আরজি ও প্লিডিংসের মধ্যে পার্থক্যঃ আরজি ও প্লিডিংসের মধ্যে নিম্নোক্ত পার্থক্যগুলি বিদ্যমান-

১। সংজ্ঞাগত পরিচয়ঃ বাদী কর্তৃক বিবাদীর বিরুদ্ধে আনীত নালিশকে আরজি বলে। কারো আইনগত অধিকার লংঘিত হলে তার বিবরণসহ প্রতিকার প্রার্থনা করে উপযুক্ত আদালতে যে আবেদনপত্র পেশ করা হয় তা’ই হচ্ছে আরজি। আরজি পেশের মাধ্যমে মামলার শুরু হয়।

প্লিডিংস হচ্ছে বাদীর আরজি এবং বিবাদীর লিখিত বিবৃতি। দেওয়ানী কার্যবিধির ৬ নম্বর আদেশের ১ নম্বর বিধিতে প্লিডিংস সম্পর্কে বিধান রয়েছে। কাজেই প্লিডিংস হচ্ছে মামলার বিষয়ীভূত বক্তব্য। বাদীর আরজিকে অনেক সময় বাদীর প্লিডিং এবং বিবাদীর জবাবকে বিবাদীর প্লিডিং বলে। প্লিডিং এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে নির্দিষ্ট বিচার্য বিষয় চিহ্নিত করা।

২। আরজির বিষয়বস্তুঃ আদেশ ৭ বিধি ১ অনুযায়ী নিম্নলিখিত বিষয়গুলি আরজিতে উল্লেখ করতে হবে-

ক. যে আদালতে মামলা দায়ের করা হচ্ছে তার নাম; 

খ. বাদীর নাম, পরিচয় ও বাসস্থান;

গ. বিবাদীর নাম, পরিচয় ও বাসস্থান [যতদুর জানা যায়]; 

ঘ. বাদী বা বিবাদী নাবালক অথবা মানসিক দিক দিয়ে অসুস্থ চিত্তের হলে, সে মর্মে একটি বিবৃতি;

ঙ. যে সকল কারণের জন্য নালিশের কারণের উদ্ভব ঘটেছে এবং যে সময় তা ঘটেছে তার বিবরণ;

চ. আদালতের এ নালিশ বিচার করার এখতিয়ার রয়েছে এ মর্মে একটি বিবৃতি;

ছ. মামলায় বাদীর প্রার্থিত প্রতিকার;

জ. দাবীর কোন অংশ বর্জন করা হলে সে মর্মে বিবৃতি; ঝ. স্যুট ভ্যালুয়েশন এ্যাক্ট অনুযায়ী মামলার মূল্য এবং কোর্ট ফি এ্যাক্ট অনুযায়ী দাবীর মূল্য সম্পর্কে বিবৃতি;

ঞ. যে ক্ষেত্রে মামলাটি প্রতিনিধিত্বমূলক এবং বাদী অন্যান্যদের প্রতিনিধি হিসেবে মামলা করে সেক্ষেত্রে আরজিতে মামলার বিষয়বস্তুতে তার স্বার্থ এবং এ বিষয়ে সে যে অন্যান্য আবশ্যকীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তা উল্লেখ করতে হবে।

ট. তামাদি আইনে উল্লিখিত সময়ের মধ্যে মামলা রুজু করা হয়েছে অর্থাৎ মেয়াদোত্তীর্ণ হবার কারণে তামাদি আইনে বারিত হয় নি আরজিতে তা উল্লেখ করতে হবে।

ঠ. ১৯৮৩ সালের সংশোধিত আদেশ’ ৭ বিধি ১৪ তে বলা হয়েছে যে, দাবীর পোষকতায় বাদীর হেফাজতে থাকা দলিলাদি আরজির সহিত দাখিল করতে হবে, এরূপ দলিলাদি বাদীর হেফাজতে না থাকলে তার একটা বিবরণ আরজির সাথে দাখিল করতে হবে।

প্লিডিংসের বিষয়বস্তুঃ বিভিন্ন আদালতের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নিম্নলিখিত বিধিগুলি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে-

১. প্লিডিং য়ে শুধু তথ্যের বিবরণ থাকবে, আইনের বিবরণ নয়।

২. যে সকল তথ্যের উপর পক্ষগণ নির্ভর করছে শুধু সে সকল তথ্যই এতে বর্ণনা করতে হবে।

৩. প্লিডিং য়ে উল্লেখ করা না হলে সে ব্যপারে পক্ষগণকে সাক্ষ্য দিতে দেয়া হবে না।

৪. একটা আইনগত অধিকার বা কর্তব্য কার্যকরী করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য প্লিডিংয়ে উল্লেখ করতে হবে।

৫. আইনগত ওজর আপত্তি যেমন নিবৃত্তির নীতি, তামাদি, রেস জুডিকাটা, ইত্যাদির বিষয় প্লিডিংয়ে উত্থাপন কর যাবে।

৬. যেখানে কোন পক্ষ ভুল বিবরণ, জালিয়াতি, বিশ্বাসভঙ্গ, অবৈধ প্রভাব, ইত্যাদির উপর নির্ভর করছে সেখানে তার বিশদ বিবরণ পিডিংয়ে থাকতে হবে, এ ব্যাপারে শুধু মাত্র অভিযোগ উত্থাপন করলেই চলবে না | [27 DLR (AD) 78]

৩। আরজি কেবলমাত্র বাদীর বক্তব্য, কিন্তু প্লিডিংস হচ্ছে বাদী ও বিবাদীর বক্তব্যের সমষ্টি। তাই বলা যায় যে, আরজি হচ্ছে প্লিডিংসের অংশ মাত্র।

৪। আরজি পেশের পর মামলা শুরু হয়, কিন্তু পিডিংস সমাপ্ত হবার পর বিচার কার্য শুরু হয়।