আলাউদ্দিন খলজি (১২৯৬-১৩১৬ খ্রিঃ):
সুলতান জালালউদ্দিন খলজির জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা শিহাবউদ্দিনের পুত্র ছিলেন আলাউদ্দিন। তাঁর আসল নাম ছিল আলি গুরুশাস্প। গুরুশাস্প-এর অন্য তিন ভ্রাতার মধ্যে একমাত্র আলমাস বেগ (অন্য দুজনের নাম কুতলঘ তিঘিন এবং মহম্মদ)-এর নাম রাজনৈতিক ঘটনাবলির সাথে যুক্ত হয়েছে। ইনি আলাউদ্দিন কর্তৃক ‘উলুঘ খাঁ’ নামে সম্মানিত হন। সিংহাসনে আরোহণ করার পর গুরুশাস্প ‘আলাউদ্দিন মহম্মদ শাহ উস্ সুলতান’ উপাধি গ্রহণ করেন। আলাউদ্দিনের পারিবারিক জীবন খুব সুখের ছিল না। জালালউদ্দিনের কন্যাকে তিনি বিবাহ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর পত্নী কিংবা শ্বশুমাতার সাথে তাঁর আদৌ সুসম্পর্ক ছিল না। ব্যক্তিত্বের সংঘাত এঁদের ক্রমশ দূরে সরিয়ে দেয়, সংসারজীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা তাঁকে বেশি করে রাজনীতিমুখী করে তোলে।
শাসক ও বিজেতা হিসেবে আলাউদ্দিন খলজি কেবল শের শাহ ও মুঘল সম্রাট আকবরকে বাদ দিলে, ভারতের মুসলিম শাসকদের মধ্যে সর্বাগ্রগণ্য ছিলেন। দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্যকে ভারত সাম্রাজ্যে উন্নীত করার প্রথম রূপকার তিনিই। উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের মেলবন্ধনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে তিনি ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন। দক্ষিণ ভারতে ইসলামের আদর্শ প্রসার এবং কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব আলাউদ্দিনের প্রাপ্য। (“… the credit for the penetration of muslim arms and plantation of Islamic faith and culture in the South goes exclusively to him.” J. L. Mehta)। মোঙ্গল আক্রমণের বিরুদ্ধে জনমনে নিরাপত্তা ও আস্থার বাতাবরণ তৈরি করার ক্ষেত্রেও তাঁর সাফল্য ছিল অভূতপূর্ব। আলাউদ্দিন আক্ষরিক অর্থে শিক্ষিত ছিলেন না। কিন্তু রূঢ় বাস্তবের মুখোমুখি হয়ে তিনি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন, তা আলাউদ্দিনের বুদ্ধিবৃত্তি, লোকচরিত্র সম্পর্কে জ্ঞান ও বিচারবোধকে পুষ্ট করেছিল। ভিনসেন্ট স্মিথ আলাউদ্দিনকে ‘একজন বর্বর স্বৈরাচারী বলে সমালোচনা করেছেন। সিংহাসন দখলের জন্য এবং নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতাকে কণ্টকমুক্ত করার জন্য আলাউদ্দিন নিজের পিতৃব্য, আত্মীয়পরিজনসহ বহু মানুষকে হত্যা করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু মধ্যযুগীয় রীতি অনুযায়ী এই সকল কাজ অস্বাভাবিক বা অন্যায়মূলক ছিল না। ড. নিজামীর মতে, আলাউদ্দিনের কর্মজীবন পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় যে, তাঁর চরিত্রে ধৈর্য, সাবধানতা, দৃঢ়তা, কঠোরতা, পরিকল্পনা প্রবণতা এবং সংগঠন-প্রতিভার অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল।
সমকালীন লেখক আমির খসরুর মতে, আলাউদ্দিনের সিংহাসনলাভ ছিল ঈশ্বরনির্দিষ্ট একটি ঘটনা। তিনি লিখেছেন : ” When help from the unseen comes to the chosen man, his desires are realised beyond his expectation.” পরবর্তীকালে ইসামীও আলাউদ্দিনকে ৫ man of destiny’ বলে অভিহিত করেছেন। ড. নিজামীর মতে, এই সকল বক্তব্য ঘটনার অতি সরলীকরণ দোষে দুষ্ট। কারণ আলাউদ্দিন শ্রম উদ্যোগ ও বুদ্ধিমত্তার সাথে শক্তির সমন্বয় দ্বারা একটু একটু করে ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণ করেন। অবশ্য ঈশ্বরের শক্তির ওপর তাঁর গভীর আস্থা ছিল এবং তিনি তাঁর সব কাজকে ‘ঈশ্বরসৃষ্ট মানুষের সেবার উদ্দেশ্যে কৃত’ বলে প্রচার করতেন। তবে ঈশ্বরে বিশ্বাস করলেও তিনি উলেমা বা অন্যান্য ধর্মীয় গুরুদের আদৌ পাত্তা দিতেন না। ইসলামের প্রচলিত আচার-অনুষ্ঠানের ওপরেও তাঁর একান্ত আস্থা ছিল না। তিনি আপনমনে সর্বশক্তিমানের কাছে প্রার্থনা করতেন, কিন্তু শুক্রবারের বিশেষ প্রার্থনায় যোগদান বা উপবাসী থাকাকে ধর্মপালনের আবশ্যিক শর্ত বলে মনে করতেন না। একমাত্র সুফিসপ্ত নিজামউদ্দিন আউলিয়াকে তিনি আন্তরিকভাবে শ্রদ্ধা করতেন। তবে নিজামউদ্দিন যেহেতু জাগতিক প্রভুর সাথে সাক্ষাৎকার পছন্দ করতেন না, তাই আলাউদ্দিন কখনো তাঁর সাক্ষাৎপ্রার্থী হননি। আলাউদ্দিনের স্বাধীন ও গোঁড়ামিবর্জিত ধর্মভাবনা সম্পর্কে ড. নিজামী লিখেছেন : “His mind was thus fortunately, free from all a priori: prejudices and fanaticisms, and he brought to his task a freshness of outlook.”
আলাউদ্দিন খলজির সিংহাসনলাভ ও প্রাথমিক ব্যবস্থা :
জালালউদ্দিন খলজি সিংহাসনে বসার অব্যবহিত পরে কারা-মানিকপুরের শাসনকর্তা মালিক চাড্ডু বিদ্রোহী হলে, জালালউদ্দিন কারা-মানিকপুরের শাসকপদে আলাউদ্দিনকে নিয়োগ করেন (১২৯১ খ্রিঃ)। অতঃপর মালব আক্রমণ করে আলাউদ্দিন ‘ভিলসা’ লুণ্ঠন করেন এবং লুণ্ঠিত সম্পদ জালালউদ্দিনকে উপঢৌকন দিয়ে খুশি করেন। এর পুরস্কারস্বরূপ তিনি কারা-মানিকপুরের সাথে সাথে অযোধ্যার শাসকপদ লাভ করেন। ভিলসা আক্রমণকালে আলাউদ্দিন দক্ষিণ ভারতের সম্পদশালী দেবগিরি রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রার পরিকল্পনা করেন। প্রাথমিক প্রস্তুতির পর ১২৯৪ খ্রিস্টাব্দে আলাউদ্দিন গোপনে দেবগিরি আক্রমণ করে রাজা রামচন্দ্রদেবের কাছ থেকে বিশাল ধনসম্পদ যুদ্ধপণ হিসেবে সংগ্রহ করেন। বস্তুত, দেবগিরিতে অর্জিত বিশাল সম্পদ আলাউদ্দিনের পক্ষে দিল্লির সিংহাসন দখলের পথ প্রশস্ত করে দেয়। জনৈক ঐতিহাসিক লিখেছেন : “Delhi was really conquered at Devgiri for it was the gold of the Deccan that paved the way for Alauddin’s accession to the throne.” এ মন্তব্য বহুলাংশে সত্য। কারণ বাস্তব থেকে দেখা যায় যে, আলাউদ্দিন সিংহাসন দখলের অব্যবহিত পরে দিল্লির বিরোধী আমির ও মালিকদের বশীভূত করার জন্য তাদের ঢালাও অর্থসম্পদ বিলিয়েছেন। এবং এই অর্থ তিনি পেয়েছিলেন দেবগিরি আক্রমণের সূত্রে।
যাই হোক্, আলাউদ্দিনের গোপন দেবগিরি অভিযান জালালউদ্দিন কীভাবে গ্রহণ করবেন— এ সম্পর্কে আলাউদ্দিন নিশ্চিত ছিলেন না। পিতৃব্যের ভালোবাসার প্রতি তাঁর দৃঢ় আস্থা ছিল। কিন্তু আহম্মদ চাপ, আরকলি খাঁ প্রমুখের বিরূপ মন্ত্রণা সুলতাে মনে আলাউদ্দিনের প্রতি একটা বিরূপতার জন্ম দিতে পারে, –এরূপ একটা সন্দেহ আলাউদ্দিনের মনে এসেছিল। তাই এই মুহূর্তে তিনি দিল্লির মসনদ দখল করার পরিকল্পনা নেন এবং সেইমতো সাক্ষাৎকারের অজুহাতে নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধ সুলতান জালালউদ্দিনকে হত্যা করেন (২০শে জুলাই, ১২৯৬ খ্রিঃ)।
জালালউদ্দিনকে হত্যা করার পর আলাউদ্দিন নিজেকে ‘সুলতান’ বলে ঘোষণা করেন এবং কারা প্রদেশ থেকে দিল্লি দখলের পরিকল্পনা করেন। প্রথমে তিনি বিশ্বস্ত অভিজাতদের নানা উপাধিতে ভূষিত করেন। আলমাসবেগ ‘উলুঘ খাঁ’, ‘নুসরৎ খাঁ’, ‘মালিক ইউসুফ হিজাবরুদ্দিন’, ‘জাফর খাঁ’ এবং আলাউদ্দিনের শ্যালক সঞ্জর ‘আল্প খাঁ’ উপাধিতে ভূষিত হন। আলাউদ্দিনের উত্থান ও সাফল্যের মূলে এই চারজনের অবদান ছিল সর্বাধিক। এ ছাড়া তিনি কয়েকজন বিশ্বস্ত বন্ধুকে আমির-পদে উন্নীত করেন এবং ইতিপূর্বে যাঁরা আমির ছিলেন এমন কয়েকজন বিশ্বস্ত মিত্রকে ‘মালিক’ পদে উন্নীত করেন। অতঃপর আলাউদ্দিন দিল্লি অভিযানের জন্য বিশালসংখ্যক একটি বাহিনী গঠন করেন। লক্ষণীয় যে, তাঁর এই বাহিনী গুণগত দিক থেকে আদৌ উন্নত ছিল না। কারণ আলাউদ্দিন তখন বাহিনীর দক্ষতার পরিবর্তে সংখ্যার দিকটিতে গুরুত্ব দেন। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, বিশালসংখ্যক বাহিনী তাঁর অনুগামী হলে দিল্লির অভিজাত ও জনগণ তাঁর বিরুদ্ধাচারণ করার মানসিক বল হারিয়ে ফেলবে। যাই হোক্, বিশাল বাহিনীকে দুভাগে বিভক্ত করে আলাউদ্দিন দিল্লির দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। আলাউদ্দিন স্বয়ং ও নুসরৎ খাঁ বদাউন ও বরণ হয়ে অগ্রসর হন। জাফর খাঁর নেতৃত্বে অপর বাহিনী কইল (আলিগড়) -এর পথ ধরে অগ্রসর হয়। আলাউদ্দিন বরণপ্রদেশে উপস্থিত হলে বহু ‘জালালী’ মালিক, যেমন—তাজ-উল-মুলক্ কুচি, আমির আলি, ওসমান, আমির কালাম, ওমর সুরখা প্রমুখ দিল্লির আনুগত্য অস্বীকার করে আলাউদ্দিনের পক্ষে যোগ দেন।
এদিকে দিল্লির রাজনীতিও তখন অস্থির। জালালউদ্দিনের হত্যাসংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পত্নী মালিকা জাহান কনিষ্ঠপুত্র কাদর খাঁকে ‘রুকন্উদ্দিন ইব্রাহিম’ উপাধি দিয়ে দিল্লির সুলতান বলে ঘোষণা করে দেন। লিখোরী প্রাসাদ থেকে সরে এসে দিল্লির মধ্যে ‘কসর-ই-সবজ’ (সাদা প্রাসাদ) নামক প্রাসাদ থেকে রুকনউদ্দিন রাজকার্য পরিচালনা করতে শুরু করেন। তখন জালালউদ্দিনের দ্বিতীয় পুত্র আরকলি খাঁ ছিলেন মুলতানের শাসক। দিল্লির সংবাদে তিনি মর্মাহত হন এবং দিল্লির রাজনীতি থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। এই সময় আলাউদ্দিনের সাথে বরণপ্রদেশে জালালী মালিকদের যোগদানের সংবাদ মালিকাজাহানকে যেমন শঙ্কিত করে, তেমনি দিল্লির রাজনীতি সম্পর্কে আরকলি খাঁর ক্ষোভ ও উদাসীনতা আলাউদ্দিনকে আশান্বিত করে। কারণ একমাত্র আরকলি খাঁর সামরিক দক্ষতা সম্পর্কে আলাউদ্দিনের কিছুটা চিন্তা ছিল। এই সময় মালিকা জাহান আন্তরিকতার সাথেই আরকলিকে দিল্লিতে এসে সুলতানি গ্রহণের আহ্বান জানান। কিন্তু আরকলি তা প্রত্যাখ্যান করেন। আরকলি দিল্লিতে এলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারত। বিশেষ করে নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আরকলি কেন এত উদাসীন রইলেন, তা সত্যই আশ্চর্যের।
অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে আলাউদ্দিন যমুনা নদী অতিক্রম করে শিরিতে উপস্থিত হন। রুকনউদ্দিন তাঁকে বাধা দিতে অগ্রসর হন, কিন্তু বিধ্বস্ত হন। অতঃপর গভীর রাতে মালিকা জাহান, আহম্মদ চাপ, উলুঘ প্রমুখকে নিয়ে গোপনে মুলতানে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। আলাউদ্দিন বিজয়গর্বে দিল্লিতে প্রবেশ করেন এবং বলবনের লালপ্রাসাদে (কসর-ই-লাল) অভিষেকক্রিয়া সম্পন্ন করেন (২১ অক্টোবর, ১২৯৬ খ্রিঃ)। ইতিমধ্যে প্রায় সকল রাজকর্মচারী আলাউদ্দিনের প্রতি আনুগত্য জ্ঞাপন করেছিলেন। বিচক্ষণ আলাউদ্দিন এই মুহূর্তে কাউকে ক্ষুণ্ন না করে জালালউদ্দিন বা তাঁর পূর্বেকার মামেলুক অভিজাত এবং নিজ সমর্থকদের নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করেন। ঐতিহাসিক ‘জিয়াউদ্দিন বারাণী’ এই সময় কারা ও অযোধ্যার শাসক নিযুক্ত হয়েছিলেন। আলাউদ্দিনের রাজসভায় সংগঠন প্রসঙ্গে বারাণী লিখেছেন : “The court of Alauddin was adorned by the Jalali and Alai Khans and Maliks in a way that no previous reign had witnessed.” অবশ্য সুলতানের এই ব্যবস্থা ছিল সাময়িক এবং কূটনীতির অঙ্গবিশেষ। পরের বছরেই তিনি বিশ্বাসঘাতক জালালী মালিকদের ক্ষমতাচ্যুত ও বন্দি করে প্রমাণ করেন যে, আলাউদ্দিনের কাছে অকৃতজ্ঞের কোনো স্থান নেই।
সমকালীন ভারতের রাজনৈতিক চিত্র :
আলাউদ্দিন সিংহাসনারোহণের সময় অবশিষ্ট ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিচারে দিল্লি সুলতানির অবস্থান খুব উজ্জ্বল ছিল না। বিগত নব্বই বছরের তুর্কিশাসন দিল্লির সুলতানদের ক্ষমতা সংহত করলেও ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ কিংবা প্রশাসনিক পরিকাঠামো গঠনের কাজ তখনও সম্পূর্ণতা পায়নি। পশ্চিমে রাভী, উত্তরে লাহোর, উত্তর-পশ্চিমে সামানা ও দীপালপুরকে কেন্দ্র করেই দাঁড়িয়েছিল সুলতানি সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব। পূর্বে বাংলা, বিহার ছিল একপ্রকার স্বাধীন। পাঞ্জাব এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত দেশ খোক্কর উপজাতির উপদ্রব এবং মোঙ্গলদের বারবার আক্রমণে ছিল জর্জরিত। মুলতানে তখন ছিলেন আলাউদ্দিনের শত্রু আরকলি খাঁ। মালিকা জাহান, নুরউদ্দিন, আহম্মদ চাপ প্রমুখ বিরোধীরা সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার ফলে আলাউদ্দিনের দুশ্চিন্তার কারণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। চিতোর ও রণথত্তোরকে কেন্দ্র করে মুসলমান-বিরোধী রাজপুতশক্তি তখন যথেষ্ট শক্তি সংগ্রহ করে সুযোগের জন্য অপেক্ষা করছিল। বাঘেলাবংশের নেতৃত্বে গুজরাট তখন যথেষ্ট ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারী হয়েছিল। সুদূর দক্ষিণে চোল, চের, পাণ্ড্য, কাকতীয়, হোয়সল প্রভৃতি রাজ্য ও রাজবংশ নিজেদের মধ্যে নিরন্তর দ্বন্দ্বে লিপ্ত থেকে সেখানকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে সর্বদা বিশৃঙ্খল করে রেখেছিল। এইসব রাজনৈতিক সমস্যা ছাড়াও আলাউদ্দিনের সামনে ছিল উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও অকৃতজ্ঞ আত্মীয়পরিজন কিংবা আমির মালিকদের ধ্বংসাত্মক ষড়যন্ত্রের সমস্যা। অবশ্য সামরিক শক্তি, বিচক্ষণতা ও রাষ্ট্রপ্রজ্ঞার সুষম প্রয়োগ দ্বারা আলাউদ্দিন অভূতপূর্ব সাফল্যের সাথে এই বহুমুখী সমস্যার মোকাবিলা করেন।
মুলতান:
আলাউদ্দিন প্রথমেই মুলতানকে শত্রুমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। জালালউদ্দিনের পুত্রদ্বয় তথা দিল্লি-সুলতানির দাবিদার আরকলি খাঁ, রুকনউদ্দিন (কদর খাঁ) এবং জালালউদ্দিনের সমর্থক আহম্মদ চাপ প্রমুখকে বন্দি করার জন্য আলাউদ্দিন তাঁর দুই বিশ্বস্ত অনুচর উলুঘ খাঁ ও নুসরৎ খাঁকে সসৈন্যে মুলতানে পাঠান। অল্প আয়াসেই এঁদের বন্দি করা সম্ভব হয়। সুলতানের নির্দেশে আরকলি, কদর, আহম্মদ চাপ, উলুঘ প্রমুখকে অন্ধ করা হয়। আরকলির পুত্রদের হত্যা করা হয় এবং আরকলি ও কদর খাঁকে কিছুকাল বন্দি রাখার পর হত্যা করা হয়। অবশ্য মালিকা জাহান এবং আহম্মদ চাপ গৃহবন্দি অবস্থায় নুসরৎ খাঁর তত্ত্বাবধানে বাকি জীবন অতিবাহিত করার অধিকার পান।
Leave a comment