আশুরা মুসলিম উম্মার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তাই প্রত্যেক
মুসলিমকে আশুরার রোজা কয়টি – আশুরার ফজিলত সম্পর্কে জানা একান্ত প্রয়োজন।
মুসলিম উম্মা যদি আশুরার রোজা কয়টি – আশুরার ফজিলত সম্পর্কে না জানে তাহলে
তারা এর মর্ম বুঝতে পারবে না। তাই আমি আশুরার রোজা কয়টি – আশুরার ফজিলত সম্পর্কে
বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
আশুরা অর্থাৎ ১০ই মহররমের দিন রোজা পালন করা হয়। আর এই দিনে সাথে মিল রেখে এই
দিনের আগের দিন বা পরের দিন সহ মোট দুইটি রোজা পালন করতে হয়। আর এই সকল বিষয়
সম্পর্কে জানাতে আমি আশুরার রোজা কয়টি – আশুরার ফজিলত সম্পর্কে লিখার চেষ্টা
করেছি। নিচে আশুরার রোজা কয়টি – আশুরার ফজিলত আলোচনা করা হলো-
পোষ্ট সূচিপত্রঃ আশুরার রোজা কয়টি – আশুরার ফজিলত
আশুরা কি
ইসলামের প্রথম মাস মহররম মাস। মহরম মাসের দশম দিনে অনুষ্ঠিত হয় আশুরা। কারবালার
যুদ্ধে আমাদের প্রিয় নবী এবং শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নাতি হুসাইন ইবনে
আলী ও তার পরিবারের সদস্যদের নিশ্চিহ্ন করার ঘটনার নাম হলো আশুরা। শিয়া মুসলিম
সম্প্রদায় আশুরার দিন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও তার পরিবারের সাথে ঘটে যাওয়া
ঘটনাকে স্মরণ করে থাকে। আশুরার দিন কারবালার যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।
আশুরার এই দিনে হোসাইন ইবনে আলী শাহাদাত বরণ করেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের
ইবাদত বন্দেগী ও নেক আমল করার জন্য ইসলামে কিছু পর্ব বা দিবস রয়েছে আর এমনি একটি
দিবসের নাম হল আশুরা। হিজরী সনের প্রথম মাস হল মহররম মাস। এই মহরম মাসের ১০
তারিখে প্রতিবছর মুসলিম উম্মাহর দরবারে কড়া নাড়ে। মহরম মাস আমাদের স্মরণ করিয়ে
দেয় আমাদের প্রিয় ও শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হিজরত, ইসলামের দাওয়াত ও
ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা।
এই মাসের ১০ তারিখে মহান আল্লাহতালা দীর্ঘ জুলুম শেষে ফেরাউনের হাত থেকে হযরত
মুসা আলাই সালাম ও তার অনুসারীদের নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফেরাউনকে তার বিশাল
বাহিনীসহ লহিত সাগরে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। ফেরাউন ছিলেন ভ্রান্ত খোদার দাবিদার। আর
এই ভন্ডকে মহান আল্লাহতালা এই দিনে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। বিজয় হয়েছিল নবী মুসা
(আঃ) তথা ইসলাম।
আর ধ্বংস হয়েছিল তৎকালীন ফেরাউন ও তার বিশাল সাম্রাজ্যে। ইমাম বুখারী থেকে
বর্ণিত, নবী (সাঃ) যখন মদিনায় আগমন করেন তখন তিনি মদিনা বাসি কিভাবে
পেলেন যে তারা একদিন শাওম পালন করে আর সে দিনটি হলো আশুরার দিন। তারা বলল এটি হলো
মহান দিবস। এটি এমন দিন যে দিনে মহান আল্লাহতালা হযরত মুসা (আঃ) সালামকে নাজাত
দিয়েছিলেন এবং ফেরাউনের সম্প্রদায়কে ডুবিয়ে মেরেছিলেন।
আরো পড়ুনঃ
নারীদের ওপর হজ্জ কখন ফরজ হয় বিস্তারিত জানতে পড়ুন
অতঃপর মুসা (আঃ) শুকরিয়া হিসেবে এদিন সাওম পালন করেছেন। তখন নবী সাঃ
বললেন, তাদের তুলনায় আমি হলাম মুসা (আঃ) অধিক নিকটবর্তী। কাজেই
তিনি নিজেও এই দিন সাওম পালন করেছেন এবং এদিন সাওম পালনের নির্দেশ দিয়েছেন।(
৩৩৯৭ মুসলিম, ১১৩৯ হাদিসের মান সহীহ হাদিস)।
আশুরার দিন মুসলিম মিল্লাতের জন্য বিজয়ের দিন। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহতালা
পবিত্র কোরআনের সূরা ইউনুসের ৯0 থেকে ৯২ নং আয়াতে বলেছেন,” আর বনি ইসরাইলকে আমি
পার করে দিয়েছি নদী। তারপর তাদের পশ্চাদবধন করেছে ফেরাউন ও সেনাবাহিনী দুরাচার ও
বাড়াবাড়ির উদ্দেশ্যে। এমনি যখন তারা ডুবতে আরম্ভ করল তখন বলল, এবার বিশ্বাস করে
নিচ্ছি যে, কোন মাবুদ নেই তাকে ছাড়া যার উপর ঈমান এনেছে বনি ইসরাইলরা।
বস্তুত আমি তাদের অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত। এখন এ কথা বলছ। অথচ তুমি ইতিপূর্বে
নাফরমানি করেছিলে এবং পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে। অতএব আজকের দিনে বাঁচিয়ে
দিচ্ছি আমি তোমার দেহকে, যাতে তোমার পশ্চাৎ বর্তিদের জন্য নিদর্শন হতে পারে। আর
নিঃসন্দেহে বহু লোক আমার মহা শক্তির প্রতি লক্ষ্য করেনা”
আশুরা অর্থ কি
আশুরা আরবি শব্দ। এর অর্থ হল ১০ মহরম। আরবি “আশারা” শব্দের অর্থ হলো দশ আর আশুরা
মানে দশম। ইসলামপন্থীবিদ জে ওয়েনসিস্কের মতে, আশুরা শব্দটি হিব্রু শব্দ “asor”
থেকে এসেছে। কারবালার ময়দানে মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা মহরম ও আশুরা
ইসলামের ইতিহাসে নব চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছে। আর মহরম বা আশুরা কে মুসলিম উম্মাহর
সামনে অবিস্মরণীয় ও মহিমান্বিত করে রেখেছে।
আশুরার ফজিলত
আশুরা অর্থাৎ মহরম মাসের ১০ তারিখের ফজিলত অনেক বেশি। মহরম অর্থ তাৎপর্যপূর্ণ এবং
মর্যাদা পূর্ণ। যেহেতু এই আশুরাকে ঘিরে অনেক রহস্য এবং তাৎপর্য নিহিত রয়েছে। এই
মাসে অনেক যুদ্ধবিগ্রহ সংঘটিত হয়েছে যার কারণে এই মাসটি অনেক মর্যাদা পূর্ণ।
পবিত্র কোরআনে সূরা আত তওবা, আয়াতঃ ৩৬ এ বর্ণিত হয়েছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান
ও গননাই মাসের সংখ্যা ১২ যেদিন থেকে তিনি সব আসমান ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তার
মধ্যে চারটি হলো সম্মানিত মাস। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং তোমরা এই
মাসগুলোর সম্মান বিনষ্ট করে নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না”।
সৃষ্টির শুরু থেকেই আল্লাহর নির্ধারিত বারটি মাসের মধ্যে চারটি মাস বিশেষ গুরুত্ব
ও তাৎপর্য বহন করে। এই চারটি মাস হল – জিলকদ, জিলহজ, মহরম এবং রজব মাস। (বুখারীঃ
৩৬ ৬২, মুসলিমঃ ১৬ ৮৯)।
হযরত মুসা আলাইহিস সালাম এই দিনে ফেরাউনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। এই দিনে
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) দৌহিত্র জান্নাতের যুবকদের সরদার
হযরত হুসাইন আঃ শাহাদত বরণ করেন। আর ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়
আশুরা কে কেন্দ্র করে অনেক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে তাই এই মাসের ফজিলত অনেক বেশি।
হিজরী ৬১ সনে আশুরার দিন অর্থাৎ ১০ই মহরম কারবালার ময়দানে হযরত হোসেন আলাইহিস
সালাম এর শহীদ এর মত এই দুঃখজনক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। এই মাসে আল্লাহর বড়
নেয়ামত রোজা পালন করা হয়ে থাকে রোজা সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে সেগুলো আলোচনা
করা হলো-
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন, “তোমরা রোজা রাখো ইহুদিদের মত নয়,
আশুরার আগে বা পরে আরো একদিন রোজা রাখো” (মুসনাদে আহমদ)। আর আমরা এই হাদিস দ্বারা
বুঝতে পারি যে, আশুরা অনুষ্ঠিত হয় মহরম মাসের ১০ তারিখে। আর এই ১০ তারিখের সাথে
মিলিয়ে হয়তো ৯-১০ তারিখ অথবা ১০-১১ তারিখ রোজা রাখতে হবে।
হযরত ইবনে আব্বাস রহমতুল্লাহি আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) যখন
হিজরত শেষে মক্কা থেকে মদিনায় আগমন করলেন দেখলেন মদিনার ইহুদীরা আশুরা দিবসে
রোজা পালন করছে। রাসুল (সাঃ) তাদের রোজা রাখার কারণ
জিজ্ঞাসা করলেন, তারা বলল এই দিনটি আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই দিনে
আল্লাহতালা হযরত মুসা (আঃ) এবং তার সম্প্রদায় বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের কবল থেকে
মুক্ত করেছেন এবং তার ওপর বিজয় দান করেছেন।
আর তারই শুকরিয়া হিসাবে এদিনে মুশা আলাই সালাম রোজা রেখেছিলেন তাই আমরা এই দিনে
রোজা রাখি তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বললেন, মুসা (আঃ) এর সঙ্গে
আমার সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি এবং আমি সবচেয়ে বেশি হকদার। তারপর তিনি নিজে রোজা
রাখলেন এবং সাহাবীদেরও রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন”। ( মুসলিম, ২৬৫৩)।
আরো পড়ুনঃ মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার রচনা ২০-৩০ পয়েন্ট সম্পর্কে জেনে নিন
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, “রমজানের রোজার পর সবচেয়ে
ফজিলত পূর্ণ রোজা হল মহরমের রোজা” ( তিরমিজি, ২৪৩৮)।
হযরত আবু কাতাদাহ রহমতুল্লাহি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “আশুরার
দিনের রোজার দ্বারা আমি আল্লাহর কাছে বিগত বছরের গুনাহ মাফের আশা রাখি”।(মুসলিম,
তিরমিজি)।
হযরত হাফসা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূল
(সাঃ) চারটি কাজ কখনো ছেড়ে দিতে না। তার মধ্যে একটি হলো আশুরার রোজা”।
(নাসায়ি শরীফ)।
রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে মহররম মাসের এই রোজা মুসলিম উম্মার ওপর ফরজ
ছিল পরবর্তী সময়ে রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার পরে এই রোজা নফল রোজায় পরিণত
হয়। হযরত জাবের রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন, রাসূল (সাঃ) আমাদের আশুরার রোজা
রাখার নির্দেশ দিতেন এবং এর প্রতি উৎসাহিত করতেন। এ বিষয়ে তিনি নিয়মিত আমাদের
খোঁজখবর নিতেন।
যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো তখন আশুরার রোজার ব্যাপারে তিনি আমাদের নির্দেশও
দিতেন না এবং নিষেধ ও করতেন না। আর এ বিষয়ে তিনি আমাদের খোঁজখবরও নিতেন না”।
(মুসলিম শরীফ, ১১২৮)।
রাসূল (সাঃ) বলেন, “রমজান মাসের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা আল্লাহর মাস মহরমের
আশুরার রোজা”। (সুনানে কুবরা, ৪২১০)।
আশুরা সম্পর্কে হাদিস
আশুরা মুসলিম উম্মার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। মহরম মাসের ১০ তারিখে আশুরা
পালন করা হয়ে থাকে। মহরম মাসের ১০ তারিখ অর্থাৎ আশুরার দিনকে কেন্দ্র করে অনেক
হাদিস রয়েছে নিম্নে সেগুলো পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হলো-
হযরত আবু হুরায়রা রহমাতুল্লাহ আলাইহি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “নবী করীম
(সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আশুরার দিনে আপন পরিবার পরিজনের মধ্যে পর্যাপ্ত
খানাপিনার ব্যবস্থা করবে আল্লাহ পাক পুরো বছর তার রিজিক কে বরকত দান করবেন”।
(তাবরানি, ৯৩০৩)।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন, “তোমরা রোজা রাখো ইহুদিদের মত নয়,
আশুরার আগে বা পরে আরো একদিন রোজা রাখো” (মুসনাদে আহমদ)। আর আমরা এই হাদিস দ্বারা
বুঝতে পারি যে, আশুরা অনুষ্ঠিত হয় মহরম মাসের ১০ তারিখে। আর এই ১০ তারিখের সাথে
মিলিয়ে হয়তো ৯-১০ তারিখ অথবা ১০-১১ তারিখ রোজা রাখতে হবে।
হযরত ইবনে আব্বাস রহমতুল্লাহি আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) যখন
হিজরত শেষে মক্কা থেকে মদিনায় আগমন করলেন দেখলেন মদিনার ইহুদীরা আশুরা দিবসে
রোজা পালন করছে। রাসুল (সাঃ) তাদের রোজা রাখার কারণ
জিজ্ঞাসা করলেন, তারা বলল এই দিনটি আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই দিনে
আল্লাহতালা হযরত মুসা (আঃ) এবং তার সম্প্রদায় বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের কবল থেকে
মুক্ত করেছেন এবং তার ওপর বিজয় দান করেছেন।
আর তারই শুকরিয়া হিসাবে এদিনে মুশা আলাই সালাম রোজা রেখেছিলেন তাই আমরা এই দিনে
রোজা রাখি তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বললেন, মুসা (আঃ) এর সঙ্গে
আমার সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি এবং আমি সবচেয়ে বেশি হকদার। তারপর তিনি নিজে রোজা
রাখলেন এবং সাহাবীদেরও রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন”। ( মুসলিম, ২৬৫৩)।
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, “রমজানের রোজার পর সবচেয়ে
ফজিলত পূর্ণ রোজা হল মহরমের রোজা” ( তিরমিজি, ২৪৩৮)।
হযরত আবু কাতাদাহ রহমতুল্লাহি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “আশুরার
দিনের রোজার দ্বারা আমি আল্লাহর কাছে বিগত বছরের গুনাহ মাফের আশা রাখি”।(মুসলিম,
তিরমিজি)।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের উৎসব রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
হযরত হাফসা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূল
(সাঃ) চারটি কাজ কখনো ছেড়ে দিতে না। তার মধ্যে একটি হলো আশুরার রোজা”।
(নাসায়ি শরীফ)।
রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে মহররম মাসের এই রোজা মুসলিম উম্মার ওপর ফরজ
ছিল পরবর্তী সময়ে রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার পরে এই রোজা নফল রোজায় পরিণত
হয়। হযরত জাবের রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন, রাসূল (সাঃ) আমাদের আশুরার রোজা
রাখার নির্দেশ দিতেন এবং এর প্রতি উৎসাহিত করতেন। এ বিষয়ে তিনি নিয়মিত আমাদের
খোঁজখবর নিতেন।
যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো তখন আশুরার রোজার ব্যাপারে তিনি আমাদের নির্দেশও
দিতেন না এবং নিষেধ ও করতেন না। আর এ বিষয়ে তিনি আমাদের খোঁজখবরও নিতেন না”।
(মুসলিম শরীফ, ১১২৮)।
রাসূল (সাঃ) বলেন, “রমজান মাসের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা আল্লাহর মাস মহরমের
আশুরার রোজা”। (সুনানে কুবরা, ৪২১০)।
আশুরার দিনের ঘটনা
আশুরা অর্থাৎ দশ ১০ মহরম মুসলিম উম্মার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনে অনেক
ঘটনা সংঘটিত হয়েছে যা হাদিস এবং কোরআন দ্বারা প্রমাণিত। হিজরী সনের প্রবর্তন
মহরম মাস কে আরো বেশি মহিমান্বিত এবং স্মরণীয় করেছে। এই দিনে কারবালার
হৃদয়বিদারক মর্মান্তিক ঘটনা ইতিহাসে মুসলিম উম্মাদের নব চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছে।
নিচে কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনার আলোচনা করা হলো-
- আশুরা অর্থাৎ দশ ১০ই মহরম এই দিনে আকাশ ও পৃথিবী এই দিনে সৃষ্টি হয়েছে।
-
মহররম মাসে হযরত আদম আঃ কে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এই দিনে তাকে পৃথিবীতে অবতরণ
করা হয়েছে এবং এই দিনেই তার গুনাহ মাফ হয়েছে। -
হযরত নূহ আঃএর নৌযানের শুরু হয়েছে এবং বন্যার অবস্থার ও সমাপ্তি হয়েছে এই
দিনে। - হযরত ইব্রাহিম আঃ নমরুদের অগ্নিকুণ্ডু থেকে ১০ ই মহরম মুক্তি পেয়েছেন।
- হযরত ইউনুস আঃ মাছের পেট থেকে এই দিনে মুক্ত হয়েছেন।
- হযরত দাউদ আঃ এর জালুদ বাহিনীর উপর বিজয় লাভ করেছেন এই মহরমের দিনে।
- হযরত আইয়ুব আঃ ১৮ বছর অসুস্থতার পর রোগ মুক্ত হয়েছেন এই দিনে।
- হযরত ঈসা আঃ কে আসমানে তুলে নেওয়া সহ বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী আশুরা।
- এই দিনে মুসা আঃ সিনাই পর্বতে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওরাত লাভ করেন।
- এই দিনে মুসা আঃ বনি ইসরাইলদের নিয়ে লোহিত সাগর অতিক্রম করেন।
- এই দিনেই ফেরাউন সাগরে ডুবে মারা যান।
-
এই দিনেই আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নাতি/ দৌহিত্র মুসলিম
উম্মার জন্য কারবালার ময়দানে শহীদ হন।
পবিত্র কোরআনুল কারীমের সূরা তওবার ৩৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে – আকাশ ও পৃথিবী
সৃষ্টির দিন থেকে আল্লাহর কাছে ১২ মাসের সংখ্যা নির্দিষ্ট রয়েছে। এই ১২ মাসের
মধ্যে চার ৪ টি মাস সম্মানিত। আর এই চারটি সম্মানিত মাস হল – জিলকদ, জিলহজ, মহরম
ও রজব। (তাফসীরে মাযহারী, সূরা তওবা, আয়াতঃ ৩৬)।
আশুরার রোজা কয়টি
আশুরার রোজা মূলত দুই ২ টি। আশুরার রোজা সম্পর্কে মহানবী হযরত
মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন, “তোমরা রোজা রাখো ইহুদিদের মত নয়, আশুরার আগে
বা পরে আরো একদিন রোজা রাখো” (মুসনাদে আহমদ)। আর আমরা এই হাদিস দ্বারা বুঝতে পারি
যে, আশুরা অনুষ্ঠিত হয় মহরম মাসের ১০ তারিখে। আর এই ১০ তারিখের সাথে মিলিয়ে
হয়তো ৯-১০ তারিখ অথবা ১০-১১ তারিখ রোজা রাখতে হবে।
হযরত ইবনে আব্বাস রহমতুল্লাহি আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) যখন
হিজরত শেষে মক্কা থেকে মদিনায় আগমন করলেন দেখলেন মদিনার ইহুদীরা আশুরা দিবসে
রোজা পালন করছে। রাসুল (সাঃ) তাদের রোজা রাখার কারণ
জিজ্ঞাসা করলেন, তারা বলল এই দিনটি আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই দিনে
আল্লাহতালা হযরত মুসা (আঃ) এবং তার সম্প্রদায় বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের কবল থেকে
মুক্ত করেছেন এবং তার ওপর বিজয় দান করেছেন।
আর তারই শুকরিয়া হিসাবে এদিনে মুশা আলাই সালাম রোজা রেখেছিলেন তাই আমরা এই দিনে
রোজা রাখি তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বললেন, মুসা (আঃ) এর সঙ্গে
আমার সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি এবং আমি সবচেয়ে বেশি হকদার। তারপর তিনি নিজে রোজা
রাখলেন এবং সাহাবীদেরও রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন”। ( মুসলিম, ২৬৫৩)।
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, “রমজানের রোজার পর সবচেয়ে
ফজিলত পূর্ণ রোজা হল মহরমের রোজা” ( তিরমিজি, ২৪৩৮)।
হযরত আবু কাতাদাহ রহমতুল্লাহি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “আশুরার
দিনের রোজার দ্বারা আমি আল্লাহর কাছে বিগত বছরের গুনাহ মাফের আশা রাখি”।(মুসলিম,
তিরমিজি)।
হযরত হাফসা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূল
(সাঃ) চারটি কাজ কখনো ছেড়ে দিতে না। তার মধ্যে একটি হলো আশুরার রোজা”।
(নাসায়ি শরীফ)।
আরো পড়ুনঃ রাজশাহী পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার – এর ডাক্তারেরগণের তালিকা
দেখুন
রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে মহররম মাসের এই রোজা মুসলিম উম্মার ওপর ফরজ
ছিল পরবর্তী সময়ে রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার পরে এই রোজা নফল রোজায় পরিণত
হয়। হযরত জাবের রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন, রাসূল (সাঃ) আমাদের আশুরার রোজা
রাখার নির্দেশ দিতেন এবং এর প্রতি উৎসাহিত করতেন। এ বিষয়ে তিনি নিয়মিত আমাদের
খোঁজখবর নিতেন।
যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো তখন আশুরার রোজার ব্যাপারে তিনি আমাদের নির্দেশও
দিতেন না এবং নিষেধ ও করতেন না। আর এ বিষয়ে তিনি আমাদের খোঁজখবরও নিতেন না”।
(মুসলিম শরীফ, ১১২৮)।
রাসূল (সাঃ) বলেন, “রমজান মাসের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা আল্লাহর মাস মহরমের
আশুরার রোজা”। (সুনানে কুবরা, ৪২১০)।
শেষ কথা
মহরম মাস হল অতি মহিমান্বিত মাস এই মাসে রোজা রাখা এবং ইবাদত বন্দগির মধ্যে
কাটিয়ে দেয়া উচিত কারণ পৃথিবীতে যত আশ্চর্যকর ঘটনা ঘটেছে সব এই ১০ই মহরম অর্থাৎ
আশুরাতে। প্রত্যেকটি মুসলমানের উচিত এই মাসে ইবাদত বন্দেগী করা এবং ইসলামের
স্বার্থে ধৈর্য ধারণ ও ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকা। তাই তো জাতীয় কবি কাজী নজরুল
ইসলাম বলেছেন – ফিরে এলো আজ সেই মহরম মাহিনা ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন
চাহিনা।
Leave a comment