বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার উন্নত মান ও সাফল্য নির্ভর করে যােগ্য, প্রতিভাবান উপযুক্ত শিক্ষকের উপর। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কার ও উন্নতির জন্য জ্ঞানীগুণী সুশিক্ষক অবশ্যই প্রয়ােজন। শিক্ষাদান করাই শিক্ষক নিয়ােগের মৌলিক উদ্দেশ্য। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানীগুণী অধ্যাপকের সমাবেশ অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সমস্ত অধ্যাপকদের একমাত্র কর্তব্য হবে শিক্ষার্থীর মনকে বিষয় সম্পর্কে অনুসন্ধিৎসু করা ও তাদের মধ্যে সমালােচনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা।

কেবলমাত্র জ্ঞানগর্ভ ভাষণেই যেন তাদের শিক্ষাদান সীমিত না হয়, কারণ কিছু পরিমাণ তথ্য অথবা তত্ত্ব পরিবেশন করলেই শিক্ষাদান সম্পূর্ণ হয় না। সেইসঙ্গে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সম্পর্ককে মধুর করতে হবে। প্রকৃত শিক্ষক হবেন তিনি, যিনি কেবলমাত্র পুথিগত বিদ্যা অনুশীলনে ব্যাপৃত না থেকে শিক্ষাদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠার জন্য তাদের চরিত্র গঠনে সহায়তা করবেন।

উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষক সম্পর্কিত সমালােচনা

কমিশন তকালীন শিক্ষকের কাজও কর্তব্যের সমালােচনা করে বলেছে যে, শিক্ষকের গুণগত মানও যােগ্যতার অভাবে শিক্ষার অবনতি ঘটেছে। অনেক শিক্ষক শিক্ষাদানকে গৌণ করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় অংশগ্রহণে অধিক আগ্রহী। উপরন্তু অনেকে রাজনীতিকে প্রাথমিক কর্ম হিসেবে গ্রহণ করে শিক্ষকতাকে দ্বিতীয় কর্তব্য হিসেবে গণ্য করেছেন।

শিক্ষকদের নিম্ন বেতনের জন্য বহু প্রতিভাশালী ব্যক্তি শিক্ষকতার পেশা গ্রহণ করেন না। রাজনীতিবিদগণ দলীয় প্রভাবে অনেকসময় অযােগ্য ব্যক্তিকে শিক্ষকপদে নিযুক্ত করতে সাহায্য করেন। কমিশন বলে- “The teacher is the corner stone of the arch of education; he is no less if not more than books and curricular, buildings and equipment, administration and test”

কমিশন সুপারিশ করে যে—

(১) শিক্ষকদের শিক্ষাগত যােগ্যতা বিচার করে নিয়ােগ করতে হবে এবং শিক্ষকদের প্রফেসর, রিডার, লেকচারার, ইন্সট্রাকটর চারটি শ্রেণিতে বিন্যস্ত করতে হবে।

(২) শিক্ষক ছাড়া কয়েকজন গবেষক (Research fellow) নিয়ােগ করতে হবে।

(৩) যােগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে শিক্ষকদের পদোন্নতি হবে।

(৪) বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন সমগ্র ভারতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতন কাঠামাের বিভিন্নতা লক্ষ করে। কলেজগুলিতে এই বেতন কাঠামাে বিশ্ববিদ্যালয় বেতনকাঠামাের থেকে আলাদা ছিল। সরকারি এবং বেসরকারি কলেজগুলির মধ্যে বেতনকাঠামাের পার্থক্য ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের মতে এই বিভিন্নতাকে যতটা সম্ভব কমিয়ে ফেলে বেতনকাঠামাের মধ্যে সমতা বিধান করতে হবে। এই বৈষম্য কাঠামাের কয়েকটি উদাহরণ ১৯৪৮ এর রাধাকৃষ্মণ কমিশনের মূল রিপাের্টে পাওয়া গেছে।

আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতন কাঠামাে一

প্রফেসর → ২৫০-১৫……..৪০০-২০-৫০০ টাকা

রিডার → ২০০-১০-৩০০ টাকা । 

লেকচারার → ১৫০-১০-২৫০ টাকা। (গ্রেড |)

লেকচারার → ১০০-১০-১৫০ টাকা। (গ্রেড় ||)

মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতন কাঠামাে

প্রফেসর→৭৫০-৫০-১০০০ টাকা । 

রিডার → ৪০০-২৫-৬০০ টাকা। 

লেকচারার → ২১০-১৫-৩০০ টাকা ।

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতনকাঠামাে

প্রফেসর→ ৮০০-৫০-১২৫০ টাকা 

রিডার→ ৫০০-৩০-৮০০ টাকা। 

লেকচারার→ ২৫০-২৫-৫০০ টাকা

(৫) প্রত্যেক শিক্ষককে ৬০ বছর বয়সে অবসর গ্রহণ করতে হবে। অবশ্য যােগ্য শিক্ষকের কর্মদক্ষতা থাকলে তার কার্যকাল ৬৪ বছর পর্যন্ত বাড়ানাে চলবে।

(৬) শিক্ষকদের চাকুরির অবস্থা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, কাজ করার সময়, ছুটির সময় প্রভৃতি সুষ্ঠুভাবে প্রণয়ন করে স্থিরীকৃত হবে।

(৭) যােগ্য শিক্ষকের গুরুত্ব ও দায়িত্বকে স্বীকৃতি দিতে হবে।

(৮) কমিশনের মতানুযায়ী, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে শিক্ষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে সিনিয়র ও জুনিয়র শিক্ষকের হার হবে ১:২।