ইসলামিক শিক্ষায় উচ্চশিক্ষার কেন্দ্রকে মাদ্রাসা বলা হত। মাদ্রাসাগুলির বেশিরভাগই ছিল মসজিদ অথবা সমাধিস্থলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। সাধারণত একটি মাদ্রাসায় ছাত্র ও শিক্ষকদের আবাসনের জন্য অনেক কামরা থাকত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এক একটি মাদ্রাসার এক-একটি বিশেষ বিষয়ে খ্যাতি ছিল। এই কারণে ছাত্ররা এক মাদ্রাসা থেকে অন্য মাদ্রাসায় যেত। মাদ্রাসাগুলির বেশিরভাগ ছিল শহরে অবস্থিত এবং আবাসিক। বিত্তশালীদের অর্থে প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত মাদ্রাসার শিক্ষা ছিল অবৈতনিক। বিত্তশালীরা অনেক বৃত্তির ব্যবস্থাও করতেন। শিক্ষকরা পেতেন ভাতা এবং ছাত্রেরা পেত বৃত্তি।

(১) পাঠক্রম: মাদ্রাসার পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত ছিল ব্যাকরণ, যুক্তিবিজ্ঞান, সাহিত্য, চিকিৎসা, ভূগােল, ইতিহাস, দর্শন, কলা, শিল্প এবং প্রয়ােগবিদ্যা। এ ছাড়া শাসকদের মর্জি অনুযায়ী বিশেষ বিশেষ বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হত।

(২) শিক্ষাপদ্ধতি: মাদ্রাসার শিক্ষাব্যবস্থা ছিল মূলত মৌখিক। শিক্ষার মাধ্যম ছিল ‘ফারসি ভাষা। শিক্ষকগণ বক্তৃতা পদ্ধতি প্রয়ােগ করতেন। ব্যক্তিগত শিক্ষাপদ্ধতি চালু ছিল, যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা অনুযায়ী শেখার সুযােগ পায়। মুখস্থ ছিল শিখনের প্রধান পদ্ধতি।

(৩) শৃঙ্খলা: মক্তবের মতাে মাদ্রাসায়ও কঠোর শৃঙ্খলা ছিল। ইসলামের নির্দেশানুযায়ী নির্দিষ্ট সময়-নির্ঘণ্ট অনুসারে নামাজ পড়া, পড়াশােনা করা, ধর্মীয় এবং সামাজিক কর্তব্য পালনের প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার ফলে নিয়মানুবর্তিতা ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার। অনৈতিক আচরণের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা ছিল।

(৪) শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক: মাদ্রাসাগুলি ছিল আবাসিক। আবাসিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক সান্নিধ্যের ফলে শিক্ষার্থীদের ওপর শিক্ষকের যথেষ্ট প্রভাব ছিল। শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়েই নৈতিক মূল্যবােধ অনুযায়ী আচরণ করতেন। উভয়ের মধ্যে ছিল পিতা-পুত্রের সম্পর্ক।

উপরিউক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও উলেমা আবাস ও গৃহস্থ বাড়িতে ইসলামীয় শিক্ষা প্রচলিত ছিল। কয়েকটি উল্লেযােগ্য মাদ্রাসা হল—

  • গিয়াসুদ্দিন বলবন স্থাপিত মাদ্রাসা-ই নামিরিয়া,

  • সুলতানা রাজিয়া স্থাপিত দিল্লির খুইজি কলেজ,

  • মহম্মদ-বিন-তুঘলক স্থাপিত মাদ্রাসা,

  • ফতেপুর সিক্রিতে আকবর স্থাপিত মাদ্রাসা।