়ে ফেলার জন্য উদ্যোগ-আয়োজন গ্রহণ করে। পৃথিবীর প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়ন। সোভিয়েত ইউনিয়নেরও কমিউনিস্ট কাঠামো ভেঙ্গে পড়ে। গুটি কয়েক কমিউনিস্ট রাষ্ট্র এখনও টিকে আছে। তারমধ্যে গণ-প্রজাতন্ত্রী চীনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তবে চীন তার কমিউনিস্ট কাঠামোর মৌলিক সংস্কার সাধনের ব্যাপারে দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ-আয়োজন গ্রহণ করেছে। অপরাপর কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলি হল কিউবা, ভিয়েতনাম ও উত্তর কোরিয়া। উল্লিখিত কমিউনিস্ট দেশগুলি বড় ধরনের কোন সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে নি। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতি-পরিমণ্ডলের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হয়।
স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যে সম্পর্ক সম্পর্কিত দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নিয়ে উত্তর কমিউনিস্ট রাষ্ট্রসমূহ এখনও বিশেষভাবে বিব্রত। অনাগত ভবিষ্যতে উত্তর-কমিউনিস্ট দুনিয়ার অবস্থা কী দাঁড়াবে সে বিষয়ে আগাম বলা অসম্ভব। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং সমষ্টিগত অসাম্য-বৈষম্য বেশ কয়েকটি দেশে বিশেষভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দারিদ্র্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে অধিকতর নাগরিক স্বাধীনতা সমূহের সৃষ্টি হয়েছে। দ্বন্দ্ব-বিবাদ বা সংঘাত-সংঘর্ষ আছে। সঙ্গে সঙ্গে সাবেকি ধাঁচের সমাজব্যবস্থারও পুনর্জন্ম ঘটছে। উত্তর-কমিউনিস্ট দেশগুলিতে নতুন ধরনের আর্থনীতিক, রাজনীতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। কিন্তু পূর্ববর্তী পুরাতন ব্যবস্থার ধ্বংসাবশেষের ভিত্তিতে নতুন ধরনের আর্থ-রাজনীতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যথেষ্ট দৃঢ়তার সঙ্গে। কিন্তু উত্তর-কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলি অদ্ভুত ধরনের বিবিধ সমস্যা ও সংঘাতের সম্মুখীন হচ্ছে।
উত্তর-কমিউনিস্ট সকল দেশের আর্থ-রাজনীতিক পরিস্থিতি অভিন্ন প্রকৃতির নয়। বিভিন্ন দেশে প্রক্রিয়াগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। কতকগুলি দেশে গণতান্ত্রিক ও পুঁজিবাদী ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ঘটেছে। অন্যান্য দেশগুলিতে কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত আর্থনীতিক ব্যবস্থা অব্যাহত আছে। কালের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির মধ্যে বৈসাদৃশ্য বৃদ্ধি পাবে ক্রমবর্ধমানভাবে। উত্তর-কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলি যে যার মত পথে অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু প্রত্যেকেরই উদ্দেশ্য হল স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যে ভারসাম্য সংরক্ষণ। ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় একই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বলশেভিক বিপ্লব সম্পাদিত হয়েছিল।
পুর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত উত্তর-কমিউনিস্ট অনেক রাষ্ট্রে আর্থনীতিক ক্ষেত্রে অবক্ষয় অথবা বন্ধ্যা দশার সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কর্তৃত্ববাদ ও রাজনীতিক অস্থিরতা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলি অর্ধোন্নত দুনিয়ার সামিল হয়ে পড়েছে। পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতে পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অধিকতর শক্তিশালী হয়েছে; আর্থনীতিক উন্নয়নও থেমে থাকেনি। অগ্রবর্তী গণতন্ত্র হিসাবে পরিণত হওয়ার পথে সংশ্লিষ্ট দেশগুলি অতি ধীর গতিতে অগ্রসর
Leave a comment