উচ্চতা ভীতি কী?
উচ্চতা ভীতি বা altitude sickness হল স্বাভাবিক স্থান হতে হঠাৎ অধিক উঁচু কোন জায়গায় উঠলে অসুস্থতা বোধ হওয়া কে বুঝায়।
যেমন মাথা ঘুরানো, হাত পা কাঁপা, বমি বমি ভাব হওয়া বা চোখে ঝাপসা দেখা। এছাড়া আরও কিছু অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে এসব লক্ষণ অধিক হারে প্রকাশ পেতে পারে আবার কারো ক্ষেত্রে খুব অল্প মাত্রায় প্রকাশ পায়। তবে অধিক উঁচু স্থানেই এসব লক্ষণ অধিক হারে প্রকাশ পায়।
বাস্তব কোন অভিজ্ঞতার কথা ভেবে দেখুন তো যখন কোন ভ্রমণ বা এডভেঞ্চারে গিয়ে উঁচু কোন পর্বত বা টাওয়ারে উঠেছিলেন। উঠতে গিয়ে নিশ্চয়ই টের পাচ্ছিলেন যে আপনার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে বা ধীরে ধীরে আপনার হাত পা অবশ হয়ে আসছে। অথবা অন্য কোন অসুস্থতার লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছিল। হ্যাঁ, এটাই উচ্চতা ভীতি। এখন মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে কেন এমন হয় আর কাদেরই বা এরকম বেশি হয়। হ্যাঁ, এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর গুলোই জানব আজ।
উচ্চতা ভীতির কারণ
আগেই বলেছি উচ্চতা ভীতি তখনই হয় যখন আমরা স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক উঁচু কোন স্থানে উঠে থাকি। এই অধিক উচ্চতার কারণে আপনার স্বাভাবিক অবস্থানের সাথে উঁচুতে অবস্থানের কিছু পরিবেশগত পার্থক্য ঘটে। এসকল পার্থক্যের মধ্যে বায়ুর চাপের পরিবর্তন, তাপমাত্রার পরিবর্তন, অক্সিজেনের ঘনমাত্রা হ্রাস প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
ভূমিতে আমরা নির্দিষ্ট একটি বায়ুচাপ বা তাপমাত্রায় থেকে অভ্যস্ত। আবার অক্সিজেনের ঘনমাত্রারও খুব একটা তারতম্য হয় না। ফলে আমাদের বডি সেল গুলো একটি নির্দিষ্ট পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেয়। এখন আপনি যখন উঁচু কোন স্থানে উঠবেন সেখানে এই উপাদানগুলোর পরিবর্তন ঘটবে। আমাদের শরীর এই পরিবর্তনের সাথে অতটা দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। ফলে বডি সেল গুলোতে বিভিন্ন অসংগতি দেখা দেয় যার বহিঃপ্রকাশ গুলোই হল বিভিন্ন অসুস্থতার লক্ষণ। যেমন মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পৌঁছালে মাথা ঘুরতে থাকবে, চোখ ঝাপসা হবে এবং আরও কিছু লক্ষণ প্রকাশ পাবে।
একটু সহজভাবে বিষয়টি আলোচনা করা যাক। ধরুন, আপনি যে পরিবেশে বসবাস করেন সেখানে প্রতি নিঃশ্বাস এর সাথে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন গ্রহণ করে থাকেন। এই অক্সিজেন রক্তের মাধ্যমে আমাদের দেহের বিভিন্ন কোষে চলে যায়। নিয়মিত এমন টা ঘটার কারণে আপনার শরীরের কোষগুলো প্রায় একই রকম অক্সিজেনের সরবরাহের সাথে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এবার যখন উঁচু কোন স্থানে ভ্রমণে যাবেন সর্বপ্রথম যে বিষয়টা আপনাকে ভোগাবে তা হল অক্সিজেনের স্বল্পতা। যত উপরের দিকে উঠতে থাকবে তত অক্সিজেনের পরিমাণ কমতে থাকবে। এ জন্যই পর্বতারোহীরা পর্বত আরোহণ এর সময় সংগে করে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে যান। ভ্রমণের জন্য হয়তো তাদের মত অত উঁচু পর্বতে আপনাকে উঠতে হবে না। তবে যতটুকু উপরেই উঠুন না কেন অক্সিজেনের ঘনমাত্রা কমতে থাকবে। ফলে আপনার প্রতি নিঃশ্বাস এ পূর্বের তুলনায় কম অক্সিজেন প্রবেশ করবে আপনার শরীরে এবং ধীরে ধীরে শরীরের স্বাভাবিক কার্যকলাপে বিঘ্ন ঘটবে।
শুধু অক্সিজেনের ঘনত্ব হ্রাসই নয়, উঁচুতে উঠতে থাকলে তাপমাত্রা কমতে থাকে। সে সাথে বায়ুর চাপ ও কমে যায়। আর এসব পরিবর্তনই মূলত উচ্চতা ভীতি তৈরি করে থাকে।
উচ্চতা ভীতি যাদের ক্ষেত্রে বেশি মাত্রায় প্রকাশ পায়
১। প্রথমত যারা প্রথম বারের মত কোন উঁচু স্থানে ওঠেন তাদের ক্ষেত্রে এমন হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
২। যাদের হার্ট বা ফুসফুসের জটিলতা রয়েছে।
৩। গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশি লক্ষ করা যায়। লিফটে কোন বহুতল ভবনে উঠতে গেলে তারা এ সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।
৪। যাদের পূর্বে উচ্চতা ভীতির কোন তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে।
এসব ক্ষেত্র ছাড়াও কম বেশি সকলের ক্ষেত্রেই কোন না কোন লক্ষণ প্রকাশ পায়।
উচ্চতা ভীতি হওয়া কি স্বাভাবিক?
হ্যাঁ, এটি একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় ঘটনা। যে কোন মানুষের ক্ষেত্রে এটি ঘটতে পারে। এমনকি আপনি যখন নিচে ফিরে আসবেন ধীরে ধীরে অসুস্থতা বোধ কমে যেতে থাকবে। তবে যাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেক বেশি তাদের অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ মেনে এমন স্থানে ভ্রমণ করা উচিত।
কমেন্ট বক্সে লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত জানান |
Leave a comment