মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্তির পর পরবর্তী দু-বছরের শিক্ষাস্তর হল উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা। কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এই শিক্ষার দায়িত্বে থাকবে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে এই শিক্ষার অগ্রগতির পথে অনেক সমস্যা রয়েছে। নিম্নে এরকম কিছু সমস্যার উল্লেখ করা হল— 

(১) বিদ্যালয়ের অভাব: উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা লয়ের সংখ্যা কম। থাকায়, মাধ্যমিক পাস করার পর অনেক শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ভর্তি হতে পারে না। যার ফলে অনেক শিক্ষার্থী এরপর পড়াশোনা ছেড়ে দেয়।

(২) উপযুক্ত শিক্ষকের অভাব : উচ্চ বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষকের বড়াে অভাব। আর্থিক সমস্যার কারণে ও প্রশাসনিক কারণে বিদ্যালয়ের শূন্য পদগুলো পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না, ফলে পঠন পাঠন ব্যাহত হচ্ছে।

(৩) বৃত্তি শিক্ষার সুযোগের অভাব : এই স্তরে সাধারণ ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও বৃত্তিমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা সেভাবে থাকে না, ফলে অনেক শিক্ষার্থী এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।

(৪) ত্রূটিপূর্ণ পাঠ্যক্রম : উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরের শিক্ষায় অপর এক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হল, তথ্যনির্ভর, বৈচিত্র্যহীন, একঘেয়ে পাঠক্রম যা শিক্ষার্থীদের কাছে খুব একটা আকর্ষণীয় থাকে না।

(৫) পরীক্ষাগারের অভাব : এই স্তরের অপর সমস্যা হল, এই শিক্ষার পাঠক্রমে তাত্ত্বিক শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহারিক শিক্ষার উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হলেও এখনও অনেক বিদ্যালয়ে উপযুক্ত পরীক্ষাগারের ব্যবস্থা করা যায়নি।

(৬) গ্রন্থাগারের অভাব : উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের শিক্ষার্থীদের নিজেদের পাঠ্যবই ছাড়াও আরও অনেক সাহায্যকারী পুস্তক পড়তে হয় বা অনেকরকমের জ্ঞান অর্জন করতে হয়, কিন্তু বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগারের ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীদের বিশেষ অসুবিধা হয়।

(৭) ত্রূটিপূর্ণ পরীক্ষা ব্যবস্থা : এই স্তরের বিদ্যালয়গুলিতে পরীক্ষার বদলে মূল্যায়ন ব্যবস্থা সঠিকভাবে চালু করা যায়নি, ফলে এই বয়সের ছেলেমেয়েদের সর্বক্ষেত্রে সঠিক মূল্যায়ন করা যায় না।

(৮) প্রশাসনিক সমস্যা : সর্বশেষ, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে প্রশাসনিক সমস্যা বিদ্যালয় পরিচালনায় অনেক ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

(৯) ভর্তির সমস্যা : বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থী মাধ্যমিক পাস করে। সেই তুলনায় উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় কম, ফলে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি করা কঠিন হয় আসন সংখ্যা কম থাকায়।

(১০) আর্থিক সমস্যা : উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা স্তর হল বহুমুখী শিক্ষার স্তর, এই স্তরে শিক্ষার্থীরা চাহিদা ও প্রবণতা অনুযায়ী শিক্ষালাভ করতে পারে। কিন্তু অর্থের অভাবে সেই ধরনের পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করা সবসময়ে সম্ভব হয় না, যা এই শিক্ষার অগ্রগতির পথে বড় বাধা।

উপরোক্ত সমস্যা গুলো ছাড়াও রয়েছে অন্যান্য বিভিন্ন সমস্যা, তবে কোঠারি কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এই সকল সমস্যার দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে।