বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। তাই আমাদের পরীক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরীক্ষায় ইন্টারনেট ও আজকের বিশ্ব – রচনা ( ২০-৩০ পয়েন্ট) লিখতে আসে। আমি শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টারনেট ও আজকের বিশ্ব – রচনা ( ২০-৩০ পয়েন্ট) যথাযথভাবে লিখার চেষ্টা করেছি। তোমরা যারা পরীক্ষায় ইন্টারনেট ও আজকের বিশ্ব – রচনা ( ২০-৩০ পয়েন্ট) লিখতে চাও আমার পোস্ট তাদের জন্য।

প্রিয় শিক্ষার্থী তোমরা এই ইন্টারনেট ও আজকের বিশ্ব – রচনা ( ২০-৩০ পয়েন্ট) পড়ার মাধ্যমে আরো যে রচনা লিখতে পারবে তা হল – ইন্টারনেট ও বর্তমান বাংলাদেশ রচনা ২০পয়েন্ট, ইন্টারনেট বিশ্বের সেতু বন্ধন রচনা, ইন্টারনেট রচনা। নিচে ইন্টারনেট ও আজকের বিশ্ব – রচনা ( ২০-৩০পয়েন্ট) বিস্তারিতভাবে লেখা হলো –

ইন্টারনেট ও আজকের বিশ্ব – রচনা ( ২০-৩০ পয়েন্ট) 

প্রিয় শিক্ষার্থী আমি তোমাদের জন্য ইন্টারনেট ও আজকের বিশ্ব – রচনা ( ২০-৩০ পয়েন্ট)  যথাযথভাবে লেখার চেষ্টা করেছি। তবে তোমরা তোমাদের পরীক্ষার মানবন্টন অনুযায়ী এই রচনার পয়েন্ট স্কিপ করতে পারো।

ভূমিকা

বর্তমান যুগ হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। আর তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে যোগাযোগের সর্বোচ্চ আধুনিক প্রযুক্তির নাম হল ইন্টারনেট। মানব সভ্যতার অগ্রযাত্রায় বিজ্ঞানের ছোঁয়া আজ চরম সার্থকতা লাভ করেছে আর বিজ্ঞানের এই ছোঁয়া কে পৃথিবীর সব নব নব আবিষ্কার এবং সভ্যতা কে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। আর এর মধ্যে আধুনিক বিজ্ঞানের বিচিত্র আবিষ্কার গুলোর মধ্যে ইন্টারনেট সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করে। বিজ্ঞানে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মানুষকে যা দিয়েছে তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ হল ইন্টারনেট।

আরো পড়ুনঃ  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি আসক্তি আজ তরুণ সমাজের প্রধান সমস্যা 

ইন্টারনেট আজকের বিশ্বকে মানুষের সামনে করেছে অতি সহজ।মানুষের জীবনের চলার পথকে করেছে অভাবনীয় সহজতর। আজকের বিশ্বে যোগাযোগ ব্যবস্থায় ইন্টারনেটের ব্যবহারে কোন সীমাবদ্ধতা নেই। আর এটি যোগাযোগের ক্ষেত্রেও অপ্রতিদ্বন্দ্বী। স্টিফেন হকিং বলেছেন – ” আমরা সকলে পৃথিবী নামক বড় একটি মস্তিষ্কে ইন্টারনেট নামক নিউরন দ্বারা সংযুক্ত”।

ইন্টারনেট কি

আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাকেই সংক্ষেপে ইন্টারনেট বলা হয়। ইন্টারনেট হল গোটা বিশ্ব জুড়ে বিস্তৃত একটি জাল যার মাধ্যমে পুরো বিশ্ব চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো ইন্টারনেট। ইন্টারনেট হল আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সেবা ব্যবস্থা অর্থাৎ ইন্টারনেটকে বলা হয় নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক। বিশ্বের সমগ্র কম্পিউটার একটি নিয়ম বা পদ্ধতির মধ্যে নিয়ে আসাকে বলা হয় ইন্টারনেট।

আর নেটওয়ার্ক ভুক্ত কম্পিউটার গুলোর মধ্যে একটির সাথে অপরটির সম্পর্ক গড়ে তোলায় হল ইন্টারনেটের কাজ। জন এলিয়েন পাওলস বলেছেন – ” ইন্টারনেট হল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় লাইব্রেরী, যেখানে সবগুলো বই মেঝেতে পড়ে থাকে”।

ইন্টারনেটের ইতিহাস/আদি কথা

১৯৬০ সালে সর্বপ্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র “ARPA” ডিফেন্সে অ্যাডভাপড় ও রিসার্চ প্রজেক্ট এজেন্সি (DARPA) ইন্টারনেট আবিষ্কার করেন। তাদের রিচার্জ এর জন্য প্রথমে তারা নিজেদের মূল কম্পিউটার গুলোর মধ্যে এর সংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। এবং প্রথম দিকে তারা টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেয় এমন (NSF) চার ৪ টি কম্পিউটারের মধ্যে তারা যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। আর এ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাত্র তিন ৩ বছরের মধ্যে এর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৩টি।

আরো পড়ুনঃ  শিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের দশটি ১০টি  ব্যবহার  বিস্তারিত 

১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ পারমাণবিক আক্রমণ প্রতিহত, বৈজ্ঞানিক তথ্য ও অন্যান্য তথ্যাদি বিনিময়ের লক্ষ্যে ইন্টারনেট উদ্ভাবন করেন। ইন্টারনেট আবিষ্কারের প্রথম দিকে এটির নাম ছিল “মিলনেট”। যদিও ইন্টারনেট প্রথম দিকে সামরিক উদ্দেশ্যে উদ্ভাবিত হয়েছিল কিন্তু সময়ের চাহিদার কারণে এটি ক্রমান্বয়ে বেসরকারি দিকেও মোড় নেয়। ১৯৬৯ সালে জন্ম হয় আরফানেট “ARPANET” নামক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক।

১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ফাইভেশন ক্রমবর্ধমান সকলের চাহিদার কারণে ইন্টারনেট নামক একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করেন এবং এর নামকরণ করা হয় “নেস্কনেট”। আর মাত্র তিন বছরের মধ্যে এই ইন্টারনেট সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। আর সারা বিশ্বের মানুষ পরিচিত হয় ইন্টারনেট নামক একটি নতুন প্রযুক্তির সাথে। ১৯৯৩ সাল থেকে ইন্টারনেট ব্যবস্থা কে বাণিজ্যিকভাবে রূপ দেওয়া হয়।

ইন্টারনেটের শ্রেণীবিভাগ

ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেবা প্রদানের জন্য বিভিন্ন রকম প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর প্রযুক্তিগত ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে ইন্টারনেট কে প্রধানত চার ৪ টি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা –

  • অপটিক্যাল ফাইবার
  • ওয়াইফাই বা তারবিহীন সংযোগ
  • টেলিফোন লাইন
  • কম্পিউটার মডেম

অপটিক্যাল ফাইবার

ক্ষুদ্র ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা অপটিক্যাল ফাইবার বা ফাইবার ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। আর এই পদ্ধতিকে অপটিক্যাল ফাইবার টু হোম পদ্ধতি বলা হয়। 

ওয়াইফাই বা তারবিহীন সংযোগ

ওয়াইফাই বা তারবিহীন পদ্ধতি সংযুক্ত করা হয় মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা পাওয়ার জন্য।

টেলিফোন লাইন

টেলিফোন লাইন মাঝারি বা বৃহৎ ব্যবহারকারীরা গিগাবাইট ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে এবং যারা টেলিফোন লাইন বা এই শ্রেণীর ইন্টারনেট ব্যবহার করে তাদের উচ্চ গতি সম্পন্ন নেটওয়ার্কের প্রয়োজন হয়।

কম্পিউটার মডেম

কম্পিউটার মডেম ব্যবহার করে সাধারণত এটি কম্পিউটার বা ল্যাপটপে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়ে থাকে।

ইন্টারনেটের বিকাশ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাহিনীর পারমাণবিক আক্রমণ প্রতিহত, বৈজ্ঞানিক তথ্য ও অন্যান্য তথ্যাদির গবেষণার প্রয়োজনে ইন্টারনেট কে প্রথমে কাজে লাগানো হয় আশির দশকের শেষার্ধে। স্নায়ুযুদ্ধের সম্ভাবনা হ্রাস পায় এবং নেটওয়ার্ক গুলো বেসামারি বা সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়। এবং সে সময় ইন্টারনেট দায়িত্ব নেয় টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেয় এন এস এফ। প্রথমে চার ৪টি কম্পিউটারের মধ্যে নেটওয়ার্ক সংযোগ গড়ে তোলা হয়।

আরো পড়ুনঃ  দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা সম্পর্কে জেনে নিন

 এবং এর মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি ছিল এবং যার নাম ছিল ওটাই। এ যোগাযোগ ব্যবস্থার নাম ছিল ডাপার্নেট।ক্রমবর্ধমান মানুষের চাহিদার কারণে ১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন সর্বসাধারণের জন্য ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। বর্তমানে পুরো বিশ্বের কম্পিউটার ইন্টারনেট ব্যবহার করে প্রায় ৮ কোটির মতো মানুষ। আর এই ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ইন্টারনেট প্রটোকল

ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ইন্টারনেট প্রোটোকল। এক কম্পিউটারের সাথে অন্য কম্পিউটারের মধ্যে যে তথ্য আদান প্রদান করা হয় তার সুনিদিষ্ট নিয়ম নীতি কে বলা হয় প্রটোকল। যদি দুইটি কম্পিউটারের মধ্যে নির্দিষ্ট প্রটোকল না থাকে তাহলে পারস্পরিক কখনোই সম্ভব নয়। ইন্টারনেটে অনেকগুলো প্রটোকল রয়েছে এর মধ্যে টিসিপি TCP/IP বা আইপি কার্যকরী এবং সু প্রাচীন প্রটোকল। আর এই ধরনের প্রটোকলের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এগুলো খুব সহজেই অনেক বড় ফাইল বা যেকোনো তথ্য আদান প্রদান করতে পারে।

ইন্টারনেট সংযুক্তিকরণ পদ্ধতি

ইন্টারনেট সংযুক্তি সাধারণভাবে দুইটি পদ্ধতিতে কম্পিউটারের সাথে যুক্ত করা হয়ে থাকে যথা

  • অনলাইন সার্ভিস
  • অফলাইন সার্ভিস

তবে সাধারণত তিন ধরনের নেটওয়ার্কিং সিস্টেম থেকে ইন্টারনেট সংযুক্ত করুন করা হয় যথা

লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক ( LAN)

লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক ( LAN) এটা সাধারণত ১ কিলোমিটার এর মধ্যে সংযোগ কৃত নেটওয়ার্ক।

মাল্টিপুলেশন এরিয়া নেটওয়ার্ক ( MAN)

মাল্টিপুলেশন এরিয়া নেটওয়ার্ক ( MAN) সাধারণত কয়েক কিলোমিটার জুড়ে এ নেটওয়ার্ক বিস্তৃত।

ওয়ার্ল্ড এরিয়া নেটওয়ার্ক ( WAN)

ওয়ার্ল্ড এরিয়া নেটওয়ার্ক ( WAN) নেটওয়ার্ক সমগ্র বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত একটি নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা।

ইন্টারনেটের ব্যবহার

১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বপ্রথম সামরিক কাজে ইন্টারনেটের ব্যবহার হলেও বর্তমানে ইন্টারনেট পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে ইন্টারনেটের ব্যবহার হয় না। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, চাকরি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রেল এমন কোন খাত নেই যেখানে ইন্টারনেটের ব্যবহার নেই। ইন্টারনেট ব্যবহার করে এখন শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে তাদের ই-বুক থেকে বই ডাউনলোড করে পড়তে পারছে। ঘরে বসে তাদের ফলাফল জানতে পারছে, ঘরে বসে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এক কথায় ইন্টারনেট পুরো পৃথিবী কে একটি একক কমিউনিটিতে পরিণত করেছে।

ইন্টারনেটের গুরুত্ব

অনলাইন যোগাযোগ ব্যবস্থা ইন্টারনেটে ব্যবহারের গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন তথ্য প্রেরণ ও গ্রহণ থেকে শুরু করে বিশ্বের সকল প্রান্তের মানুষের সঙ্গে আড্ডা, সম্মেলন, শিক্ষা, বিপণন, অফিস ব্যবস্থাপনা, বিনোদন সবকিছুই করা হচ্ছে ইন্টারনেটের সাহায্যে। আর মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহারের কারণে ইন্টারনেটের ব্যবহারের সম্ভাবনা দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেমন বাংলাদেশের একজন লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিউইয়র্কে বসবাসকারী 

আরো পড়ুনঃ  মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার রচনা ২০-৩০ পয়েন্ট সম্পর্কে জেনে নিন

কোন লোকের সাথে যেকোনো কনসার্ট উপভোগ করতে পারছে। এছাড়া ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে দেশে বসে অন্য দেশের জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে পারছে। মহাকাশ, গবেষণা, টেলিমেডিসিন, ই-বুক, ই-মেইল এক কথায় এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে ইন্টারনেটের ব্যবহারের গুরুত্ব নেই। বাস্তব জীবনের সাথে ইন্টারনেটের গুরুত্ব অপরিসীম।

তথ্য প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট

বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। আর তথ্যপ্রযুক্তি ছাড়া আজকের বিশ্ব কোনভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় তাই তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেট আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গে অতপ্রতভাবে জড়িয়ে আছে। ইমেইল, মেসেজ, ইলেকট্রনিক্স ফান্ড ট্রান্সফার, টেলিকনফারেন্স সহ নানা ধরনের সেবা লাভের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার অপরিসীম। তথ্য প্রযুক্তির অবাদ বিচরণ মানুষের কাজকে করে দিয়েছে সহজ থেকে সহজতর। তাই ইন্টারনেটের ব্যবহারের গতিশীলতা বাড়াতে হবে এবং ধারণা করা হচ্ছে ইন্টারনেট এক সময় পুরো বিশ্বের মানুষকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেবে।

যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ইন্টারনেটের ব্যবহার

ইন্টারনেট পুরো পৃথিবীকে একটি একক কমিউনিটিতে পরিণত করেছে যাকে বলা হয় বিশ্ব গ্রাম। ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা কে করেছে সহজীকরন যার কারণে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান ও এক দেশের সাথে অন্য দেশের যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ইন্টারনেটে ব্যবহারের বিকল্প কোন কিছু চিন্তা করা যায় না। উন্নত বিশ্বের প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ তথ্যপ্রযুক্তি সর্বোত্তম ব্যবহার করে থাকে আর এই কাজটি করা হয় একটি মাত্র ওয়েব এড্রেস ব্যবহার করে। যে কোন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে পারে একমাত্র ইন্টারনেট মাধ্যম।

বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবস্থা

১৯৯৩ সালের ১১ নভেম্বর বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ইন্টারনেট এর ব্যবহার শুরু হয় আর অফলাইনের মাধ্যমে সে সময় ইন্টারনেট সার্ভিস চালু করা হয়। আর এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্রদেষ্টা, ছক, ট্যাপ, আগ্র, সিস্টেম, বিডিমেট, বিডিনেট এবং আরোরা – ১ এক। ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ অনলাইনে প্রবেশ করায় প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নবতর সাফল্য লাভ করে। আর পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালের ৪ জুন বাংলাদেশে ইন্টারনেটের নতুন মাত্রা যোগ করে VSTA চালুর মাধ্যমে।

আরো পড়ুনঃ  রচনা – মাদককে রুখবো,স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ব 

যদিও মনে করা হয় বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার এখনো ততটা বৃদ্ধি পায়নি। জাতিসংঘের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন সূচক ২০১৬ এর প্রতিবেদনে বলা হয় বাংলাদেশে প্রকৃত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০% এর কম। এছাড়াও অ্যাফোর্ডবিলিটি ২০১৭ এর প্রতিবেদনে বলা হয় বিশ্বের আটান্ন ৫৮ টি উন্নয়নশীল দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারে সক্ষমতায় বাংলাদেশের অবস্থান ৪৬তম।

দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেট

মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এক নব মাত্রাযুক্ত করেছে ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসে সমগ্র বিশ্বের খবরা খবর জানা যাচ্ছে এ মুহূর্তের মধ্যে। তথ্য প্রেরণ এবং গ্রহণ থেকে শুরু করে বিশ্বের যে কোন প্রান্তের মানুষের সাথে আড্ডা, শিক্ষা, বিপণন, লেনদেন, অফিস ব্যবস্থাপনা সবকিছু করা সম্ভব হচ্ছে। এছাড়াও ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের শেয়ার বাজারের খবরাখবর, বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চিকিৎসা ব্যবস্থার সর্বশেষ খবর সবকিছুই আমরা ঘরে বসে পেয়ে থাকি।

বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধির উপায়

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। তবে বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের পাঠ্যসূচিতে কম্পিউটার শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হলেও কম্পিউটারের ব্যবহারিক দিকের ওপর তুলনামূলকভাবে নজরদারি কম করা হয়। অধিকাংশ কাজের ক্ষেত্রেই ইন্টারনেটের ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক হয়ে যায় তাই সরকারের প্রথম কাজ হচ্ছে সহজ ভাবে মানুষের কাছে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা।

আরো পড়ুনঃ  নৈতিকতা ও মূল্যবোধ রচনা সম্পর্কে জানুন

এবং শতভাগ বিদ্যুতায়নের মাধ্যমে নির্বাচিত বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উপকরণের সহজ আমদানি নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রতিটি কাজ অনলাইন ভিত্তি করা গেলে ইন্টারনেটের সেবা গ্রহণ করতে মানুষ বাধ্য হবে। তাই অল্প পুঁজির মাধ্যমে অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে সরকারকে ঋণের ব্যবস্থা রাখতে হবে তবেই মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহারে উপযোগী হবে।

ইন্টারনেটের উপকারিতা

বিংশ শতাব্দীর আজকের বিশ্বে ইন্টারনেটের উপকারিতার কথা বলে শেষ করার মত নয়। এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয় না এবং এর উপকারিতা লক্ষ্য করা যায় না। যোগাযোগ, অফিস, রাজনীতি, অর্থনীতি, চিকিৎসা, শিক্ষা, বিনোদন প্রতিটা ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার অনিষ্কার্য। যে কোন তথ্যের আদান-প্রদান চোখের পলকে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে করা সম্ভব হচ্ছে একমাত্র ইন্টারনেটের জন্য। তাই ইন্টারনেটের উপকারিতা অপরিসীম।

ইন্টারনেট ব্যবহারের অপকারিতা

প্রতিটি জিনিসের যেমন ভালো দিক রয়েছে তেমনি এর খারাপ দিক রয়েছে। এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা ভালো জিনিসের পরিবর্তে মন্দ দিকটা বেশি গ্রহণ করে থাকে। তাই জন লিডন বলেছেন – ” ইন্টারনেট সম্বন্ধে আমার একটা গুরুতর সমস্যা রয়েছে আর সেটা হল ইন্টারনেট মিথ্যাবাদীদের দ্বারা ভর্তি হয়ে আছে”। ইন্টারনেটের সাহায্যে অনেক ধ্বংসাত্মক কাজ করা সম্ভব হয়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য সরবরাহ, জুয়া খেলা, পর্নোগ্রাফি ছবি দেখা বিভিন্ন প্রকার নেতিবাচক কর্মকান্ড বেড়ে গেছে।   

আরো পড়ুনঃ  মোবাইল ফোন – রচনা  ৬-১২ শ্রেণির জন্য

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের ভেতরে কেউ ইন্টারনেট “ওয়ার্ম”  নামক ভাইরাস ঢোকায় যার কারণে বহু কম্পিউটার নষ্ট হয়ে যায়। আবার যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্কুলের ১৩ বছর বয়সী তিন জন ছাত্র বোমা রেখে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটায় এতে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। লিড বিটার বলেছেন – ” তুমি যা অন্যদের সাথে শেয়ার করো ইন্টারনেটে তাই তোমার পরিচয়”। উইলিয়াম গিভশন বলেছেন – ” ইন্টারনেট হল সময়ের অপব্যয় এবং ইহাই হল এর ব্যাপারে সবচেয়ে বড় সত্য”।

ইন্টারনেটের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান

ইন্টারনেট আন্তর্জাতিকভাবে বিস্তৃত। এটা কোন নির্দিষ্ট কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান নয়। তবে ইন্টারনেটের উন্নয়ন এবং কার্যসম্পাদনের জন্য প্রধানত তিনটি প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। আর এগুলো হল –

ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টার (NICI)

ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টার (NICI) এই প্রতিষ্ঠানটি ডোমেন নেম রেজিস্ট্রেশন করে থাকে।

ইন্টারনেট সোসাইটি

ইন্টারনেট সোসাইটির নামক এই প্রতিষ্ঠানটি ইন্টারনেটের প্রটোকল বা প্রকৌশলের মান নির্ধারণ করে থাকে।

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (WWWC)

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (WWWC) নামক এই প্রতিষ্ঠানটি ভবিষ্যতে ওয়েবের প্রোগ্রামিং ভাষা কোন ধরনের হবে তা নির্ধারণ করে থাকে।

ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান

ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য সাধারণত চার ৪টি জিনিস প্রয়োজন। আর এগুলো হলো –

কম্পিউটার

কম্পিউটার যেকোনো তথ্য তার মেমোরিতে রেখে দেয় এবং নেটওয়ার্কিং সফটওয়্যার এর সাহায্যে তা প্রাপকের কাছে পাঠানোর কাজ করে থাকে।

মডেম

মডেম একটি সাধারন লাইনের মাধ্যমে ১ কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারের তথ্যাদি ডিজিটাল থেকে এনালগ এবং এনালগ থেকে ডিজিটাল এ রূপান্তর করার কাজ সম্পন্ন করে থাকে।

টেলিফোন লাইন

টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে তথ্যাদি এক স্থান থেকে অন্য স্থানের দ্রুত স্থানান্তরিত হয়। এক্ষেত্রে এনালগ অপেক্ষা ডিজিটাল টেলিফোন তথ্যাদি দ্রুত স্থানান্তর করতে পারে।

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার পোস্ট অফিসের ন্যায় ভূমিকা পালন করে থাকে। এটি সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে মাসিক বা ব্যবহৃত সময় অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ একটি ফি নিয়ে তাদের নিজস্ব শক্তিশালী কম্পিউটার ফাইবার অপটিক্স বা স্যাটেলাইট এর মাধ্যমে দেশে বা বিদেশে অপরাপর ইন্টারনেটের সদস্যদের সঙ্গে সংযোগের ব্যবস্থা করে থাকে।

উপসংহার

বর্তমানে বিশ্বের এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে ইন্টারনেটের ব্যবহার হয় না। ইন্টারনেটের ব্যবহারের কারণে মানুষের জীবন যাত্রা অনেক সহজ হয়ে পড়েছে। তবে মানুষ এর ভালো দিক যতটা গ্রহণ করেছে এর মাধ্যমে ততটা খারাপ কার্য সংঘটিত করছে। তাই গুলরেজ খান বলেছেন – ” ইন্টারনেট হল আপনার বুদ্ধিমত্তার এক ধরনের স্লো পয়জন”। তবে ইন্টারনেট গোটা বিশ্বকে একটি একক কমিউনিটিতে পরিণত করেছে। তাই আমরা গোটা বিশ্বকে এখন বলতে পারি গ্লোবাল ভিলেজ।