ভূমিকা: উনবিংশ শতকের প্রথম থেকে বাংলা সাহিত্যে আধুনিক যুগের সূত্রপাত এবং এ যুগের প্রথম কবি হিসেবে ঈশ্বরগুপ্তের [১৮১২-৫৯] আবির্ভাব। তিনি বাংলা সাহিত্যে ‘যুগসন্ধিক্ষণের কবি’ কবি হিসেবে পরিচিত। অষ্টাদশ শতকে এ দেশে কবি গানের আবির্ভাব ঘটে এবং এ কবি গানের শেষ প্রতিনিধি হিসেবে ঈশ্বরগুপ্তের আবির্ভাব। তিনি বাংলা সাহিত্যের মধ্য ও আধুনিক যুগের সন্ধিস্থলে দাঁড়িয়ে সব্যসাচীর মতো দু’হাত দু’দিকে প্রসারিত করেছেন। অতীতপ্রিয়তা এবং নবীনত্বের দ্বন্দ্বে গুপ্ত কবির মানস সতত দ্বৈততার জন্ম দিয়েছে- এজন্যই তিনি ‘যুগসন্ধিক্ষণের কবি’। সেকালের অসংখ্য সাধারণ বাঙালি চিত্তের মতোই। সেই যুগসংঘর্ষের গরল ও অমৃত উভয়েই। কবি ঈশ্বর গুপ্তের চিত্তে সঞ্চিত হয়েছিল।

ঈশ্বর গুপ্ত উনবিংশ শতকের আধুনিক যুগের প্রথম কবি। সমালোচক ড. সুকুমার সেন এর ভাষায়’ ঈশ্বরগুপ্ত যুগ সন্ধির কবি’। নতুন ও পুরাতন যুগের সন্ধিস্থলে দণ্ডায়মান থেকে পুরাতন প্রবাহকে অব্যাহত রেখেই তিনি নতুনের জন্যে খাল খনন করে তাতে নব নব ধারা প্রবাহিত করেছেন। তাঁর প্রচেষ্টাতেই বাংলা কবিতা সম্ভ্রমহীন গ্রাম্যতা থেকে মুক্তি চেয়ে নবজীবন ও মুক্তি লাভ করেছে। বস্তুত বাংলা কাব্য সাহিত্যে পুরাতন ধারায় তিনি শেষ কবি এবং নতুন ধারার তিনি উদ্যোক্তা। একদিকে তিনি হরু ঠাকুর, রামবসু, রামনিধি গুপ্ত, গোঁজলা গুঁই, নিতাই বৈরাগী প্রভৃতি কবিকূলের শেষ ও সক্ষম প্রতিনিধি। অন্যদিকে বঙ্কিমচন্দ্র, দীনবন্ধু, রঙ্গলাল ও মনমোহন বসুর গুরু ও শিক্ষাদাতা তিনিই। নতুন ও পুরাতনের সংঘর্ষে যেখানে পথ বিপর্যয় ঘটেছে ঠিক সেখানেই তিনি আপনাকে ‘মাইলস্টোনের মতো মৃত্তিকা গড়ে প্রোথিত’ রেখে বিরাজ করেছেন। বাংলা সাহিত্যের মধ্য ও আধুনিক যুগের সন্ধিস্থলে দাঁড়িয়ে ঈশ্বর গুপ্ত সব্যসাচীর মতো দু’হাতে দুদিকের নির্দেশ করেছেন। মধ্যযুগের অবসানের পর এবং আধুনিক যুগের যথার্থ সূত্রপাতের পূর্বে তিনি কাব্য সাধনায় খ্যাতিলাভ করেন।

রচনাবলি: ঈশ্বর গুপ্তের সাহিত্যকীর্তির মধ্যে স্বরচিত কাব্য ছাড়াও রয়েছে সাময়িকপত্র সম্পাদনা ও নব্য
সাহিত্যিকদের উৎসাহ দান এবং পূর্ববর্তী সাহিত্যিক জীবনী বা রচনার উদ্ধার সাধন। তিনি ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে সাপ্তাহিক পত্ররূপে যে ‘সংবাদ প্রভাকর’ সম্পাদনা আরম্ভ করেন, ১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দে এটিই বাংলাভাষায় রচিত প্রথম দৈনিক পত্রের মর্যাদালাভ করে। ঈশ্বরচন্দ্রের জীবিতকালে প্রকাশিত রচনাবলির মধ্যে রয়েছে- ১. ‘কবিবর রামপ্রসাদ সেনের ‘কালীকীর্তন’ (১৮৩৩), ২. ‘কবিবর ভারতচন্দ্র রায় গুণাকরের ‘জীবনবৃত্তান্ত’ (১৮৫৫) ও ৩. ‘প্রবোধ প্রভাকর’ (১৮৫৮)। তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় ‘হিতপ্রভাকর’ (১৮৬১), ‘বোধেন্দুবিকাশ’ নাটক (১৮৬৩), এবং ‘সত্যনারায়ণ পাঁচালী’ (১৮১৩)। তিনি ‘কলি নাটক’ নামে একখানা নাটকও রচনা করেছিলেন বলে জানা যায়।

ঈশ্বর গুপ্ত বিশেষ কোনো এক কাব্য সৃষ্টির যুগেও জন্মগ্রহণ করেননি বা স্বকীয় প্রতিভা দ্বারা বিশেষ কোনো যুগকেও সৃষ্টি করে যেতে পারেননি। ঈশ্বর গুপ্তের বৈশিষ্ট্য রচনা করেছিলেন তখন ভারতচন্দ্রের গৌরব যুগ সমাপ্ত, পালা-কাহিনির গানের সাথে কবিয়ালদের ব্যক্তি বৈশিষ্ট্য বুদ্ধিমত্তা, মেধা, প্রতিভা, সমাজকে ও লৌকিক পরিবেশ সবই এক সাথে মিশে ছিল। সে যুগের পুঁথি, খেউড়, হাফ আখড়াই, কবিগণের যুগেই ঈশ্বর গুপ্তের কাব্যের পটভূমিকা। জন সাধারণের কাব্যরস তৃপ্তির জন্য এসব লৌকিক সংগীতের প্রচলন হয়েছিল। এদের মূল কাহিনি পৌরাণিক ভক্তিমূলক হলেও মুখ্যরস ছিল আদিরস- ভাঁড়ামি ও কুরুচিপূর্ণ রসিকতা দিয়ে আসর জমিয়ে রাখা হত। এদের উপর ভিত্তি করেই আধুনিক যুগের কিছুটা মনোভাব গ্রহণ করে ঈশ্বর গুপ্ত এগিয়ে এলেন ‘সংবাদ প্রভাকরে’র (১৮৩১) পসরা নিয়ে। এ প্রসঙ্গে সমালোচক ড. রেনুপদ ঘোষ লিখেছেন,

“বাঙালি পাঠকের আকাঙ্ক্ষা ও আগ্রহ পূরণের উপকরণ নিয়ে ঈশ্বর গুপ্ত সংবাদপত্রের জগতে প্রবেশ করেছিলেন। ঈশ্বর গুপ্তের প্রভাকরে প্রকাশিত কবিতায় লঘু চটুল হাস্যরসে শ্লেষে-অলঙ্কারে, বাললোভন ঝুমঝুমির মতো এর শব্দসম্ভারে সহজেই সেকালের সাধারণ পাঠকের মন জয় করে নিতে পেরেছিলেন।”

ঈশ্বর গুপ্তের রচনায় যুগসন্ধির প্রভাব অত্যন্ত প্রকট। তার শিল্পীসত্তার দ্বৈতরূপ একদিকে তাকে সেকালের আধুনিকদের অগ্রণী, পরবর্তী কালের সমৃদ্ধ আধুনিক যুগের পথিকৃৎ করেছে, অন্যদিকে তিনি ছিলেন একান্ত আধুনিক, প্রাচীনের স্বকীয়তাহীন অনুবর্তী মাত্র। মূলত বিষয় নির্বাচনে তিনি আধুনিক। তাঁর বিষয় নির্বাচনের বস্তুসচেতনতা মধ্যযুগের কবি মুকুন্দরাম বা ভারতচন্দ্রের অনুকৃত। তবে কবির বিষয় দৃষ্টিতে অতুল্য যে সুর প্রসারতা ও সার্বভিমুখিতা তা তাঁর নিজস্ব। তিনি জীবনের প্রতিটি বিষয় ও উপাদানকে বিচ্ছিন্ন, একক স্বতন্ত্র্য মূল্যে খুঁটিয়ে দেখেছেন। এই অনন্য নিরপেক্ষ
স্বাতন্ত্র্যময় পুঙ্ক্ষানুপুঙ্ক্ষতা তাঁর আধুনিক দৃষ্টির পরিচয়।

পুরাতন যুগের সাথে ঈশ্বর গুপ্ত গভীরভাবে সংযুক্ত ছিলেন। নবযুগের সংবাদপত্রের সম্পাদক হয়েও তাঁর প্রাচীন অভ্যাস সর্বদা ত্যাগ করতেও পারেননি। তাঁর পাঠকদের তিনি কখনো কখনো শ্রোতাগণ বলেও উল্লেখ করেছেন। তখনকার বাংলাদেশের সময়ে যে প্রতিনিয়ত কবির লড়াই হতো, কবি সেই লড়াইয়েও অবতীর্ণ হয়েছিলেন। অতীতের দিকে তাঁর টান ছিল। আখড়াই ও যাত্রাদলের জন্য ছিল দরদ। ‘ইচ্ছা’ তাঁর প্রিয় বিষয়। রক্ষণশীল মনোভাব তার কবিতাকে প্রাচীনের অনুসারী করেছে। তার রঙ্গব্যঙ্গ প্রবণতা, কৌতুক রস সৃষ্টির দিকে বিশেষ ঝোঁক, অনুপ্রাস যমকের অতিশয্যে চমক লাগানোর প্রয়াস, তার উচ্চকণ্ঠ হাসিহল্লা- এ সবই কবিওয়ালদের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সংযোগের প্রমাণ। বাঙালির অন্ত ঃপুরের দ্বিবিশ ভোজসেবা নিয়ে ঈশ্বর গুপ্ত যেসব কবিতা রচনা করেছেন তাও কবিয়ালদের প্রভাব জনিত। এ বিষয়ে ‘পাঁ, ‘এডাওয়াল তপস্যা মাছ’, ‘আনারস’, ‘পৌষপার্বন’ প্রভৃতি কবিতার নাম উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ঈর্ষা ও আকাঙ্ক্ষা বিড়ম্বিত গার্হস্থ্য জীবন এবং এর কলহপরায়ণা, স্কুল রুচি, রন্ধন ও ঢেঁকিশালের কুশ্রী পরিবেশে অধিষ্ঠিত বঙ্গ নারীর ব্যঙ্গচিত্র বোধ হয় ঈশ্বরগুপ্তের কবিতায় শেষবারের মতো অঙ্কিত হয়েছে। দৃষ্টান্ত:

“এইরূপ ধূমধাম প্রতি ঘরে ঘরে।

নানামত অনুষ্ঠাত আমারের তরে।

তাজা তাজা ভাজা পুলি ভেজে ভেজে তোলে।

সারি সারি হাঁড়ি হাঁড়ি করে কোলে।

কেহ বা পিটুলি মাখে কে কাই গোলে।” (পৌষ পার্বণ)

এসমস্ত ক্ষেত্রে তাঁর কাব্যে নবযুগের কোন বৈশিষ্ট্য দেখা যায় না। বাংলার এ লৌকিক ও মধ্যযুগীয় বৈশিষ্ট্য তাঁর কাব্যকে প্রাচীনপন্থি করে রেখেছে। ঈশ্বর গুপ্ত ছিলেন রক্ষণশীল মানসিকতার অধিকারী। তাঁর প্রাচীনপন্থি কবিতাতে আধুনিকতার অনেক কিছুকেই অস্বীকার করা হয়েছে। তিনি আধুনিক শিক্ষিতা নারীর আচরণের নিন্দা করেছেন। যেমন-

“লক্ষী খেয়ে যারা ছিল,

তারাই এখন চড়বে ঘোড়া, চড়বে ঘোড়া।

ঠাট চমকে চালাক চতুর

সভ্য হবে থোড়া থোড়া।।

…………………….

আর কি এরা আসর কোয়ে

পিড়ি পেতে অন্ন নেবে।” (বাঙালির মেয়ে)

তিনি বিধবা বিবাহও সমর্থন করেননি। কবির আক্রমণাত্মক মনোভাব থেকে বিধবা-বিবাহের সমর্থকরাও রেহাই পাননি। এ ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগর ও তাঁর ব্যাঙ্গের হাত থেকে রক্ষা পাননি। বিধবা বিবাহ সম্পর্কে বিদ্যাসাগরকে তিনি কবিতার মাধ্যমে আক্রমণ করেছেন। যেমন-

“অগাধ সাগর বিদ্যাসাগর তরঙ্গ তায় রঙ্গ নানা।
তাতে বিধবাদের কুলতরী অকূলেতে কূল পেল না।।”

ঈশ্বর গুপ্তের কাব্যে এভাবে প্রাচীনতায় ছাপ থাকলেও নবযুগের সংযুক্তি লক্ষ করা যায়। তাঁর কাব্যে প্রথমবারের মতো সমাজ সচেতনতার পরিচয় ফুটে উঠেছিল। তিনি সমসাময়িক ঘটনা অবলম্বনে অনেক কবিতা রচনা করেছেন। তাঁর কবিতায় আমরা আধুনিক যুগের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে নিসর্গচেতনা, ব্যক্তি অনুভূতির প্রকাশ, স্বদেশ প্রেম, ইতিহাস চেতনা, পরিবেশ সচেতনতা প্রভৃতি লক্ষ করি। হিন্দু সমাজনীতির অনেক দিক নিয়ে কবি অনেক রঙ্গব্যঙ্গ কবিতা রচনা করেন। সাংবাদিক হিসেবে সমসাময়িক চিন্তাধারার সাথে যেমন তাঁর পরিচয় ছিল, তেমনি পাশ্চাত্য ধ্যান-ধারণা তাঁর মানসিকতাকে সমৃদ্ধ করেছে। ‘স্বদেশ’, ‘মাতৃভাষা’, ‘কৌলিন্যপ্রথা’, ‘নীলকর’, ‘ভারতভূমির দুর্দশা’ প্রভৃতি কবিতায় ঈশ্বর গুপ্তের আধুনিক মানসের পরিচয় স্পষ্ট। তাঁর মনোভাবের সবচেয়ে বড়ো আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য তাঁর যুক্তি প্রধান মানসিকতা। কবির যুক্তিবাদী মন সংস্কারের-বিশ্বাসের চোরাবালির উপর নির্ভর না করে যুক্তি বিচারের শক্ত কঠিন ভূ-সংস্থানের উপর দাঁড়িয়ে জগৎ ও জীবের স্বরূপ উপলব্ধির চেষ্টা করেছে। যুগের হাওয়া তাকে প্রেমভক্তি স্রোতে ভাসিয়ে দিতে পারেনি। ঈশ্বর গুপ্তের ঐতিহাসিক চেতনাও তাকে আধুনিকতা দান করেছে। সংবাদপত্র সেবার মাধ্যমে দেশ বিদেশের সংবাদের সাথে তিনি পরিচিত হয়েছিলেন, তাই ‘শিখ যুদ্ধ’, ‘কাবুলের যুদ্ধ’, ‘দিল্লীর যুদ্ধ’, ‘ব্রহ্মদেশের যুদ্ধ’ প্রভৃতি তার কাব্যে স্থান পেয়েছে। তিনি স্ত্রী-শিক্ষা সমর্থন করেছেন, যা তার আধুনিক মানসিকতার স্বাক্ষর।

ঈশ্বরগুপ্তের কাব্যে দেখা গেল মানুষের সাহিত্যের প্রকৃত বিষয় হলো মানুষ। কবিতার আঙ্গিকে তিনি কিছুটা মধ্যযুগীয় হলেও কবিতার অভ্যন্তরীণ ভাবের দিক থেকে আধুনিকতার পথপ্রদর্শক। নতুন কাবা্যানুভাবনায় নবযুগের বাস্তব উদ্যোগ আয়োজনের ফলে কতকটা বাস্তববোধ তাঁর চিন্তায় দেখা যায়।

দেশপ্রেম মানবিকতা ও আধুনিকতার একটি বিশেষ লক্ষণ। ঈশ্বর গুপ্তই প্রথম বাঙালি কবি যিনি দেশের বা দেশপ্রেমের মন্ত্র সর্বপ্রথম তাঁর দেশবাসীকে শুনিয়েছেন।-

“জান না কী জীব তুমি             জননী জন্মভূমি

সে তোমারে হৃদয়ে রেখেছে

থাকিয়া মায়ের কোলে                 সন্তানে জননী ভুলে

কে কোথায় এমন দেখেছে।”

ঈশ্বর গুপ্তকে ‘যুগসন্ধির কবি’ বলার ক্ষেত্রে যে যৌক্তিকতা তা হলো তাঁর কবি মানসে প্রাচীন ও নবীনের দ্বন্দ্ব আমরা প্রত্যক্ষ করি। তিনি তাঁর কাব্যে পুরাতন ও নবীনকে একই সাথে ধরতে চেয়েছেন। ফলে তিনি যুগসন্ধির কবি। প্রাচীন ও নবীনের দ্বন্দ্ব গুপ্ত কবির মানসে স্বতন্ত্রই দ্বৈততার জন্ম দিয়েছে। তার এই দ্বিধাগ্রস্ত মানসটি আমরা উপলব্ধি করি স্ত্রী-শিক্ষা, বিধবা বিবাহ, রাজনীতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে। তিনি নারী শিক্ষার প্রতি বিরূপ ছিলেন না। তবে বিধবা বিবাহ সমর্থন করেননি। তিনি একদিকে স্বদেশ প্রেমের কবিতা লিখেছেন, আবার ব্রিটিশের জয়গান করেছেন। বাঙালির প্রথম মুক্তি সংগ্রাম সিপাহি বিদ্রোহ। এ বিদ্রোহে কবির সমর্থন ছিল না। আবার কবির অসাম্প্রদায়িকও ছিলেন না। আর স্ট্যের দ্বিধাগ্রস্ত মানসিকতারb স্বরূপটির পরিচয় দিতে গিয়ে সমালোচকের বক্তব্য,

‘একদিকে এই স্বদেশপ্রীতি যেমন তাকে একালের জীবনচেতনার সাথে যুক্ত করেছে অন্যদিকে তেমনি মধ্যযুগের রাজভক্তি তাকে সব অবস্থাতেই রাজার প্রতি অচলা ভক্তিতে উদ্বুদ্ধ রেখেছে। দেশের অভাব-অভিযোগ সম্পর্কে তার সকল বক্তব্যই তাই হয়ে উঠেছে রাজার নিকট দীন-দুঃখী প্রজার ফরিয়াদের ভাষা।… অথচ কবির অর্থনীতি বিষয়ে চিন্তাধারা
একান্তই কালোপযোগী এবং আধুনিক ছিল।”

ঈশ্বর গুপ্ত বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন-মধ্য ও আধুনিক যুগের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে দুটি যুগকে একসূত্রে গ্রথিত করতে চেষ্টা
করতে পারেননি। তিনি যুগের পরিবর্তনকে সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করতে পারেননি। আবার উনিশ শতকের প্রথম অধ্যায়ের ভারতবর্ষের সমগ্র জীবন পরিস্থিতি এবং তাঁর জটিলতার সমগ্রতাকেও একেবারে উপেক্ষা করতে পারেননি। তিনি পুরাতনকে সম্পূর্ণ ত্যাগ করতে পারেননি। আবার বাংলা কাব্যের আধুনিক যুগের সাথে অবিচ্ছিন্নভাবে সংশ্লিষ্ট হওয়া তার পক্ষে সম্ভবপর হয়নি। ফলে তার কবি মানসে পূর্বতন ও নবাগত আদর্শের এক প্রবল সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে, যার প্রভাব তার কাবচর্চার ক্ষেত্রে পড়েছে। গুপ্ত কবি প্রাচীন ও নবীন যুগের সমন্বয় ঘটাতে গিয়ে ‘যুগসন্ধির কবি’ রূপে প্রতিষ্টা লাভ করেছেন।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।