প্যারীচাঁদ মিত্রের ‘আলালের ঘরের দুলাল’ উপন্যাসে ব্যবহৃত ভাষাকে ‘আলালী ভাষা’ এবং কালীপ্রসন্ন সিংহের ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’ গ্রন্থের ভাষা ‘হুতোমী’ ভাষা নামে অভিহিত করা হয়। বিদ্যাসাগরের পর বাংলা কথ্যরীতির
পথনির্দেশনায় এই দুই রীতি সমকালীন লেখকদের উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল।
প্যারীচাঁদের ‘আলালী’ ভাষায় প্রমাণিত হয় যে লোক প্রচলিত বাংলা ভাষাও ভাবপ্রকাশের দিক থেকে সংস্কৃত নির্ভর ভাষার চেয়ে কম শক্তিশালী নয়। প্যারীচাঁদ তাঁর রচনায় সাধু ও কথ্যরীতির মিশ্রণ ঘটালেও পরীক্ষানিরীক্ষার যুগে তাঁর অবদানকে উপেক্ষা করা যায় না। তাঁর সবচেয়ে বড়ো কৃতিত্ব তিনি রচনার বিষয়ভেদে বিদ্রূপাত্মক এবং লঘু কৌতুকরসের ব্যবহার করেছেন। এতে মুসলমানি ভাষার প্রয়োগ যেমন আছে তেমনি কলকাতার আশেপাশের অঞ্চলের সাধারণ মানুষের মুখের ভাষারও সার্থক ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলা সাহিত্যে চলিত ও কথ্যরীতির ভাষার একটা লঘুরূপ তিনিই প্রথম চালু করেন। এ ভাষার প্রভাবে পরবর্তী লেখকরা সংস্কৃতরীতি এবং কথ্যরীতি গদ্যের মধ্যে সামঞ্জস্য সাধন করে আদর্শ গদ্যভাষা নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছেন।
‘হুতোমী’ ভাষার অন্যতম বৈশিষ্ট্য এর অভিনবত্ব। একেবারে মুখের ভাষাকে ভেঙেচুরে প্রয়োজন অনুসারে ব্যবহার করেছেন। বাংলা ভাষায় নিরঙ্কুশ কথ্যবুলির সুষ্ঠু ব্যবহার এর আগে আর কারও লেখায় দেখা যায়নি। প্যারীচাঁদ মিত্রের ‘আলালী’ ভাষায় কথ্যরীতির ব্যবহার থাকলেও তিনি নিরঙ্কুশভাবে কথ্যরীতির ব্যবহার করেননি। তাঁর ভাষায় সাধু চলিতরীতির মিশ্রণ ঘটেছে। উভয় ভাষার তুলনামূলক আলোচনা করে বলা যায়, ‘আলালী’ ভাষা অনেক শালীন ও মার্জিত; কিন্তু সে তুলনায় ‘হুতোমী’ ভাষা অমার্জিত ও উচ্ছৃঙ্খল এবং অশ্লীলতা দোষে দুষ্ট। তাই ভবিষ্যতে বাংলা ভাষায় ‘আলালী’ ভাষার উত্তরাধিকারী পাওয়া গেলেও ‘হুতোমী’ ভাষা সাহিত্যে সেভাবে স্থান লাভ করতে পারেনি।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।
Leave a comment