আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানে বাক্যবিশ্লেষণের ক্ষেত্রে বাক্যের ‘অব্যবহিত উপাদান’- এর ধারণাটি বহুদিন যাবৎ প্রচলিত আছে। কিন্তু উত্তর-আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানীরা বলেন যে, ভাষায় এমন অনেক বাক্য আছে বা হতে পারে যেগুলিকে ‘অব্যবহিত উপাদান’-এর সাহায্যে বিশ্লেষণ করা যায় না। যেমন- “আমি তাে দিঘায় গিয়ে অনেক ঝাউ আর কাজু গাছ দেখেছি।”
এই বাক্যের “অনেক ঝাউ আর কাজু গাছ দেখেছি” অব্যবহিত উপাদানে ভাঙা যায় না, কারণ তাহলে উপবাক্যের অর্থটি ক্ষুন্ন হবে। যেমন অনেক ঝাউ/আর কাজু গাছ দেখেছি। এভাবে ভাঙলে অনেক ঝাউগাছ দেখার কথা বােঝালেও কাজুগাছ দেখার পরিমাণটা অস্পষ্ট থাকে।
বাক্যের উপাদান নির্ণয়ে এই সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেন উত্তর-আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানী নােয়াম চমস্কি। তিনি এক্ষেত্রে পদগুচ্ছ সংগঠনতত্ত্ব’কেই গুরুত্ব দেন। আধুনিক ধারণা অনুযায়ী ‘পদগুচ্ছ সংগঠনের’ সাহায্যে বাক্যের প্রধান দুটি ভাগ দেখানাে হয়। বিশেষ্যখণ্ড ও ক্রিয়াখণ্ড। যেমন—উপরের বাক্যটিরও দুটি ভাগ—
(১) বিশেষ্যখণ্ড — আমি
(২) ক্রিয়াখণ্ড — দিঘায় গিয়ে তাে অনেক ঝাউ আর কাজু গাছ দেখেছি। এই ধরনের বিশ্লেষণের দ্বারা সবধরনের বাক্যকেই যাতে ভাঙা যায় বা বাক্যের উপাদানগুলিকে চিহ্নিত করা যায়, তার জন্য চমস্কি একটি সূত্রেরও আবিষ্কার করেন। একেই বলা হয় পদগুচ্ছের সংগঠনসূত্র (Phrase Structure Rules)। নােয়াম চমস্কি তাঁর ‘Syntactic Structure’ (1957) গ্রন্থে এই পদগুচ্ছ। সংগঠনের সূত্রগুলির বিষয়ে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা নীচে সহজ করে সংক্ষেপে আলােচনা করা হল—
সূত্র-১ : একটি বাক্যে থাকবে একটি বিশেষ্যখণ্ড ও একটি ক্রিয়াখণ্ড। যেমন—আমি তাে দিঘায় গিয়ে অনেক ঝাউ আর কাজু গাছ দেখেছি।
বাক্যে : বিশেষ্যখণ্ড — আমি
ক্রিয়াখণ্ড — দিঘায় গিয়ে তাে অনেক ঝাউ আর কাজু গাছ দেখেছি।
সূত্র-২ : ক্রিয়াখণ্ডে থাকবে একটি সমাপিকা ক্রিয়া এবং একটি বিশেষ্যখণ্ড। যেমন”দিঘায় গিয়ে তাে অনেক ঝাউ আর কাজু গাছ দেখেছি।”
ক্রিয়াখণ্ড : বিশেষ্যখণ্ড — দিঘায় গিয়ে তাে অনেক ঝাউ আর কাজু গাছ
সমাপিকা ক্রিয়া — দেখেছি।
সূত্র-৩ : বিশেষ্যখণ্ডে থাকবে নির্দেশক, বিভক্তি বা প্রত্যয় এবং একটি বিশেষ্য। যেমন—“আমি তাে”
বিশেষ্যখণ্ড : বিশেষ্য — আমি
নির্দেশক/প্রত্যয়/বিভক্তি — তাে।
এইভাবে আমরা সহজসরল বাক্য তৈরি করতে পারি আর তার পদগুচ্ছ সংগঠনকে ব্যাখ্যা করতে পারি।
বাক্যগঠন তত্ত্ব অনুসারে অধিগঠন ও অধােগঠন প্রক্রিয়া কাকে বলে লেখাে এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয় করাে।
গঠনগত দিক থেকে বাক্যকে কটি ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী? উদাহরণ-সহ প্রত্যেকটি ভাগের পরিচয় দাও।
বাংলা বাক্যের ভঙ্গিগত শ্রেণিবিভাগ করে তাদের বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করাে।
অথবা, ভঙ্গিগত দিক থেকে বাক্যের শ্রেণিবিভাগ করাে। যে-কোনাে এক প্রকারের উদাহরণসহ পরিচয় দাও।
অথবা, বাক্যের অর্থগত শ্রেণিবিভাগগুলি আলােচনা করাে।
বাংলা বাক্যের প্রধান দুটি অংশ এবং তাদের বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যাখ্যা করাে।
গঠন অনুসারে বাক্যকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায় এবং কী কী? প্রত্যেক ভাগের একটি করে উদাহরণ দাও।
শব্দার্থের প্রসার ও শব্দার্থের রূপান্তর বলতে কী বােঝ?
অথবা, শব্দার্থ-পরিবর্তনের ধারাগুলি উল্লেখ করাে। যে-কোনাে দুটি ধারার উদাহরণসহ পরিচয় দাও।
বাক্যতত্ত্ব কাকে বলে? এই ক্ষেত্রে ফার্দিনান্দ (ফের্দিনা) দ্য সােস্যুর (Ferdinand De Saussure)-এর অবদান সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
গঠনগত দিক থেকে বাক্য কত প্রকারের? যে-কোনাে এক প্রকারের উদাহরণসহ পরিচয় দাও।
বাক্যের অব্যবহিত উপাদান বিশ্লেষণ বলতে কী বােঝ? উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও।
অন্তর্মুখী এবং বহির্মুখী বাক্যগঠন—এই দুই প্রকার গঠনগত প্রকৃতি পর্যালােচনা করাে।
বিশেষ্যজোট, অনুসর্গজোট, ক্রিয়াজোট এবং ক্রিয়াবিশেষণজোট সম্পর্কে আলােচনা করাে।
শব্দার্থতত্ত্ব কাকে বলে? শব্দার্থতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়টি সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
Leave a comment