প্রশ্নঃ আরজি কি? আরজিতে কি কি বিষয় থাকবে? টাকার মোকদ্দমা রুজুর জন্য একটি আরজি প্রস্তুত কর।
উত্তরঃ বাদী কর্তৃক বিবাদীর বিরুদ্ধে আনীত নালিশকে আরজি বলে। কারো আইনগত অধিকার লংঘিত হলে তার বিবরণসহ প্রতিকার প্রার্থনা করে উপযুক্ত আদালতে যে আবেদন পত্র পেশ করা হয় তা’ই হচ্ছে আরজি। আরজি পেশের মাধ্যমে মামলার শুরু হয়।
আরজির বিষয় বস্তুঃ আদেশ ৭ বিধি ১ অনুযায়ী নিম্নলিখিত বিষয়গুলি আরজিতে উল্লেখ করতে হবে-
ক. যে আদালতে মামলা দায়ের করা হচ্ছে তার নাম;
খ. বাদীর নাম, পরিচয় ও বাসস্থান;
গ. বিবাদীর নাম, পরিচয় ও বাসস্থান [যতদুর জানা যায়];
ঘ. বাদী বা বিবাদী নাবালক অথবা মানসিক দিক দিয়ে অসুস্থ চিত্তের হলে, সে মর্মে একটি বিবৃতি;
ঙ. যে সকল কারণের জন্য নালিশের কারণের উদ্ভব ঘটেছে এবং যে সময় তা ঘটেছে তার বিবরণ;
চ. আদালতের এ নালিশ বিচার করার এখতিয়ার রয়েছে এ মর্মে একটি বিবৃতি;
ছ. মামলায় বাদীর প্রার্থিত প্রতিকার;
জ. দাবীর কোন অংশ বর্জন করা হলে সে মর্মে বিবৃতি;
ঝ. স্যুট ভ্যালুয়েশন এ্যাক্ট অনুযায়ী মামলার মূল্য এবং কোর্ট ফি এ্যাক্ট অনুযায়ী দাবীর মূল্য সম্পর্কে বিবৃতি।
ঞ. যে ক্ষেত্রে মামলাটি প্রতিনিধিত্বমূলক এবং বাদী অন্যান্যদের প্রতিনিধি হিসেবে মামলা করে সেক্ষেত্রে আরজিতে মামলার বিষয়বস্তুতে তার স্বার্থ এবং এ বিষয়ে সে যে অন্যান্য আবশ্যকীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তা উল্লেখ করতে হবে।
ট. তামাদি আইনে উল্লিখিত সমযের মধ্যে মামলা রুজু করা হয়েছে অর্থাৎ মেয়াদোত্তীর্ণ হবার কারণে তামাদি আইনে বারিত হয় নি আরজিতে তা উল্লেখ করতে হবে।
ঠ. ১৯৮৩ সালের সংশোধিত আদেশ ৭ বিধি ১৪ তে বলা হয়েছে যে, দাবীর পোষকতায় বাদীর হেফাজতে থাকা দলিলাদি আরজির সহিত দাখিল করতে হবে, এরূপ দলিলাদি বাদীর হেফাজতে না থাকলে তার একটা বিবরণ আরজির সাথে দাখিল করতে হবে।
টাকা আদায়ের জন্য আরজির মুসাবিদাঃ
মাননীয় সাব-জজ আদালত রাজশাহী
মানি স্যুট নং ————————— সাল —————————
ক ও খ (পরিচয় ঠিকানা)————————— বাদী
গ ও ঘ ( পরিচয় ও ঠিকানা————————— বিবাদী
বিষয়ঃ ২০,০০০০/- টাকার আসল ও সুদসহ বিবাদীর নিকট হতে টাকা আদায়ের জন্য মামলা।
উপরিউক্ত বাদী ক ও খ সবিনয় নিবেদনঃ
(১) বিগত ১৯৯২ সালের ১৫ই জানুয়ারী তারিখে বিবাদী বাদীর নিকট একটি প্রতিজ্ঞাপত্রের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা প্রচলিত হারে সুদসহ কর্জ করে এবং এক বছরের মধ্যে তা পরিশোধ করার অঙ্গীকার করে।
(২) উক্ত বিবাদী গ ও ঘ ঋণপত্রে লিখিত সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাবার পরেও বাদীর টাকা পরিশোধ করতে ব্যৰ্থ হয় ৷
(৩) বাদী কর্তৃক বিবাদীর বিরুদ্ধে টাকা আদায়ের মামলা তামাদি আইন অনুযায়ী মেয়াদ উত্তীর্ণ হবার পূর্বেই মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
(৪) মোকদ্দমাটির বিচার করার এখতিয়ার এই আদালতের ক্ষমতাসম্পন্ন এখতিয়ার রয়েছে।
(৫) যেহেতু মামলাটি এই আদালতের এখতিয়ার ভূক্ত এবং এর জন্য উপযুক্ত স্ট্যাম্প দেয়া হয়েছে, সেহেতু বাদী নিম্নলিখিত প্রতিকারগুলি পেতে ইচ্ছুক।
বাদীর দাবীসমূহঃ (ক) বিবাদীর বিরুদ্ধে উপরি-উক্ত টাকা আদায়ের জন্য ডিক্রী প্রদান। (খ) আমল টাকা এবং এর উপরে শতকরা ৬ টাকা হারে সুদের ডিক্রী প্রদান (গ) এই মামলার ক্ষেত্রে যাবতীয় খরচ।
ভেরিভিকেশনঃ আমরা ক ও খ এতদ্বারা সত্যান্যাল করছি যে, এই মামলায় উপরি-উক্ত তথ্যগুলি আমার জানামতে সত্য এবং প্রত্যেকটি অনুচ্ছেদে বর্ণিত বিষয় প্রাপ্ত তথ্যাদি দৃষ্টে সত্য বলে আমি বিশ্বাস ধরি।
আমি ২৫ শে জানুয়ারী ১৯৯৫ রাজশাহীতে এই সত্যাখ্যান স্বাক্ষরযুক্ত করলাম।
স্বাক্ষর-চ (স্বাক্ষর)- ক, খ
(এ্যাডভোকেট) (বাদী)
Leave a comment